ইউরোপ
বিবাহবিচ্ছেদের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কতটা দায় আছে!
বিশ্ব এখন এক অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মুখোমুখি। প্রযুক্তি, নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক রূপান্তরের ফলে মানুষের জীবনযাত্রা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সামাজিক প্রতিষ্ঠান- পরিবার ও বিবাহের ওপর। একদিকে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে, বিবাহ বন্ধনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার মতো সমাজে পারিবারিক বন্ধনের কাঠামো এখনো টিকে আছে, তবে দ্রুত ভেঙেও পড়ছে।
প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করুন
পলিটিক্স গ্রন্থে রাজনীতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে অ্যারিস্টটল বলেছেন, রাজনীতি হচ্ছে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিভিন্ন পক্ষের সন্ত্রাসবিহীন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান। বহু দ্বন্দ্ব-বিরোধ, রক্তপাত, সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে মানুষের এই সভ্যতা একটি সুষ্ঠু-সুন্দর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। অনেক তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়েই প্রাচীন গ্রিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে আধুনিক ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচনা হয়েছে। পৃথিবীতে এখন যতগুলো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আছে তার মধ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই সবচেয়ে বেশি কাম্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে আসলে আর কিছুই থাকে না।
নতুন বিশ্বব্যবস্থায় চীন-ভারত সম্পর্ক
সবাই জানে, একটি নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার তৈরি হয়েছে। এই নতুন ব্যবস্থায় কোন দেশের অবস্থান কী, কোন দেশ কোন দেশের সঙ্গে নতুনভাবে বন্ধুত্ব গড়ে তুলছে, কোন দেশ কোন দেশকে সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমর্থন দিচ্ছে তা নতুন করে রি-শেফ হচ্ছে। যেমন ধরা যাক ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে দীর্ঘকালীন বন্ধন, তাতে বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর একটি ফাটল ধরেছে। সম্পর্কটা এখন যতটা আন্তরিক, তারচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক এবং উইন-উইন। তাদের কমন ইন্টারেস্ট হলো সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং পশ্চিমা প্রভাবকে ধরে রাখা। এর বাইরে এতকাল যে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের প্রতি অন্ধ সমর্থন দিয়েছে এবং ইউরোপকে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে তা থেকে ট্রাম্প প্রশাসন সরে এসেছে। সেটা ইউরোপকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে এবং ইউরোপ এখন নিজেদের সামরিক শক্তি দ্রুত বৃদ্ধিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ পূর্বের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকতে চাচ্ছে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি অচিরেই ইউরোপ একটি সামরিকশক্তি হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলার বারুদে ইউরোপে লড়াই
পূবের সূর্য যখন অস্ত যায়, পশ্চিমের আকাশ তখন রেঙে ওঠে ভোরের আলোয়। আজ পশ্চিমা অস্ত্রে মধ্যপ্রাচ্য কাঁপছে, ওয়াঘার দুপ্রান্তে বিদেশি বিমান কিংবা ড্রোনের আঘাতে জ্বলছে সাবেক ভারতের দুটি অংশ। অথচ সেকালের ভারত কিংবা মধ্যযুগের বাংলার অস্ত্রে কেঁপে উঠেছিল ইউরোপের মাটি।
প্রবাসী বাঙালির চোখে নতুন বাংলাদেশ
আমি একজন গ্রামের ছেলে। কাদামাটির পথ পেরিয়ে, ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, হারিকেনের আলোয় বই পড়ে বড় হয়েছি। গ্রামের স্কুলে কয়েক বছর, তারপর মহকুমা (বর্তমানে জেলা) শহরের এক স্কুলে, এরপর ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (DRMC)- এভাবেই আমার শিক্ষার পথচলা। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করে পাড়ি জমাই সুদূর সুইডেনে। তখনো বুঝিনি, জীবনের সবচেয়ে সহজ প্রশ্নগুলো কাউকে কতটা অস্বস্তিতে ফেলতে পারে, আর সত্য কথা বলাও কখন যেন দোষের হয়ে দাঁড়ায়। বাংলা ভাষা আমি শিখেছি গ্রামে- মায়ের মুখে, মাটির গন্ধে। উচ্চারণ হয়তো শহুরে নয়, কিন্তু হৃদয়ভরা। অনেকের কাছে এই ভাষা ‘ভাঙা’ বলে মনে হতে পারে; কিন্তু এই ভাঙা ভাষাতেই আমি লিখে যাচ্ছি বিগত ১০ বছর ধরে। আমি জানি, শব্দে শুধু ব্যাকরণ নয়, হৃদয়ের সত্তাও লাগে। আমার ভাষা কাগজের জন্য নয়, জীবনের জন্য।
অমরত্ব, শোরা ও বাংলার প্রথম যুদ্ধাস্ত্র
উজবেকিস্তানের ফারগানার শাসক ছিলেন তার বাবা। ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে হটিয়ে মসনদের দখল নেয়। রাজা মারা পড়েন। ছেলে আশ্রয় নেন গহিন অরণ্যেঘেরা দুর্গম পাহাড়ে। সেখান থেকেই ঝটিকা আক্রমণে ছোট ছোট কাফেলা জয় করে সৈন্য ও সম্পদ জোগাড় করেন। একের পর সফল আক্রমণ তাকে আরও শক্তিশালী করে। পরে পুনরুদ্ধার করেন ফারগানাও। আরও শক্তিশালী হন, আরও দক্ষিণে এগিয়ে আসেন। এক সময় পুরো আফগানিস্তানও জয় করেন। তখন পাখির চোখে দেখেন ভারতবর্ষকে। স্বপ্ন আরও বড় হয়। সৈন্য-সামন্তের বিশাল বহর নিয়ে চলে আসেন সিন্ধু নদের কিনারায়। ভারতবর্ষের মসনদে তখন ইব্রাহিম লোদী। ডাকসাইটে সম্রাট। তাকে পরাস্ত করতে তাই বিশেষ কিছুর দরকার ছিল। সেই বিশেষ কিছু যুবকটি পেয়েছেন তুর্কিদের কাছ থেকে। বিশাল এক লোহার পাইপ। দুপাশে দুটি চাকা।
আধা খাওয়া আপেল, বিশ্বযুদ্ধ ও অ্যালান টুরিং
‘যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যা তারায় আমার খবর পুছবে...’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কবিতার মতো যুক্তরাজ্যের সরকার যেদিন তার ভুল স্বীকার করে, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এর সাড়ে পাঁচ দশক আগে নিজের জীবনের ইতি টেনেছেন আধুনিক কম্পিউটারের তাত্ত্বিক প্রবক্তা অ্যালান টুরিং। সালটা ২০০৯। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বলেন, ১৯৫০-এর দশকে ভুল করেছিল যুক্তরাজ্য সরকার। ভুল ছিল যুক্তরাজ্যের বিচার ও আইন ব্যবস্থায়। তাই আমাদের ইতিহাসের অন্যতম প্রতিভাধর মানুষটাকে ভুল বিচারে ভুল দণ্ড দেওয়া হয়। এ জন্য যুক্তরাজ্য সরকার লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ঝুঁকিতে বিশ্ব অর্থনীতি
সৃষ্টির সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাস আদম সন্তানের রক্তে রঞ্জিত। নিজেদের মহত্ব প্রকাশের দরুন বলি হয়েছে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ। ক্ষমতার অতি উচ্চ আকাঙ্ক্ষা বা অপরের ওপর নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে যুগে যুগে মরিয়া হয়ে ছিল শাসক শ্রেণি। যার ফল লাখ লাখ নিরীহ মানুষের রক্তে জমিন রঙিন হওয়া। যুদ্ধের সূচনা শাসক শ্রেণির হাতে হলেও প্রাণনাশ ঘটে অতি সাধারণ মানুষের। বর্তমান বিশ্বের ইতিহাসও এই ধারাবাহিকতার বাইরে নয়। এরই মধ্যে বিশ্ববাসী দুটো মহাযুদ্ধের ধ্বংসলীলার সাক্ষী হয়েছে।
বাংলাদেশে সৃষ্টির পরিমণ্ডলে স্বাধীন চিন্তাশীলতার কোনো স্থান রাখা হচ্ছে না
বাংলাদেশের চিন্তাজগৎ ও শিল্প-সাহিত্য নিয়ে ভাবতে গেলে এমন অনেক কথা মনে জাগে যেগুলো লিখে প্রকাশ করতে ইচ্ছা হয়; কিন্তু পারি না। চারপাশের দৃশ্যাবলির দিকে তাকিয়ে এ বিষয়ে লেখা খুব কঠিন মনে হয়। কেমন যেন ভীষণ উন্মাদনার মধ্য দিয়ে চলছেন খুব সক্রিয় লোকেরা, বাকি প্রায় সকলে উদাসীন। ব্যতিক্রমী কোনো কিছুর দিকে কেউ তাকাতেই চান না। এই পরিমণ্ডল কি সৃষ্টির অনুকূল? বাংলাদেশে চিন্তার ও সাহিত্যের জগতে এখন সর্বাঙ্গীন সৃষ্টি কোথায়?
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন ফাটলে রূপ নিচ্ছে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দান থেকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের শুরু। আত্মপ্রকাশ ঘটে ভূরাজনৈতিক ব্লকের। যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক ব্লক সোভিয়েত ইউনিয়নের বাড়-বাড়ন্তে উদ্বেগ বাড়তে থাকে ওই ব্লকের। বাড়তে থাকে উত্তেজনা। শুরু হয় একে অপরের মধ্যকার বহুমাত্রিক প্রতিযোগিতা। উভয় ব্লকেরই দাবি ছিল, বিপরীত ব্লক তাদের ভেতরকার ঐক্য ধ্বংস করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদল যেমন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে অবস্থান নিতে পারত না, তেমনি সোভিয়েত ট্যাঙ্কগুলোও প্রুশিয়ান ময়দানে প্রবেশ করতে পারত না যুক্তরাষ্ট্রের কারণে। তখন ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করার এই প্রক্রিয়াকে তখন ‘ডিকাপলিং’ বলা হতো। উভয় ব্লকের কয়েক দশকের দ্বন্দ্ব যা করতে পারেনি, তা এখন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই করতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।