মুক্তি যুদ্ধ
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বঙ্গবন্ধুরই লেখা
আবুল কাসেম ফজলুল হক। বাংলা ভাষার প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, সমাজ বিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। বর্তমানে তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক কয়েকটি বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর এডিটরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।
রাজনীতিতে শিষ্টাচারবহির্ভূত স্লোগান কেন?
প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য রাজনৈতিক স্লোগানে দু-একটা অপ্রীতিকর শব্দ ব্যবহার হয় সবসময়ই। যেমন, ‘অমুকের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে’। বেশ পরিচিত স্লোগান; কিন্তু এখন, বাংলাদেশে এমন কিছু অশ্লীল রাজনৈতিক স্লোগান শুরু হয়েছে যা খুবই অরুচিকর-অশ্লীল। ভদ্রলোকরা সেগুলো শুনে কানে আঙুল দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক অনেক ওটিটি-ফিল্মে দেখা যায় গালাগালির সময় ‘টুট টুট’ একটা শব্দ দিয়ে অশ্লীল শব্দগুলো মিউট করে দেয়া হয়। ‘টুট টুট’ শব্দ শুনলেই দর্শক বুঝতে পারছেন অশ্লীল গালাগালি হচ্ছে। সম্প্রতি টেলিভিশনের খবরেও দেখা গেল রাজনৈতিক স্লোগানের জায়গায় ‘টুট টুট’ ব্যবহার করতে। এমন কিছু অশ্লীল স্লোগান এখন ব্যবহার হচ্ছে যা শোনাও যায় না, লেখাও যায় না।
অসাংবিধানিক সরকার কখনোই গণতান্ত্রিক হতে পারে না
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথাটি বার বার নানাভাবে আসে। তা ছিল কঠিন দুঃসময়। আমরা প্রত্যেকেই ভীষণ বিপদে ছিলাম। প্রত্যেকটি দিন, প্রতিটি রাত এমনকি মুহূর্তও ছিল আতঙ্কের। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়েই ভাবতাম, বড়জোর আপনজনদের বিষয়ে এর মধ্যেও আমরা ব্যস্ত ছিলাম। খবরের আদান-প্রদান করি, কোথায় কী ঘটছে জানতে চাই, রেডিও শুনি, মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করি আর যারা যুদ্ধে ছিলেন তাদের তো মরণপণ অবস্থা। আমাদের সবার জন্য কাজ ছিল। বিপদ আমাদের তাড়া করছিল; কিন্তু স্বপ্নও ছিল। সামনে একটি স্বপ্ন ছিল। সমষ্টিগত এবং মস্তবড় স্বপ্ন। আমরা আশা করতাম হানাদারদের তাড়িয়ে দেব, আমরা মুক্ত হব আর সেই লক্ষ্যে আমরা কাজও করতাম। যে যেভাবে পারি কাজ করতে চাইতাম।
ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান : স্মৃতি, সত্তা ও ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এখন একটি ক্ষুরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হয়। আমার কাছে সংস্কৃতি শুধু গানবাজনা-নাচনাটক ইত্যাদি নয়, তা মানবের এই ভূপ্রকৃতির ওপর যা কিছু কর্ম, নির্মাণ ও পরিবর্তন, তার সব কিছু। কৃষিও সংস্কৃতি, রন্ধনও সংস্কৃতি, ফলে মৎস্য শিকারও সংস্কৃতি। তাই সম্প্রতি যে ৯৫ জন নিশানা ভুলে বাংলাদেশের সমুদ্রে চলে গিয়ে ওদেশের পুলিশের হাতে বন্দি হয়েছিলেন এবং শুনলাম প্রচুর পিটুনি খেয়ে ফিরে এসেছেন- সেটাকে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের অংশ হিসেবে দেখব কি না জানি না। হলেও ‘বৈধ’ আর দুই দেশের পরস্পরের ইচ্ছাধীন আর অভিপ্রেত আদান-প্রদানের উদাহরণ হিসেবে নিশ্চয়ই নয়।
বর্ণমালার শরীরে প্রতিরোধের আগুন জ্বালানো কবি
আমাদের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে শ্রেষ্ঠ অর্জন আর কিছুই নেই। স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমকে দুর্দান্ত ও নান্দনিকরূপে কবিতায় ফুটে তুলে দেখিয়ে দিয়েছিলেন কবি শামসুর রাহমান। যেসব কবিতার অবস্থান মানুষের মুখে মুখে, স্লোগানে, প্ল্যাকার্ডে, দেয়াল লিখনে, ব্যানারে, ফেস্টুনে। যেমন ‘স্বাধীনতা তুমি/রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।’ অথবা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা/ তোমাকে পাওয়ার জন্যে/আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?/আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?/তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা, সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো/সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর’ কিংবা ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’ কবিতাগুলো উচ্চারণ করলে বোঝা যায়, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-আবেগ কতটা গভীর কবি শামসুর রাহমানের। সেসবের রূপ কবি দিয়েছেন তার কবিতায়।
মাস্টার রূপেই আমি সফল, লেখক রূপে নই
প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার (১৮ আগস্ট ১৯৩৬-১৩ আগস্ট ২০২৫) জ্ঞানসাধনায় ঋদ্ধ পুরুষ। যিনি আপন মাটিতে দাঁড়িয়ে দেখেন সমগ্র পৃথিবীর সূর্যোদয়। ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু-দর্শন’ তার সৃষ্ট আত্মজৈবনিক বই পাঠ করে আমরা সহজেই জানতে পারি কী করে তিনি যতীন সরকার হয়ে উঠলেন। যতীন সরকার ‘দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদী’ দর্শনের অনুসারী। আর সে চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে তার ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’ বইয়ে। যদিও তিনি মনে করেন তার ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন’ বইটিতেই তিনি ভিন্নধর্মী ও স্বতন্ত্র চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। পঞ্চাশ বছর বয়সে ১৯৮৫ সালে যতীন সরকারের প্রথম বই ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয়। সব ধরনের বই মিলিয়ে এ পর্যন্ত তার প্রায় অর্ধশতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) এই মহান চিন্তাবিদ মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুর অনেক আগে একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে ছিলেন কবি শিশির রাজন। সেই সাক্ষাৎকারটি যতীন সরকারের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।
আমাদের মাহফুজা আপা, স্মৃতিতে-স্মরণে
এ লেখা যখন লিখছি, তখন এ কথাই সত্য যে, আমাদের শ্রদ্ধেয় মাহফুজা খানম আপা নিরন্তরের পথে যাত্রা করেছেন। জন্ম নিলে মরতে হবে- এটাই সত্যি; কিন্তু কিছু মানুষ জন্ম নিয়ে শুধু ঘরে বসে থাকেন না। তারা তাদের কাজ দিয়ে দাগ রেখে যান। যে দাগের কারণে তাকে মনে রাখতেই হয়।
কূটনীতির গোলক ধাঁধায় বাংলাদেশ!
কূটনীতির গোলক ধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশের কথা বলি কেন, বিশ্ব রাজনীতিই এখন গোলক ধাঁধার মধ্যে। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে যে বাড়তি শুল্ক আরোপের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন, সেটা যুক্তরাষ্ট্রকেই বিশ্ব রাজনীতিতে একঘরে করে ফেলার বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছে। আর সে ক্ষেত্রের ভেতরেই বিশ্ব কূটনীতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। অবশ্যই বাংলাদেশ তার বাইরে নয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অননুমোদিত ইশতেহার
ইশতেহার যদি মানুষের নীতিগত অবস্থানকে প্রকাশ করে, কীভাবে একটি সমস্যার সমাধান করবে তার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দেয় কিংবা কীভাবে এগিয়ে যাবে তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করে যা জনগণের অথবা সে সময়ের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেয় তবে আবু সাঈদের (২০০১-১৬ জুলাই ২০২৪) কথাগুলোর মধ্যে কী ইশতেহারের প্রাণ ভোমরা নেই? দেখি কি লিখেছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শামসুজ্জোহাকে (১৯৩৪-১৯৬৯) উদ্দেশ্য করে বেরোবির শিক্ষার্থী আবু সাঈদ স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যারা ছিল, সবাই তো মরে গেছে; কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি, আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।
এক বছরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদৌ ‘সরকার’ হয়ে উঠতে পেরেছে কি?
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির ঠিক দুদিন আগে গত ৩ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণার জন্য আয়োজিত সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির একাধিক নেতার বক্তব্যে গত এক বছরে নানা ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তিজনিত নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশিত হয়। অথচ এনসিপিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান স্টেকহোল্ডার বা অংশীজন হিসেবে মনে করা হয়। সরকার নিজেও বিভিন্ন সময় বুঝিয়ে দিয়েছে যে, এই দলটির প্রতি তাদের বিশেষ পক্ষপাত বা সমর্থন রয়েছে। এর একটি কারণ হয়তো এই যে, এনসিপি গঠিত হয়েছে এমন কিছু তরুণের উদ্যোগে যারা জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে ছিলেন।