বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বঙ্গবন্ধুরই লেখা
আবুল কাসেম ফজলুল হক। বাংলা ভাষার প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, সমাজ বিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। বর্তমানে তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক কয়েকটি বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর এডিটরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।
বিএনপি কেন পিআরের বিরুদ্ধে?
পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে বিএনপি হেরে যাবে আর জামায়াত ক্ষমতায় আসবে- এরকম ধারণা হয়তো অনেকের মনে আছে। সত্যি কি তা-ই এবং বিএনপি কি এ কারণেই পিআর পদ্ধতির বিরোধী?
বিভুরঞ্জন সরকারের বিদায়ই কি শেষ বিদায়, নাকি তারপরও আছে!
২১ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকার নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পরদিন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার মেঘনা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নিখোঁজের সংবাদ প্রথমে পাই লেখক লিনু হকের ফেসবুক পোস্ট থেকে, কিছুক্ষণ পর দেখলাম সারা ফেসবুকে তার নিখোঁজের সংবাদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ক্লাসমেট ও রাজনৈতিক আদর্শের সতীর্থ জীবন কৃষ্ণ সাহাকে ফোন করলাম; কিন্তু তিনি বিভুরঞ্জন সরকারের বাসা কোথায় তা বলতে পারলেন না। বুঝলাম, সমাজে বিভুরঞ্জন সরকারের প্রয়োজন অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সরকার বলা যায় কি?
২o২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান। এটাকে অনেকে বিপ্লব বলার চেষ্টা করেন; কিন্তু এটাকে বিপ্লব বলার কোনো সুযোগ নেই, এটা একটা স্রেফ গণঅভ্যুত্থান। গণঅভ্যুত্থানের শুরুটা হয়েছিল চাকরিক্ষেত্রে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন করতে গিয়ে সরকার জুলাই ম্যাসাকার সংঘটিত করে। ফলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনটি প্রথমে ‘নয় দফা’ এবং পরবর্তীতে ‘এক দফা’র আন্দোলনে রূপ নেয়। এই গণঅভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু এবং একটি দালিলিক এপিটাফ
সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকার বাংলাদেশের সৎ সাংবাদিকদের জন্য একটি বেদনার বার্তা রেখে গেছেন, যেটাকে বলা যেতে পারে তার নিজের লিখে যাওয়া এপিটাফ। যে এফিটাফ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে পেশাদার সাংবাদিকতার দৈন্যদশার নিদারুণ দলিল।
সর্বদলীয় ঐক্য করে পাথর খাওয়া শেষ করে টিলাও খেতে হবে!
গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হওয়া পাথর লুট বিগত এক বছরে গণহারে বিরামহীনভাবে চলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এই লুটের কাহিনি প্রচার হলেও সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙেনি। ঘুম ভেঙেছে পাথর লুট শেষ হওয়ার পর। লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে যৌথবাহিনী ১৩ আগস্ট থেকে অভিযানে নামে এবং পাথরবোঝাই ১৩০টি ট্রাক জব্দ করে। জেলা প্রশাসকের বক্তব্য অনুযায়ী জব্দ করা পাথরগুলো যেসব এলাকা থেকে লুট হয়েছে সেসব এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হবে, অবশ্য এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। পাথর হচ্ছে খনিজসম্পদ, তাই এই পাথরের ওপর কর্তৃত্ব খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের, পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদান বা উত্তোলন বন্ধ করার ক্ষমতা খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। তবে পাথর উত্তোলনে পরিবেশের ক্ষতি হলে পরিবেশ মন্ত্রণালয় তাতে আপত্তি উত্থাপন করতে পারে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন জরিপের সত্য-মিথ্যা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দেবেন ১২ শতাংশ মানুষ। জামায়াতকে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিকে ভোট দেবেন ২ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ। আর যদি আওয়ামী লীগ ভোটে অংশ নিতে পারে তাহলে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ মানুষ তাদের ভোট দেবেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি পাবে শূন্য দশমিক ৩০ এবং অন্যান্য ইসলামী দল শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ ভোট। সম্প্রতি ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) একটি জরিপে উঠে এসেছে এই চিত্র। এতে গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণি-পেশার ৫ হাজার ৪৮৯ জন মানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে।
গুপ্ত রাজনীতির অপচর্চা
বাংলার রাজনীতিতে যেন নতুন এক নাট্যমঞ্চের জন্ম হয়েছে। একসময় রাজনীতি মানেই ছিল প্রকাশ্য লড়াই- কে কত জোরে স্লোগান দিতে পারে, কে কত বড় মিছিল নামাতে পারে, কে কতটা উঁচু কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ কিংবা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে জনতাকে মাতিয়ে তুলতে পারে। তখন রাজনীতিকরা পরিচয় লুকাতেন না, বরং গর্ব করতেন- ‘আমি অমুক দলের কর্মী, আমি অমুক মতের অনুসারী।’ কিন্তু সময় বদলেছে। সেই সরল ঘোষণা আজ সেকেলে মনে হয়। রাজনীতির মঞ্চে এখন নতুন ঢেউ- প্রকাশ্যে যা নয়, আড়ালে সেটাই আসল; নাম তার গুপ্ত রাজনীতি।
প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করুন
পলিটিক্স গ্রন্থে রাজনীতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে অ্যারিস্টটল বলেছেন, রাজনীতি হচ্ছে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিভিন্ন পক্ষের সন্ত্রাসবিহীন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান। বহু দ্বন্দ্ব-বিরোধ, রক্তপাত, সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে মানুষের এই সভ্যতা একটি সুষ্ঠু-সুন্দর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। অনেক তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়েই প্রাচীন গ্রিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে আধুনিক ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচনা হয়েছে। পৃথিবীতে এখন যতগুলো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আছে তার মধ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই সবচেয়ে বেশি কাম্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে আসলে আর কিছুই থাকে না।
প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শেখ মুজিব
শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্য সাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের লোকদেরও কেউ কেউ তার অবস্থানের প্রতি নমনীয় ছিলেন। যে জন্য গণহত্যা শুরুর আগে পূর্ববঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্তব্যরত সাহাবজাদা ইয়াকুব খান পদত্যাগ করেন এবং নৌবাহিনীর এস এম হাসানকে সরিয়ে দিয়ে টিক্কা খানকে গভর্নর ও সামরিক শাসক হিসেবে আনা হয়। টিক্কা খান ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ উপাধি পেয়েছিলেন; যে উপাধির তিনি অযোগ্য ছিলেন না এবং পূর্ববঙ্গেও তিনি এসেছিলেন ‘কসাই’ হিসেবেই।