গাজা
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের অন্তরালে গাজার বাস্তবতা
নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণহত্যা, ক্ষুধা, বাস্তুচ্যুত- এমন মর্মান্তিক বিশেষণগুলো যেন এখন শুধু গাজার জন্যই বরাদ্দ। গত বিশ মাস ধরে নারী-শিশু নির্বিশেষে উপত্যকাটির মানুষের ওপর চলছে বর্বর হত্যাযজ্ঞ। গাজায় যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চলছে তা একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে হজম করা বেশ কঠিন। এমন হৃদয়বিদারক চিত্র একটি-দুটি নয়। হাজার হাজার। যা করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট ইসরায়েল। লাখ লাখ মানুষ সেখানে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। যাদের খাদ্য নেই, থাকার জায়গা নেই। আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নেই। এক অমানবিক ও মর্মান্তিক জীবন পার করছেন গাজাবাসী। তারা যেন এক দুঃস্বপ্নের মধ্যে রয়েছেন। এ পর্যন্ত কত মানুষ নিহত হয়েছেন তার সঠিক কোনো হিসাব নেই। প্রতিনিয়তই মৃত মানুষের মিছিল ভারী হচ্ছে।
দুনিয়ার নিরস্ত্র মানুষ আজ অস্ত্রবাজ শক্তির হাতে জিম্মি
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বিশ্বের ৩০০ বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে গণতন্ত্র কয়েকটি দেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্রসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সমস্ত দেশেরও মূল লক্ষ্য গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। মানবাধিকার বিশ্বজুড়ে একটি চর্চিত বিষয়। কষ্টের কথা বিশ্বজুড়ে অহরহ লঙ্ঘিত বিষয়ও মানবাধিকার। মানবাধিকার দুটি শব্দের একত্রিত রূপ; মানব ও অধিকার। সহজ কথায় মানবের অধিকারই মানবাধিকার। মানুষ যখন তার অধিকার ঠিকভাবে পায় না তখনই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর তখনই বিশ্বজুড়ে শোরগোল ওঠে।
গাজা থেকে ইরান: বোমার বিস্ফোরণ ভেদ করে শুনি মানুষের আর্তনাদ
মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও গোটা বিশ্বের দৃষ্টি ছিল গাজার দিকে। চারপাশে ছিল ধ্বংসস্তূপ, রক্তাক্ত শিশুর কান্না, শরণার্থীদের আর্তনাদ। ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষ ছুটছিল অজানা গন্তব্যে। খাদ্যের অভাবে শিশুরা তাকিয়ে ছিল অসহায় চোখে। তাদের দৃষ্টি আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করছিল বারবার। বোমা বর্ষিত হয়েছিল সেইসব আশ্রয়কেন্দ্রেও, যেখানে নিরাপত্তার জন্য শেষ আশ্রয় খুঁজেছিল অসহায় মানুষজন।
ইরানকে টুপিখোলা স্যালুট
২১ জুন, ২০২৫। আমেরিকা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। দ্রুত শান্তি না এলে তাদের বাকি টার্গেটগুলোতে নির্ভুল নিশানায় আবারও আঘাত হানার হুমকি দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান প্রতিশোধ নিয়েছে আপোষে। ইরান আগে অবহিত করেছে, পরে কাতারে আমেরিকান ঘাটিতে আক্রমণ করেছে। আমেরিকা তাদের ঘাঁটি থেকে সব সরিয়ে সরিয়ে নেওয়ার পর ইরান ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
দুনিয়ার সবচেয়ে ভুখা মানুষের স্থান গাজা
গাজা এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ভুখা মানুষের স্থান। গাজার প্রতিটি মানুষ দুর্ভিক্ষে ভুগছেন। গাজাকে সম্পূর্ণ বিনাশ করে দেয়ার উন্মুত্ততায় মেতেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের শুধু ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করে খ্যান্ত হয়নি, তাদের এখন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। গাজার এখন এমন অবস্থা যে সেখানে খাদ্য-সহায়তাও পৌঁছানো যাচ্ছে না। গত শুক্রবার জাতিসংঘ জানিয়েছে, খাদ্য পৌঁছাতে গিয়েও তারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে গিয়ে তাদের এতটা বেগ পেতে হয়নি।
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ: পরমাণু অস্ত্রের আতঙ্ক এবং শক্তিধর দেশগুলোর ভূমিকা
পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে ৭ তারিখ থেকে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা নিয়ে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে কোনো শক্ত মধ্যস্থতা, অথবা ডি-এক্সলেশনের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। হ্যাঁ, চীন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইরান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি এরই মধ্যে দুদেশ সফর করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দুই দেশের সঙ্গেই টেলিফোনে যোগাযোগ রাখছেন। তারপরও দুই পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্যোগ পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না।
রাখাইনের জন্য করিডোর: নানা প্রশ্নের উত্তর কী?
গাজাবাসীর পর এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি রাখাইন জনগোষ্ঠী। গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশটিতে যে কোনো মুহূর্তে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে। এমন শঙ্কা থেকে সেখানে মানবিক সহায়তা দিতে বাংলাদেশের কাছে করিডোর চেয়েছে জাতিসংঘ।
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন ফাটলে রূপ নিচ্ছে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দান থেকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের শুরু। আত্মপ্রকাশ ঘটে ভূরাজনৈতিক ব্লকের। যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক ব্লক সোভিয়েত ইউনিয়নের বাড়-বাড়ন্তে উদ্বেগ বাড়তে থাকে ওই ব্লকের। বাড়তে থাকে উত্তেজনা। শুরু হয় একে অপরের মধ্যকার বহুমাত্রিক প্রতিযোগিতা। উভয় ব্লকেরই দাবি ছিল, বিপরীত ব্লক তাদের ভেতরকার ঐক্য ধ্বংস করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদল যেমন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে অবস্থান নিতে পারত না, তেমনি সোভিয়েত ট্যাঙ্কগুলোও প্রুশিয়ান ময়দানে প্রবেশ করতে পারত না যুক্তরাষ্ট্রের কারণে। তখন ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করার এই প্রক্রিয়াকে তখন ‘ডিকাপলিং’ বলা হতো। উভয় ব্লকের কয়েক দশকের দ্বন্দ্ব যা করতে পারেনি, তা এখন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই করতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিদেশি ব্র্যান্ডের ওপর হামলা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে
ইসরায়েলের বোমার আঘাতে এখন আর কেবল বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয় না, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনকণার সঙ্গে মানবদেহও আকাশে উড়ছে। অকল্পনীয় ও হৃদয়বিদারক দৃশ্য। ইসরায়েলকে কেউ থামাতে পারল না, পারবেও না। অসহায় সাধারণ মুসলমান অহর্নিশ সৃষ্টিকর্তার করুণা ভিক্ষা করছে, দোয়া করছে, প্রার্থনা করছে বিগত ৭৬ বছর ধরে। ছিয়াত্তর বছর ধরে ভিটেবাড়ি ছাড়া ফিলিস্তিনিরা, ২০ লাখ অধিবাসীর গাজা বিগত পনেরো মাস ধরে আমেরিকা আর ইসরায়েলের বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে, প্রতিদিন লোক মরছে, আহত হচ্ছে, অসংখ্য লাশ ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছে, খাবার নেই, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। এত লাশ, কবর দেয়ার জায়গা নেই। স্বজন, সম্পদ, আশ্রয় সব হারিয়ে নিঃস্ব গাজাবাসী। এমন রোমহর্ষক দৃশ্য দেখেও জগতবাসী নির্বিকার। মনে হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা মানুষ পদবাচ্য নয়, মানুষ হলে শত শত শিশুর মৃত্যুতে যুদ্ধ এতদিনে থেমে যেত। জগতে সৃষ্ট প্রজাতির মধ্যে মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে দিয়ে তা প্রমাণ করা সহজ।
লুটপাট কোন ধরনের প্রতিবাদ?
প্রতি মুহূর্তে আকাশ থেকে আগুন ঝরছে, প্রতিটি ঘরে শোকের ছায়া। হাসপাতালগুলোর মেঝেতে সারি সারি রক্তাক্ত লাশ। নবজাতক শিশুরা অক্সিজেনের অভাবে মায়ের কোলে মারা যাচ্ছে, হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের নিচে চিকিৎসকরা চাপা পড়ে যাচ্ছেন, অথচ বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো নীরব দর্শকের ভূমিকায়। শিশুদের কান্না, মায়েদের আর্তনাদ, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে মানবতা।