কলকাতা
আড্ডাবাজ কবি শহীদ কাদরী ও তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা
যদি বলা হয়, বাংলা সাহিত্যের তুমুল আড্ডাবাজ কবি কে? উত্তরে যাদের নাম সবার আগে আসবে তাদের মধ্যে অন্যতম কবি শহীদ কাদরী। একটা সময় শহীদ কাদরী ছিলেন জলজ্যান্ত এক আড্ডার নাম। তার সম্পর্কে বলা হয়, তিনি ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গেও আড্ডা দিতে পারেন। কবি নিজেই বলতেন, আমি হচ্ছি ইমিগ্র্যান্ট আড্ডাবাজ। আড্ডার নেতৃত্ব দিতেন নিজেই। কোথায় ছিল না আড্ডা- বিউটি বোর্ডিং, রেক্স রেস্তোরাঁ, কথাশিল্পী রশীদ করীমের বাড়ি, কবি শামসুর রাহমানের বাড়ি, শিক্ষাবিদ ফজল শাহাবুদ্দিনের অফিস, সন্ধানী পত্রিকা আর পুরানা পল্টন সর্বত্রই। আড্ডা হতো নিয়মিত।
কাজী নজরুল ইসলামের অন্তিম দিনগুলো
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কত হাজার হাজার লেখা হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। মাইকেল এইচ হার্ট রচিত ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষী’র জীবনীগ্রন্থে উল্লিখিত সর্বকালের সেরা মনীষীদের একজন কাজী নজরুল ইসলাম। কবির সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। একেবারেই ছোট করে যদি বলা হয়, বিদ্রোহ ও সাম্যের কবি নজরুল। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ।
জহির রায়হান হত্যাকাণ্ড নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অবসান হোক
যুদ্ধের অন্যতম অপরিহার্য অনুষঙ্গ প্রচারণা। যুদ্ধ মানেই তথ্য সন্ত্রাস, তথ্য বিকৃতি। যুদ্ধ মানেই বিকৃত ও মিথ্যা তথ্যে মনোজগৎ দখলের নিরন্তর চেষ্টা। যুদ্ধ মানেই স্মৃতির বিরুদ্ধের বিস্মৃতির লড়াই। বিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধ নিয়ে প্রচার-প্রচারণার অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন হিটলারের প্রোপাগান্ডা মিনিস্ট্রির (Reich Ministry of Public Enlightenment and Propaganda) প্রধান জোসেফ গোয়েবেলস, যার মূল দর্শন ছিল If you tell a lie big enough and keep repeating it, people will eventually come to believe it.
ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান : স্মৃতি, সত্তা ও ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এখন একটি ক্ষুরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হয়। আমার কাছে সংস্কৃতি শুধু গানবাজনা-নাচনাটক ইত্যাদি নয়, তা মানবের এই ভূপ্রকৃতির ওপর যা কিছু কর্ম, নির্মাণ ও পরিবর্তন, তার সব কিছু। কৃষিও সংস্কৃতি, রন্ধনও সংস্কৃতি, ফলে মৎস্য শিকারও সংস্কৃতি। তাই সম্প্রতি যে ৯৫ জন নিশানা ভুলে বাংলাদেশের সমুদ্রে চলে গিয়ে ওদেশের পুলিশের হাতে বন্দি হয়েছিলেন এবং শুনলাম প্রচুর পিটুনি খেয়ে ফিরে এসেছেন- সেটাকে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের অংশ হিসেবে দেখব কি না জানি না। হলেও ‘বৈধ’ আর দুই দেশের পরস্পরের ইচ্ছাধীন আর অভিপ্রেত আদান-প্রদানের উদাহরণ হিসেবে নিশ্চয়ই নয়।
শাকিব খান: ‘গুলিস্তান থেকে গুলশান’ কতটা সবার হয়ে উঠতে পারলেন
মেগাস্টার শাকিব খান কি সত্যি সত্যি গুলিস্তান থেকে গুলশান- সবার নায়ক হয়ে উঠতে পারলেন? গুলিস্তান থেকে গুলশান- সবার নায়ক হওয়ার এই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে খোদ শাকিব খানেরই কথায়। ‘বরবাদ’ সিনেমার সফলতা উদযাপন অনুষ্ঠানে শাকিব খান বলেছেন- তার সিনেমা এখন গুলিস্তান থেকে গুলশান- সব শ্রেণির দর্শকরা গ্রহণ করছেন।
আমাদের মাহফুজা আপা, স্মৃতিতে-স্মরণে
এ লেখা যখন লিখছি, তখন এ কথাই সত্য যে, আমাদের শ্রদ্ধেয় মাহফুজা খানম আপা নিরন্তরের পথে যাত্রা করেছেন। জন্ম নিলে মরতে হবে- এটাই সত্যি; কিন্তু কিছু মানুষ জন্ম নিয়ে শুধু ঘরে বসে থাকেন না। তারা তাদের কাজ দিয়ে দাগ রেখে যান। যে দাগের কারণে তাকে মনে রাখতেই হয়।
বাংলার বারুদে ইউরোপে লড়াই
পূবের সূর্য যখন অস্ত যায়, পশ্চিমের আকাশ তখন রেঙে ওঠে ভোরের আলোয়। আজ পশ্চিমা অস্ত্রে মধ্যপ্রাচ্য কাঁপছে, ওয়াঘার দুপ্রান্তে বিদেশি বিমান কিংবা ড্রোনের আঘাতে জ্বলছে সাবেক ভারতের দুটি অংশ। অথচ সেকালের ভারত কিংবা মধ্যযুগের বাংলার অস্ত্রে কেঁপে উঠেছিল ইউরোপের মাটি।
অমরত্ব, শোরা ও বাংলার প্রথম যুদ্ধাস্ত্র
উজবেকিস্তানের ফারগানার শাসক ছিলেন তার বাবা। ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে হটিয়ে মসনদের দখল নেয়। রাজা মারা পড়েন। ছেলে আশ্রয় নেন গহিন অরণ্যেঘেরা দুর্গম পাহাড়ে। সেখান থেকেই ঝটিকা আক্রমণে ছোট ছোট কাফেলা জয় করে সৈন্য ও সম্পদ জোগাড় করেন। একের পর সফল আক্রমণ তাকে আরও শক্তিশালী করে। পরে পুনরুদ্ধার করেন ফারগানাও। আরও শক্তিশালী হন, আরও দক্ষিণে এগিয়ে আসেন। এক সময় পুরো আফগানিস্তানও জয় করেন। তখন পাখির চোখে দেখেন ভারতবর্ষকে। স্বপ্ন আরও বড় হয়। সৈন্য-সামন্তের বিশাল বহর নিয়ে চলে আসেন সিন্ধু নদের কিনারায়। ভারতবর্ষের মসনদে তখন ইব্রাহিম লোদী। ডাকসাইটে সম্রাট। তাকে পরাস্ত করতে তাই বিশেষ কিছুর দরকার ছিল। সেই বিশেষ কিছু যুবকটি পেয়েছেন তুর্কিদের কাছ থেকে। বিশাল এক লোহার পাইপ। দুপাশে দুটি চাকা।
ইংরেজি বিদ্যায় বাঙালির হালচাল
বাঙালি ইংরেজি শিখতে শুরু করেছে কবে থেকে? নিশ্চয়ই যখন থেকে ইংরেজি শিক্ষাটা তার বৈষয়িক স্বার্থের অনুকূল রূপে দেখা দিয়েছে। সে সময়টা অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ। ১৭৫৭-তে পলাশীর ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার অবসান ঘটলো যদিও, তবু এদেশে ইংরেজের রাজত্ব গুছিয়ে নিতে কয়েক বছর সময় লেগেছিল অবশ্যই। তাই, তখনই ইংরেজের ভাষা এ দেশে রাজভাষা হয়ে ওঠেনি এবং বাঙালি সন্তানদের পক্ষেও রাজানুগ্রহ লাভের জন্য ইংরেজি ভাষা রপ্ত করার প্রয়োজন দেখা দেয়নি। ১৭৭৪ সালে কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বোঝা গেল যে, পুরোনো কেতায় আর জীবন চলবে না; ইংরেজ আর এখন শুধু বণিক নয়- রীতিমতো বণিকরাজ, সে বণিকরাজের প্রসাদভোগী হওয়ার জন্য তার ভাষাটা আয়ত্ত করা প্রজাকুলের একান্ত প্রয়োজন।
রেবতী মোহন বর্মণ: স্কুলজীবন থেকে আজীবনের বিপ্লবী
রেবতী মোহন বর্মণ নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে একটি অমর বইয়ের কথা মনে পড়বে আমাদের, বইটির নাম ‘সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ।’ বইটির লেখক কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নির্মাতা, আজন্ম বিপ্লবী ও সমাজ সংস্কারক। বইটি আর লেখকের নামটি যেন অবিচ্ছেদ্য। যে বইটি ১৯৫২ সাল থেকে এ উপমহাদেশের বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয়। ব্রিটিশ-ভারতের জেলে থাকাকালীন ব্রিটিশ সরকার রেবতী বর্মণের ওপর অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন করে। যে কারণে তিনি ঘাতক ব্যাধি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন। ১৯৪৯ সালে নিজ জন্মভূমি ভৈরবে বসে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত, পচন ধরা আঙুলে রশি দিয়ে হাতের সঙ্গে কলম বেঁধে রচনা করেন ‘সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ।’