শেখ মুজিবুর রহমান
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বঙ্গবন্ধুরই লেখা
আবুল কাসেম ফজলুল হক। বাংলা ভাষার প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, সমাজ বিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। বর্তমানে তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক কয়েকটি বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর এডিটরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।
প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শেখ মুজিব
শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্য সাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের লোকদেরও কেউ কেউ তার অবস্থানের প্রতি নমনীয় ছিলেন। যে জন্য গণহত্যা শুরুর আগে পূর্ববঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্তব্যরত সাহাবজাদা ইয়াকুব খান পদত্যাগ করেন এবং নৌবাহিনীর এস এম হাসানকে সরিয়ে দিয়ে টিক্কা খানকে গভর্নর ও সামরিক শাসক হিসেবে আনা হয়। টিক্কা খান ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ উপাধি পেয়েছিলেন; যে উপাধির তিনি অযোগ্য ছিলেন না এবং পূর্ববঙ্গেও তিনি এসেছিলেন ‘কসাই’ হিসেবেই।
বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা যত করা হবে, ততই তিনি উজ্জ্বল হবেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সামনাসামনি প্রথম দেখি ১৯৬৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, তখন আমি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। আইয়ুব খান তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, মোনায়েম খান গভর্নর। বঙ্গবন্ধু সেদিন কিশোরগঞ্জে গিয়েছিলেন। কিশোরগঞ্জের রংমহল সিনেমা হলে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করছিলেন সামান্য কিছু মানুষ নিয়ে, সেই মানুষের সংখ্যাটা একশ হতে পারে। তার সঙ্গে সেদিন ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। প্রথম তাকে দেখা, সাদা হাওয়াই শার্ট পরিহিত, প্যান্ট, ব্যাক ব্রাশ করা চুল, লম্বা মানুষ।
বামপন্থিদের বিভাজন: আদর্শের সংঘাত ও নেতৃত্বের লোভ, না ক্ষমতার বাস্তবতা?
কিছুদিন আগের কথা- বামপন্থিরা জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ করে ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’-এর ব্যানারে। কর্মসূচির মূল স্লোগান ছিল- ‘মা মাটি মোহনা, বিদেশিদের দেব না’। অতীতেও বামপন্থিরা জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এসব আলোচনা করতে বিশদ লেখা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এককভাবে আওয়ামী লীগের হাতে ছিল- এ কথা অনেকবার বলা হয়েছে। এটিকে আপনি চাইলে ‘আওয়ামী বয়ান’ বলতে পারেন; কিন্তু এটা ইতিহাসের একমাত্র সত্য নয়। প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল মূলত আওয়ামী লীগের নেতাদের দিয়ে, তবে সেই সরকারের পাশাপাশি ছিল একটি উপদেষ্টা কমিটিও, যার প্রধান ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আরও ছিলেন কমরেড মণি সিংহ, মোজাফফর আহমেদ এবং কংগ্রেস নেতা মনোরঞ্জন ধর। একমাত্র মনোরঞ্জন ধর বাদে বাকি সবাই ছিলেন বামপন্থি। এ থেকেই স্পষ্ট হয়- বামপন্থিদের অবস্থানকে অবহেলা করা ইতিহাসের প্রতি অবিচার।
সত্য বললে আর নির্বাচন চাইলে বলে ভারতের দালাল
রাজনীতির চারণকবিখ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। সাবেক সংসদ সদস্য, কিশোরগঞ্জ-৩। কিশোরগঞ্জ জেলা মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন তিনি। দেশ, মাতা, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় যে কোনো সংকট-দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে তিনি আবির্ভূত হন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে। সর্বোচ্চ সোচ্চার থাকেন ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আপসহীন এ ব্যক্তিত্ব কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের করনসি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। সম্প্রতি ভিউজ বাংলাদেশের মুখোমুখি হন বরেণ্য এ রাজনীতিবিদ। কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী বাংলাদেশ, রাজনীতি, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানসহ সমসাময়িক বিষয়ে। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় পর্ব।
ফ্রেশনোট ঈদে না ছাড়লেও অন্য সময় ছাড়তে হবে
বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ মার্চ, ২০২৫ তারিখে এক প্রজ্ঞাপন ইস্যু করে তাদের সব অফিসকে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মাঝে ফ্রেশনোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রেখে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সব লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদন করতে নির্দেশ দিয়েছে। একই প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গেও ফ্রেশনোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছে। অর্থাৎ আসন্ন ঈদুল ফিতরে কোনো ফ্রেশনোট ছাড়া হচ্ছে না; কিন্তু এই প্রজ্ঞাপন জারির কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৯ মার্চ থেকে ফ্রেশনোট ইস্যু করা হবে মর্মে ঘোষণা দিয়েছিল। অল্প সময়ের ব্যবধানে পরস্পরবিরোধী প্রজ্ঞাপন থেকে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের গৃহীত পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে।
পঁচাত্তরের ২৫ জানুয়ারি কীভাবে পাস হয়েছিল ‘বাকশাল’
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে দুর্ভিক্ষ এবং জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি নতুন ধরনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে বঙ্গবন্ধু এগোতে থাকেন- তিনি যেটিকে বলতেন ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’- সেই বিপ্লব কায়েমের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে পাস হয় সংবিধানের বহুল আলোচিত (এবং বিতর্কিত) চতুর্থ সংশোধনী বিল। যে সংশোধনীর মধ্য দিয়ে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়।
সব দলীয় সরকারই অন্য সরকারের অবদানকে কেন অস্বীকার করে?
জুলাই এবং আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিজয়ে বড় ভাগ বসাতে চায় বিএনপি; জামায়াতে ইসলামও চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা জামায়াতকে স্বীকৃতি দিলেও বিএনপিকে বেশি কৃতিত্ব দিতে আগ্রহী নয়। তাই দুপক্ষের মধ্যে মাঝে মাঝে বাকযুদ্ধ হয়। বিএনপি মনে করে তারা পনেরো বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছে, তাদের সংগ্রাম অব্যাহত না থাকলে শুধু জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন সম্ভব হতো না। কথাটি মিথ্যা নয়। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়ার ফলে ১৬ ডিসেম্বরে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে।
সংস্কারের ‘ষড় ক’ এবং অর্থনৈতিক সংকটের পদধ্বনি
সংস্কার বলতে আপনি কী বোঝেন- সেটি নির্ভর করে আপনি কে, আপনার পেশা কী, আপনার রাজনৈতিক বিশ্বাস ও মত কী, কোন দলের সমর্থক এবং সর্বোপরী দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কী- তার ওপর। একজন রিকশাচালক সংস্কার বলতে যা বোঝেন, একজন রাজনীতির অধ্যাপকের কাছে সংজ্ঞাটি হয়তো সেরকম নয়। আবার জুলাই অভ্যুত্থানে যে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো সক্রিয় ছিল, তাদের সবার কাছেও সংস্কারের সংজ্ঞা এক নয়। যেমন বিএনপি সংস্কার বলতে বোঝে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযাগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ। তাদের কাছে সংস্কার মানে প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটবঞ্চিত মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং দেশকে একটি গণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত করা; কিন্তু সংস্কার প্রশ্নে জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় বিএনপির দীর্ঘদিনের ভোট ও জোটসঙ্গী জামায়াতের অবস্থান ভিন্ন। তারা মনে করে, আগে সংস্কার তারপরে নির্বাচন। অর্থাৎ নির্বাচন তাদের কাছে এক নম্বর অগ্রাধিকার নয়।
বাংলাদেশ শুরু থেকেই স্বৈরশাসনের কবলে
১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পর মুসলিম লীগের যে অবস্থা হয়েছে এর সাথে একটা মিল আছে। অনেক বড় মিল আছে। মিলটা এখানে যে, এই দুটো রাজনৈতিক দলেরই ভবিষ্যৎ শেষ হয়েছে। মুসলিম লীগ যেভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিল, আওয়ামী লীগও সেভাবে শেষ হয়ে যাবে।