রাশিয়া
ট্রাম্প পুতিন বৈঠক: সফল ও বিফলের হিসাব
১৫ আগস্ট বাংলাদেশ সময় মধ্য রাতে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে যে বৈঠক হলো, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম লিখছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো সুরাহা হয়নি, কোনো সমঝোতা হয়নি, পুতিন-ট্রাম্প আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে ইত্যাদি। বৈঠকের ঘোষণার পর থেকেই এ বিষয়টি ছিল টক অব দি ওয়ার্ল্ড; কিন্তু এ আলোচনার এজেন্ডা কী ছিল, লক্ষ্য কী ছিল সেটা কেউ পরিষ্কার করে বলছেন না। প্রধানত ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা বটে; কিন্তু কোনো সমঝোতা বা চুক্তির কথা ছিল না।
কূটনীতির গোলক ধাঁধায় বাংলাদেশ!
কূটনীতির গোলক ধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশের কথা বলি কেন, বিশ্ব রাজনীতিই এখন গোলক ধাঁধার মধ্যে। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে যে বাড়তি শুল্ক আরোপের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন, সেটা যুক্তরাষ্ট্রকেই বিশ্ব রাজনীতিতে একঘরে করে ফেলার বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছে। আর সে ক্ষেত্রের ভেতরেই বিশ্ব কূটনীতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। অবশ্যই বাংলাদেশ তার বাইরে নয়।
নতুন বিশ্বব্যবস্থায় চীন-ভারত সম্পর্ক
সবাই জানে, একটি নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার তৈরি হয়েছে। এই নতুন ব্যবস্থায় কোন দেশের অবস্থান কী, কোন দেশ কোন দেশের সঙ্গে নতুনভাবে বন্ধুত্ব গড়ে তুলছে, কোন দেশ কোন দেশকে সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমর্থন দিচ্ছে তা নতুন করে রি-শেফ হচ্ছে। যেমন ধরা যাক ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে দীর্ঘকালীন বন্ধন, তাতে বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর একটি ফাটল ধরেছে। সম্পর্কটা এখন যতটা আন্তরিক, তারচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক এবং উইন-উইন। তাদের কমন ইন্টারেস্ট হলো সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং পশ্চিমা প্রভাবকে ধরে রাখা। এর বাইরে এতকাল যে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের প্রতি অন্ধ সমর্থন দিয়েছে এবং ইউরোপকে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে তা থেকে ট্রাম্প প্রশাসন সরে এসেছে। সেটা ইউরোপকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে এবং ইউরোপ এখন নিজেদের সামরিক শক্তি দ্রুত বৃদ্ধিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ পূর্বের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকতে চাচ্ছে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি অচিরেই ইউরোপ একটি সামরিকশক্তি হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
আধা খাওয়া আপেল, বিশ্বযুদ্ধ ও অ্যালান টুরিং
‘যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যা তারায় আমার খবর পুছবে...’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কবিতার মতো যুক্তরাজ্যের সরকার যেদিন তার ভুল স্বীকার করে, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এর সাড়ে পাঁচ দশক আগে নিজের জীবনের ইতি টেনেছেন আধুনিক কম্পিউটারের তাত্ত্বিক প্রবক্তা অ্যালান টুরিং। সালটা ২০০৯। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বলেন, ১৯৫০-এর দশকে ভুল করেছিল যুক্তরাজ্য সরকার। ভুল ছিল যুক্তরাজ্যের বিচার ও আইন ব্যবস্থায়। তাই আমাদের ইতিহাসের অন্যতম প্রতিভাধর মানুষটাকে ভুল বিচারে ভুল দণ্ড দেওয়া হয়। এ জন্য যুক্তরাজ্য সরকার লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি হ্রাসের এই প্রবণতা ধরে রাখতে হবে
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে ইস্যুটি সবচেয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে তা হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা। কোনোভাবেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছিল না। করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনীতি যখন উত্তরণের পর্যায়ে ছিল ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই অপ্রত্যাশিত যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। ফলে পরিবহন সংকটজনিত কারণে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার বছর বিশ্বের খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। তাই উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতাকে পণ্য উৎপাদন ঘাটতিজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করার কোনো সুযোগ ছিল না।
কৃষি খাতের পুনর্মূল্যায়ন ও কৃষি কমিশন গঠন প্রসঙ্গে
উৎপাদনে আধুনিক উপকরণ ব্যবহার ও ভূমি উন্নয়নে এদের আগ্রহ থাকে কম। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রাপ্তি ও কৃষি যন্ত্র সংগ্রহে এদের প্রবেশাধিকার কম। ফলে তাদের প্রতি ইউনিট জমির উৎপানে প্রবৃদ্ধির হার কম। অপরদিকে বড় ও মাঝারি কৃষকগণ ক্রমাগতভাবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষাবাদে। তারা ক্ষয়িষ্ণু কৃষক। চাষাবাদে তাদের বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে তাদের উৎপাদন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।
বিশ্ব আইন ব্যবস্থা ও বাংলাদেশ
প্রত্যেক দেশের আইন ব্যবস্থায় নিজস্ব কিছু সক্রিয়তা রয়েছে। প্রত্যেক দেশ তার নিজস্ব রূপে এবং স্বাধীনভাবে তাদের কৃষ্টি,সংস্কৃতি,প্রকৃতি ও প্রয়োজনীয়তার ওপর নির্ভর করে Legal system (আইন ব্যবস্থা) প্রণয়ন করে থাকে। এটা স্বীকৃত যে, প্রত্যেক দেশ আইন ব্যবস্থা ব্যতীত প্রাণহীন দেহ। যা কোনো রকম কার্য সম্পাদন করতে পারে না। বিভিন্ন দেশে আইন ব্যবস্থার অভ্যুদয়ে বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন: প্রথা,ধর্ম,আদালত ইত্যাদি। এ কারণেই বিভিন্ন আইনের প্রকাশভঙ্গি বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের আইনের উপাদান সমূহের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ঝুঁকিতে বিশ্ব অর্থনীতি
সৃষ্টির সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাস আদম সন্তানের রক্তে রঞ্জিত। নিজেদের মহত্ব প্রকাশের দরুন বলি হয়েছে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ। ক্ষমতার অতি উচ্চ আকাঙ্ক্ষা বা অপরের ওপর নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে যুগে যুগে মরিয়া হয়ে ছিল শাসক শ্রেণি। যার ফল লাখ লাখ নিরীহ মানুষের রক্তে জমিন রঙিন হওয়া। যুদ্ধের সূচনা শাসক শ্রেণির হাতে হলেও প্রাণনাশ ঘটে অতি সাধারণ মানুষের। বর্তমান বিশ্বের ইতিহাসও এই ধারাবাহিকতার বাইরে নয়। এরই মধ্যে বিশ্ববাসী দুটো মহাযুদ্ধের ধ্বংসলীলার সাক্ষী হয়েছে।
সাহিত্যের রাষ্ট্রবিরোধিতা
কবিতা না লিখলেও প্লেটো যে একজন কবি ছিলেন তা তার গদ্য রচনার পরতে পরতে প্রমাণিত। উপমায়, রূপকে, শব্দ চয়নে ওই দার্শনিক তার অন্তর্গত কবির কল্পনা ও সৌন্দর্যবুদ্ধি উভয়কেই ব্যবহার করে গেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে কবিতার গুণ ও আবেদন তিনি যে জানতেন তাতেও সন্দেহ করবার অবকাশ নেই; কিন্তু তিনি তার আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের জন্য কোনো জায়গা রাখেননি। জায়গা রাখবেন কি, নির্দেশ দিয়েছেন তাদেরও বের করে দেবার জন্য। কবিদের সম্মান দেয়া হবে, মালা ও সুগন্ধী দিয়ে তাদের সজ্জিত করা যাবে; কিন্তু তাদের সবিনয়ে বলতে হবেঃ মহাশয়বৃন্দ, আপনাদের জন্য আমাদের রাষ্ট্রে কোনো স্থান নেই।
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানো কতটা সহজ?
যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে- সেই দলটি দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছর পর গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হলো- তার পেছনে অন্তত বিশটি কারণ আছে। এখানে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বা বিদেশি ইন্ধনের অভিযোগ যতই থাকুক, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আওয়ামী লীগ যে দুর্নীতি, দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল- সেটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।