Views Bangladesh Logo
author image

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

  • ইমেরিটাস অধ্যাপক

  • থেকে

ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অসাংবিধানিক সরকার কখনোই গণতান্ত্রিক হতে পারে না
অসাংবিধানিক সরকার কখনোই গণতান্ত্রিক হতে পারে না

অসাংবিধানিক সরকার কখনোই গণতান্ত্রিক হতে পারে না

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথাটি বার বার নানাভাবে আসে। তা ছিল কঠিন দুঃসময়। আমরা প্রত্যেকেই ভীষণ বিপদে ছিলাম। প্রত্যেকটি দিন, প্রতিটি রাত এমনকি মুহূর্তও ছিল আতঙ্কের। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়েই ভাবতাম, বড়জোর আপনজনদের বিষয়ে এর মধ্যেও আমরা ব্যস্ত ছিলাম। খবরের আদান-প্রদান করি, কোথায় কী ঘটছে জানতে চাই, রেডিও শুনি, মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করি আর যারা যুদ্ধে ছিলেন তাদের তো মরণপণ অবস্থা। আমাদের সবার জন্য কাজ ছিল। বিপদ আমাদের তাড়া করছিল; কিন্তু স্বপ্নও ছিল। সামনে একটি স্বপ্ন ছিল। সমষ্টিগত এবং মস্তবড় স্বপ্ন। আমরা আশা করতাম হানাদারদের তাড়িয়ে দেব, আমরা মুক্ত হব আর সেই লক্ষ্যে আমরা কাজও করতাম। যে যেভাবে পারি কাজ করতে চাইতাম।

প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শেখ মুজিব
প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শেখ মুজিব

প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শেখ মুজিব

শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্য সাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের লোকদেরও কেউ কেউ তার অবস্থানের প্রতি নমনীয় ছিলেন। যে জন্য গণহত্যা শুরুর আগে পূর্ববঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্তব্যরত সাহাবজাদা ইয়াকুব খান পদত্যাগ করেন এবং নৌবাহিনীর এস এম হাসানকে সরিয়ে দিয়ে টিক্কা খানকে গভর্নর ও সামরিক শাসক হিসেবে আনা হয়। টিক্কা খান ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ উপাধি পেয়েছিলেন; যে উপাধির তিনি অযোগ্য ছিলেন না এবং পূর্ববঙ্গেও তিনি এসেছিলেন ‘কসাই’ হিসেবেই।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি

পিতা চলে গেলেই পিতৃতান্ত্রিকতা যে বিদায় হয়, তা নয়। পিতৃতান্ত্রিকতার অবসান ঘটানোর জন্য একটি সামাজিক বিপ্লব আবশ্যক। আমাদের দেশে সে বিপ্লব আজও ঘটেনি। মানুষের সঙ্গে মানুষের অধিকারের সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি; ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণও যে সহসা ঘটবে এমন আশা নেই। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর নিশ্চয়তা-প্রাপ্তি দূরের সুখস্বপ্ন বটে। আর সামাজিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যেহেতু ব্যক্তি মালিকানার জায়গাতে সামাজিক মালিকানার প্রতিষ্ঠা ঘটেনি, তাই বৈষম্য উৎপাদনের প্রকৃত ক্ষেত্রটি অক্ষুণ্নই রয়ে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ব্যর্থতা এবং তারপর...
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ব্যর্থতা এবং তারপর...

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ব্যর্থতা এবং তারপর...

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মৌলবাদী শক্তির উত্থানের পেছনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ব্যর্থতা একটি কারণ তো বটেই, তারা তো কোনো কিছু দিতে পারল না। তরুণদের ভবিষ্যতের স্বপ্নটা দেখাতে পারলেন না। স্বপ্ন তো বাস্তবায়িত হলো না, এটা এক। দ্বিতীয় হচ্ছে যে, বেকারত্ব বেড়েছে, দারিদ্র্য বেড়েছে। যখন মানুষ বেকার হয়, দরিদ্র হয় তখন সে আশ্রয় খোঁজে, ভরসা খোঁজে; কিন্তু এখানে আশ্রয় এবং ভরসা সমাজ ও রাষ্ট্র তাকে দিচ্ছে না। মানুষ নিজেই নিজের জন্য সংগ্রাম করছে, বেকার থাকছে, হতাশায় ভুগছে, সে সুবিচার পাচ্ছে না, আশ্রয় পাচ্ছে না। সুবিচারের জন্য, আশ্রয়ের জন্য, সে তখন ধর্মের কাছে যায়। এই আশায় যে ধর্মে একালে না হলেও পরকালে একটা বিচার পাবে।

বাংলাদেশের মূল সমস্যা হলো বৈষম্য
বাংলাদেশের মূল সমস্যা হলো বৈষম্য

বাংলাদেশের মূল সমস্যা হলো বৈষম্য

আমাদের যত যত সমস্যা ও ব্যর্থতা তার পেছনে যে দারিদ্র্য রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে কী? যেমন, পরিবার পরিকল্পনা। ছোট পরিবার সুখী পরিবার-এটা সত্য; কিন্তু তারও চেয়ে বড়ো সত্য হচ্ছে ধনী পরিবার মানেই ছোট পরিবার। পরিবার ছোট হলেই যে সুখী হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অসুখ-বিসুখ, ঝগড়া-কলহ, মনোমালিন্য, অধিক আদরে ছেলে-মেয়ে নষ্ট-ইত্যাদি সমস্যা থাকতেই পারে। থাকেই। অনেকে তো বিয়েই করতে পারেনি, নিজেই নিজের পরিবার এবং পরিবার পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণ থেকে আদর্শ বটে; কিন্তু তেমন পুরুষ কিংবা মহিলা, বিশেষ করে মহিলা, নিজেকে আদর্শ মানুষ কিংবা স্বর্গসুখ ভোগকারী ব্যক্তিত্ব বলে মনে করেন এমনটা মনে হয় না।

সাহিত্যের রাষ্ট্রবিরোধিতা
সাহিত্যের রাষ্ট্রবিরোধিতা

সাহিত্যের রাষ্ট্রবিরোধিতা

কবিতা না লিখলেও প্লেটো যে একজন কবি ছিলেন তা তার গদ্য রচনার পরতে পরতে প্রমাণিত। উপমায়, রূপকে, শব্দ চয়নে ওই দার্শনিক তার অন্তর্গত কবির কল্পনা ও সৌন্দর্যবুদ্ধি উভয়কেই ব্যবহার করে গেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে কবিতার গুণ ও আবেদন তিনি যে জানতেন তাতেও সন্দেহ করবার অবকাশ নেই; কিন্তু তিনি তার আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের জন্য কোনো জায়গা রাখেননি। জায়গা রাখবেন কি, নির্দেশ দিয়েছেন তাদেরও বের করে দেবার জন্য। কবিদের সম্মান দেয়া হবে, মালা ও সুগন্ধী দিয়ে তাদের সজ্জিত করা যাবে; কিন্তু তাদের সবিনয়ে বলতে হবেঃ মহাশয়বৃন্দ, আপনাদের জন্য আমাদের রাষ্ট্রে কোনো স্থান নেই।