গণতন্ত্র
নরওয়ের রাজনীতি বনাম বাংলাদেশের বাস্তবতা
নরওয়ে সদ্য একটি জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক মানদণ্ডে উদাহরণস্বরূপ। ফলাফল ঘোষণার পর সেখানে এক চমৎকার রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকাশ ঘটে। বিজয়ী দল নির্বাচনি সাফল্যের আনন্দে উচ্ছ্বসিত হলেও তারা দায়িত্বশীল আচরণ করেছে- প্রতিপক্ষকে অপমান না করে বরং ভবিষ্যতের কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ডাকসু নির্বাচন: গণতন্ত্রের পথে আশা, বাধা ও সম্ভাবনা
গণতন্ত্রের অনুশীলনকে যদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হয়, তবে তার সূচনা হওয়া উচিত শিক্ষাঙ্গন থেকে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয়, সেখানে ছাত্রসংগঠনের স্বাধীন নির্বাচন গণতান্ত্রিক চর্চার প্রথম পরীক্ষাগার। এবারের ডাকসু নির্বাচন অনেকেই মনে করেছিলেন একটি নতুন সূচনা হতে পারবে; কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এখানেও বাধা এসেছে।
গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার কেন চাঁদাবাজে রূপান্তর হচ্ছে
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের গল্প আজকাল পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের ঘোষণায় কিংবা নেতার মুখে মুখে শোনা যায়- ‘দেশ বদলে গেছে’, ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান’, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়েছে’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তব’। কথাগুলো শুনতে যেমন চমকপ্রদ, বাস্তবে তেমনই একটা নির্মম প্রশ্নও উঁকি দেয়- এই উন্নয়নের সুবিধাভোগী কারা? এবং উন্নয়ন বলতে আমরা কি কেবল ভবন, সেতু, কিংবা জিডিপি বুঝি, নাকি মানুষ ও মনুষ্যত্বেরও কোনো মানদণ্ড আছে?
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করুন
পরের জায়গা দখল করে দলীয় রাজনৈতিক কার্যালয় খোলার উদাহরণ বাংলাদেশে বহু পুরনো। এ নিয়ে অনেক হত্যা, খুন, মারামারিও হয়েছে। সম্প্রতি এরকম আরেক নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষি হলো দেশবাসী। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের এক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কার্যালয় বসানো হয় একজনের ব্যক্তিগত দোকানের ভেতরে। দোকানটির প্রকৃত মালিক বহুবার অনুরোধ করেও ওই কার্যালয় সরাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি দোকানের ন্যায্য ভাড়া দাবি করলে, তাকে বেধড়ক মারধর করে হত্যা করা হয়।
চাঁদাবাজি: এক উত্তরাধুনিক বিপ্লবী সংস্কৃতি
‘চাঁদাবাজি’- শব্দটি শুনলেই মনে এক মিশ্র অনুভূতি জাগে। যেন এটি বাংলার নিজস্ব এক লোকজ ঐতিহ্য যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ঘাম, রক্ত আর রাজপথের ধুলোয় মিশে আজকের আধুনিক সমাজে এক স্বতন্ত্র রূপ নিয়েছে। একসময় লাঙল ছিল কৃষকের অস্ত্র, আর এখন তার জায়গা দখল করেছে হল গেট চাঁদা, মিছিল চাঁদা, ইফতার পার্টি চাঁদা এবং নতুন সংযোজন- আন্দোলনের চাঁদা।
বাংলাদেশের মূল সমস্যা হলো বৈষম্য
আমাদের যত যত সমস্যা ও ব্যর্থতা তার পেছনে যে দারিদ্র্য রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে কী? যেমন, পরিবার পরিকল্পনা। ছোট পরিবার সুখী পরিবার-এটা সত্য; কিন্তু তারও চেয়ে বড়ো সত্য হচ্ছে ধনী পরিবার মানেই ছোট পরিবার। পরিবার ছোট হলেই যে সুখী হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অসুখ-বিসুখ, ঝগড়া-কলহ, মনোমালিন্য, অধিক আদরে ছেলে-মেয়ে নষ্ট-ইত্যাদি সমস্যা থাকতেই পারে। থাকেই। অনেকে তো বিয়েই করতে পারেনি, নিজেই নিজের পরিবার এবং পরিবার পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণ থেকে আদর্শ বটে; কিন্তু তেমন পুরুষ কিংবা মহিলা, বিশেষ করে মহিলা, নিজেকে আদর্শ মানুষ কিংবা স্বর্গসুখ ভোগকারী ব্যক্তিত্ব বলে মনে করেন এমনটা মনে হয় না।
সুইডেনের সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও বাংলাদেশের বাস্তবতা
বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ কঠিন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে আমরা সংবিধানে গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগোই, অন্যদিকে বাস্তবে রাজনৈতিক দখলদারিত্ব, পরিবারতন্ত্র, দলীয় চাঁদাবাজি এবং একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের বাস্তবতা আমাদের পথরোধ করে। নির্বাচন এখন আর গণরায় নয়- এটি হয়ে উঠেছে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার এক নিষ্ঠুর কৌশল। এই সংকট নিরসনে নির্বাচন পদ্ধতির কাঠামোগত পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। বিশ্বের বহু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ব্যবহৃত প্রপেশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ভিত্তিক পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য এখন একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত বিকল্প। সুইডেনে আমার চার দশকের নাগরিক, গবেষক ও ভোটার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি- কীভাবে PR ভিত্তিক সংসদীয় গণতন্ত্র একটি সমাজকে ন্যায়, শান্তি ও প্রগতির পথে নিয়ে যেতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও কেন নাগরিক উদ্বেগ বাড়ছে!
আমরা, সাধারণ নাগরিকগণ এই প্রথমবারের মতো একটি গণভোটবিহীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি- যা সংবিধান অনুযায়ী হয়তো কিছুটা বিতর্কিত; কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে একে প্রয়োজনীয় বলেই মেনে নিতে হয়েছে। কারণ, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ কখনোই একটি পূর্ণাঙ্গ, কার্যকর ও টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। বরং দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতালিপ্সা, দুর্নীতি, গুম-খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা দেশকে এক গভীর আস্থাহীনতার খাদে ঠেলে দিয়েছে।
মালিকানার অধিকার থেকে বলছি
বাংলাদেশে যদি আরেকটি নির্বাচন হয়, তবে শোনো- আমার ভোট আমি দেবো, তুমি না। আমি আমার অধিকার বিক্রি করবো না, কারও গোলাম হবো না। তুমি যদি তোমার ভোট বিক্রি করো, তবে শুধু তুমি নও- আমার মতো কোটি কোটি মানুষকে তুমি গোলাম বানিয়ে দিচ্ছ। আর না! আমি বাংলাদেশে যেতে পারি না, কারণ সেখানে আমার জন্য লাঞ্ছনা অপেক্ষা করে, অপমান অপেক্ষা করে। কেন জানো? কারণ আমি কারও গোলাম নই- হতে পারি না, হতে চাই না! আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম, কারও দাসত্ব স্বীকার করার জন্য নয়।
মার্কিন নির্বাচনে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থী যে কারণে পরাজিত হতে পারেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে আগামী ৫ নভেম্বরে ভোট দেবেন সে দেশের নাগরিকরা। আর সেই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থী কিন্তু বিজয়ী নাও হতে পারেন। মার্কিন গণতন্ত্রের আলাদা কিছু দিক রয়েছে, আর সেগুলো নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের গণতন্ত্রকে অনুকরণীয় হিসেবে দেখিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে, স্বাধীনতা অর্জনের পরে কিংবা স্বৈরশাসককে সরিয়ে দেয়ার পর গণতন্ত্র পুনর্গঠনে কোনো দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র উদাহরণ হতে পারে। আজকের ডেমোক্র্যাটরা যেখানে বহুজাতিগত গণতন্ত্রের ধারণাকে গ্রহণ করছেন, সেখানে রিপাবলিকানরা পুরোনো শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যকে পুনরুজ্জীবিত করে দেশকে আবার মহান করতে চাচ্ছেন। ফলে বহু জাতির গণতন্ত্রের ধারণা এবং শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের ধারণা এখন সাংঘর্ষিক মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছে।