১৯৭১
বদরুদ্দীন উমর অনেক ক্ষেত্রেই ছিলেন অদ্বিতীয়: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
বদরুদ্দীন উমর একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন, অনেক ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। সমাজে যেসব মানবিক দুর্বলতার বিষয় থাকে, তাকেও সেসব আক্রমণ করেছিল; কিন্তু তাকে পথচ্যুত করতে পারেনি। তিনি ভীত হননি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মধ্যে থেকেও সন্ত্রস্ত হননি। সম্মান, পুরস্কারের মোহ তাকে স্পর্শ করেনি।
জাসদের সৃষ্টিতে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে
লেখক-গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। একাধারে তিনি ইতিহাসবেত্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতাযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি লিখেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন ও গবেষণা করেছেন তাদের অন্যতম তিনি। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র রাজনৈতিক লেখক যিনি ১৯৭৩-এর নির্বাচন নিয়ে লিখেছেন ‘তিয়াত্তরের নির্বাচন’ নামে একটি বই। লিখেছেন ‘লাল সন্ত্রাস: সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা রাজনীতি’, ‘প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান’, ‘আওয়ামী লীগ বিএনপি কোন পথে’, ‘জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ ইত্যাদি গ্রন্থ। সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে এখনো লিখে চলছেন।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এবারের ডাকসু নির্বাচন কীরকম প্রভাব ফেলতে পারে!
১৯২৪ থেকে ২০২৫ সাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর ১০০ বছরের ইতিহাসে এবারের ডাকসু নির্বাচন কি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে? ইতিহাসের ঘটনাসমূহ কোনটার চেয়ে কোনটার গুরুত্ব বেশি তা নির্ধারণ করা কঠিন। তাৎক্ষণিকভাবে তা অনেক সময় সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। ইতিহাসের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আড়ালে পড়ে যায়, অনেক ছোটখাটো বিষয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্লেষণ, পক্ষপাতিত্ব- সব মিলিয়ে একেকটা ঘটনার ব্যাখ্যা হয় একেক রকম। তারপরও এ কথা স্পষ্টভাবেই বলা যায়, আমাদের জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে, বিশেষ করে দেশভাগ-পরবর্তী বাঙালি-মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মুসলমানের সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতি গঠনে ডাকসু এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
অসাংবিধানিক সরকার কখনোই গণতান্ত্রিক হতে পারে না
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথাটি বার বার নানাভাবে আসে। তা ছিল কঠিন দুঃসময়। আমরা প্রত্যেকেই ভীষণ বিপদে ছিলাম। প্রত্যেকটি দিন, প্রতিটি রাত এমনকি মুহূর্তও ছিল আতঙ্কের। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়েই ভাবতাম, বড়জোর আপনজনদের বিষয়ে এর মধ্যেও আমরা ব্যস্ত ছিলাম। খবরের আদান-প্রদান করি, কোথায় কী ঘটছে জানতে চাই, রেডিও শুনি, মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করি আর যারা যুদ্ধে ছিলেন তাদের তো মরণপণ অবস্থা। আমাদের সবার জন্য কাজ ছিল। বিপদ আমাদের তাড়া করছিল; কিন্তু স্বপ্নও ছিল। সামনে একটি স্বপ্ন ছিল। সমষ্টিগত এবং মস্তবড় স্বপ্ন। আমরা আশা করতাম হানাদারদের তাড়িয়ে দেব, আমরা মুক্ত হব আর সেই লক্ষ্যে আমরা কাজও করতাম। যে যেভাবে পারি কাজ করতে চাইতাম।
মৃত্যুঞ্জয়ী রুমির জন্য অপেক্ষা আজও ...
২৯ আগস্ট ১৯৭১। রাত আনুমানিক ১২টা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কড়া পাহাড়ায় ঢাকা শহরে তখন আতঙ্কিত নীরবতা। ওই দিন সন্ধ্যার পরই বাড়ি ফিরেছিলেন শাফী ইমাম রুমি। এসেই মাকে বলেছে তার বন্ধু, গেরিলা যোদ্ধা হাফিজ বাসায় থাকবে। ধীরে ধীরে রাতের আঁধার গাঢ় হচ্ছিল। ছোট ভাই জামির ঘরে বাজছিল রেডিও। বেতার তরঙ্গে হঠাৎ বেজে উঠল ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি গানটি...’। চমকে উঠলেন রুমি। ভাবলেন কি হলো এ গানটা আজ কয়েকবার বেজেছে। নিশ্চয় কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেকটা বিষণ্ন মনে ঘুমাতে গেল বাড়ির সবাই। বাবা শরীফ ইমাম, মা জাহনারা ইমাম, ছোট ভাই জামি, রুমি ও আরও কয়েকজন।
জহির রায়হান হত্যাকাণ্ড নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অবসান হোক
যুদ্ধের অন্যতম অপরিহার্য অনুষঙ্গ প্রচারণা। যুদ্ধ মানেই তথ্য সন্ত্রাস, তথ্য বিকৃতি। যুদ্ধ মানেই বিকৃত ও মিথ্যা তথ্যে মনোজগৎ দখলের নিরন্তর চেষ্টা। যুদ্ধ মানেই স্মৃতির বিরুদ্ধের বিস্মৃতির লড়াই। বিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধ নিয়ে প্রচার-প্রচারণার অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন হিটলারের প্রোপাগান্ডা মিনিস্ট্রির (Reich Ministry of Public Enlightenment and Propaganda) প্রধান জোসেফ গোয়েবেলস, যার মূল দর্শন ছিল If you tell a lie big enough and keep repeating it, people will eventually come to believe it.
ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান : স্মৃতি, সত্তা ও ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এখন একটি ক্ষুরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হয়। আমার কাছে সংস্কৃতি শুধু গানবাজনা-নাচনাটক ইত্যাদি নয়, তা মানবের এই ভূপ্রকৃতির ওপর যা কিছু কর্ম, নির্মাণ ও পরিবর্তন, তার সব কিছু। কৃষিও সংস্কৃতি, রন্ধনও সংস্কৃতি, ফলে মৎস্য শিকারও সংস্কৃতি। তাই সম্প্রতি যে ৯৫ জন নিশানা ভুলে বাংলাদেশের সমুদ্রে চলে গিয়ে ওদেশের পুলিশের হাতে বন্দি হয়েছিলেন এবং শুনলাম প্রচুর পিটুনি খেয়ে ফিরে এসেছেন- সেটাকে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের অংশ হিসেবে দেখব কি না জানি না। হলেও ‘বৈধ’ আর দুই দেশের পরস্পরের ইচ্ছাধীন আর অভিপ্রেত আদান-প্রদানের উদাহরণ হিসেবে নিশ্চয়ই নয়।
প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শেখ মুজিব
শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্য সাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের লোকদেরও কেউ কেউ তার অবস্থানের প্রতি নমনীয় ছিলেন। যে জন্য গণহত্যা শুরুর আগে পূর্ববঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্তব্যরত সাহাবজাদা ইয়াকুব খান পদত্যাগ করেন এবং নৌবাহিনীর এস এম হাসানকে সরিয়ে দিয়ে টিক্কা খানকে গভর্নর ও সামরিক শাসক হিসেবে আনা হয়। টিক্কা খান ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ উপাধি পেয়েছিলেন; যে উপাধির তিনি অযোগ্য ছিলেন না এবং পূর্ববঙ্গেও তিনি এসেছিলেন ‘কসাই’ হিসেবেই।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি
পিতা চলে গেলেই পিতৃতান্ত্রিকতা যে বিদায় হয়, তা নয়। পিতৃতান্ত্রিকতার অবসান ঘটানোর জন্য একটি সামাজিক বিপ্লব আবশ্যক। আমাদের দেশে সে বিপ্লব আজও ঘটেনি। মানুষের সঙ্গে মানুষের অধিকারের সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি; ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণও যে সহসা ঘটবে এমন আশা নেই। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর নিশ্চয়তা-প্রাপ্তি দূরের সুখস্বপ্ন বটে। আর সামাজিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যেহেতু ব্যক্তি মালিকানার জায়গাতে সামাজিক মালিকানার প্রতিষ্ঠা ঘটেনি, তাই বৈষম্য উৎপাদনের প্রকৃত ক্ষেত্রটি অক্ষুণ্নই রয়ে গেছে।
গ্যাস সংকটে শিল্পোদ্যোক্তারা এখন কী করবে
দিন যত যাচ্ছে, গ্যাস সংকট ততই তীব্র হচ্ছে। গ্যাস সংকটে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন উদ্যোক্তারা আর বিনিয়োগের সাহস পাচ্ছে না। সরকার অনেকবার আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত বারবার ব্যর্থতাই প্রমাণ করছে। গ্যাস-সংকটের কারণে কারখানাগুলোতে ৬০ শতাংশের বেশি উৎপাদন হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই)। গ্যাস সংকটের সঙ্গে বেড়েছে ব্যাংক ঋণের সুদের হার । তিন মাস সুদ না দিলেই ঋণখেলাপি করছে ব্যাংক। এমন অবস্থায় শিল্পোদ্যোক্তারা চরম নিরাশাজনক অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।