ড মুহাম্মদ ইউনূস
সংস্কার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করুন
‘সংস্কার সংস্কার সংস্কার’- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এভাবে তিনবার উচ্চারণ করে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তিনি সবাইকে সংস্কার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে আহ্বান জানিয়েছেন, সংস্কার নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা-পর্যালাচনা করতে তিনি বারবার অনুরোধ করেছেন। সংস্কারের তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে তিনি চটজলদি অনেক সংস্কার কমিশনও গঠন করে দিয়েছিলেন। কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে, কয়েকটি কমিশনের সুপারিশের ওপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামতও নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এই মতামতের ভিত্তিতে তৈরি হবে ‘জুলাই চার্টার’, যাতে থাকবে রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষর; কিন্তু এসব কর্মকাণ্ড অবাস্তব ও বাস্তবায়ন অযোগ্য স্বপ্ন। বাম আর ডানের আদর্শের পার্থক্য উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরুর দূরত্বের সমান। তাই ‘জুলাই চার্টার’ দিয়ে যে সংস্কার হবে তা হবে খুবই সীমিত, তা দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের উদ্ভব ঠেকানো যাবে না।
শহীদ আবু সাঈদ: ব্যর্থ নও তুমি, ব্যর্থ নয় তোমার আত্মার চিৎকার
আবু সাঈদ ২০০১ সালে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মকবুল হোসেন, মাতা মনোয়ারা বেগম। আবু সাঈদের ৬ ভাই ও ৩ বোন। ৯ ভাইবোনের মধ্যে আবু সাঈদ সবার ছোট। আবু সাঈদ স্থানীয় জাফরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর স্থানীয় খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০১৮ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরে তিনি ২০২০ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ২০২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। টগবগে তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তাকে ঘিরে তার এলাকার মানুষ স্বপ্ন দেখতেন। সেই সাঈদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া অসহ্য কষ্টের।
৫০ হাজার কিটের ছাড়পত্র নিয়েছে স্টারলিংক, সংযোগ সক্রিয় ৫৯৪
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা শুরুর ঘোষণা দিতে যাচ্ছে মার্কিন উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের সহযোগী কোম্পানি স্টারলিংক। ইতোমধ্যে দেশে ৫৯৪টি কিটের মাধ্যমে স্টারলিংক ইন্টারনেট সংযোগ সক্রিয় করেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে ৫০ হাজার ইন্টারনেট সংযোগের কিট আমদানির ছাড়পত্র পাওয়ার পর এই সেবা সম্প্রসারণের কার্যক্রম আরও জোরদার হয়েছে।
কৃষি খাতের পুনর্মূল্যায়ন ও কৃষি কমিশন গঠন প্রসঙ্গে
উৎপাদনে আধুনিক উপকরণ ব্যবহার ও ভূমি উন্নয়নে এদের আগ্রহ থাকে কম। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রাপ্তি ও কৃষি যন্ত্র সংগ্রহে এদের প্রবেশাধিকার কম। ফলে তাদের প্রতি ইউনিট জমির উৎপানে প্রবৃদ্ধির হার কম। অপরদিকে বড় ও মাঝারি কৃষকগণ ক্রমাগতভাবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষাবাদে। তারা ক্ষয়িষ্ণু কৃষক। চাষাবাদে তাদের বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে তাদের উৎপাদন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করার এখতিয়ার যদি না থাকে তাহলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে
চট্টগ্রাম বন্দরের ৯টি টার্মিনালের মধ্যে একটির পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার যে উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে তার সমালোচনা এখন তুঙ্গে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্বের তুলনায় পিছিয়ে থাকা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার ভার পৃথিবীর সেরা কোনো কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিতে হবে এবং এই ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা মানুষকে বোঝাতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে বিদেশি কোম্পানিও নির্বাচিত করে ফেলেছে- ডিপি ওয়ার্ল্ড, আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি কোম্পানি। এই কোম্পানির সিইও বা প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে দেশে-বিদেশে ড. ইউনূসের দুইবার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং তাদের প্রস্তাবিত কাজ হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের জট কমানো, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করা এবং বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র গেটওয়ে হিসেবে এর কার্যকারিতা বাড়ানো।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও কেন নাগরিক উদ্বেগ বাড়ছে!
আমরা, সাধারণ নাগরিকগণ এই প্রথমবারের মতো একটি গণভোটবিহীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি- যা সংবিধান অনুযায়ী হয়তো কিছুটা বিতর্কিত; কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে একে প্রয়োজনীয় বলেই মেনে নিতে হয়েছে। কারণ, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ কখনোই একটি পূর্ণাঙ্গ, কার্যকর ও টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। বরং দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতালিপ্সা, দুর্নীতি, গুম-খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা দেশকে এক গভীর আস্থাহীনতার খাদে ঠেলে দিয়েছে।
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানো কতটা সহজ?
যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে- সেই দলটি দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছর পর গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হলো- তার পেছনে অন্তত বিশটি কারণ আছে। এখানে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বা বিদেশি ইন্ধনের অভিযোগ যতই থাকুক, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আওয়ামী লীগ যে দুর্নীতি, দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল- সেটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।
সংবাদ বন্ধ এবং সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতির ‘অনিবার্য কারণ’
৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের ঠিক চার দিন আগে গত ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের তিনটি টেলিভিশন চ্যানেলে যা ঘটেছে- তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সরকারের সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে যেমন প্রশ্নের মুখে ফেলেছে, তেমনি সাংবাদিকের প্রশ্ন করার স্বাধীনতা, এখতিয়ার ও সীমারেখার বিষয়টিও সামনে এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার এক মাস পরে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি আপনারা মন খুলে আমাদের সমালোচনা করুন। আমরা সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিডিয়া যাতে কোনোরকমের বাধাবিপত্তি ছাড়া নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারে, সেজন্য একটি মিডিয়া কমিশন করার ইচ্ছা সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন আছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর কতটা তাৎপর্যপূর্ণ
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইনে তাদের নিজেদের ভিটামাটিতে ফিরে যেতে পারে সে ব্যাপারে জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি রোহিঙ্গারা যত দিন বাংলাদেশে থাকবে, ততদিন যাতে তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকে সে বিষয়ে নিশ্চয়তা চান। জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং তাদের জন্য সহায়তা সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেবেন বলে জানান। তিনি কক্সবাজারে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী মধ্যে আমি দেখিনি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করতে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী এই সংগঠন শিগগিরই একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। দল গঠনের এই উদ্যোগকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি ছাত্র আন্দোলন মনে হলেও, বাস্তবে এর রাজনৈতিক অভিসন্ধি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।