বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে
বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমেই জটিল, দ্বিধাগ্রস্ত ও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে উঠছে। নেতৃত্বহীন, আদর্শশূন্য ও নৈতিকতার অবক্ষয়ই এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটের অনিবার্য রূপ।
বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমেই জটিল, দ্বিধাগ্রস্ত ও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে উঠছে। নেতৃত্বহীন, আদর্শশূন্য ও নৈতিকতার অবক্ষয়ই এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটের অনিবার্য রূপ।
কিছুদিন আগের কথা- বামপন্থিরা জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ করে ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’-এর ব্যানারে। কর্মসূচির মূল স্লোগান ছিল- ‘মা মাটি মোহনা, বিদেশিদের দেব না’। অতীতেও বামপন্থিরা জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এসব আলোচনা করতে বিশদ লেখা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এককভাবে আওয়ামী লীগের হাতে ছিল- এ কথা অনেকবার বলা হয়েছে। এটিকে আপনি চাইলে ‘আওয়ামী বয়ান’ বলতে পারেন; কিন্তু এটা ইতিহাসের একমাত্র সত্য নয়। প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল মূলত আওয়ামী লীগের নেতাদের দিয়ে, তবে সেই সরকারের পাশাপাশি ছিল একটি উপদেষ্টা কমিটিও, যার প্রধান ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আরও ছিলেন কমরেড মণি সিংহ, মোজাফফর আহমেদ এবং কংগ্রেস নেতা মনোরঞ্জন ধর। একমাত্র মনোরঞ্জন ধর বাদে বাকি সবাই ছিলেন বামপন্থি। এ থেকেই স্পষ্ট হয়- বামপন্থিদের অবস্থানকে অবহেলা করা ইতিহাসের প্রতি অবিচার।
রাজধানীর পল্টনে একজন সাবেক ছাত্রনেতাকে জনসমক্ষে অপদস্থ করা হলো। তাকে মারধর করা হলো ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যায়িত করে। অপরাধের স্বরূপ অস্পষ্ট; কিন্তু শাস্তি তাৎক্ষণিক- রাস্তায়, জনতার চোখের সামনে।
বাংলাদেশের নির্বাচনি রাজনীতি এখন এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যেখানে সংবাদ পড়া আর কৌতুক শোনা প্রায় একই অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন কবে হবে? বলা যায় এ নিয়ে 'ট্যাগ অব ওয়ার' চলছে রাজনৈতিক দল, বিশেষত বিএনপি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে। কেউ বলছেন, এগুলো রাজনৈতিক নাটক। কেউ বলছেন, এটি গণতন্ত্রের শেষ স্তবক। কিন্তু যেটাই বলা হোক না কেন, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একজন সাধারণ নাগরিকের মনে যা গভীরভাবে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, তা হলো: ভোটে কি আদৌ কিছু বদলায়?
রাজনীতিতে যে অস্পষ্টতা, দ্বিধা ও উত্তেজনা জমে উঠছে, তা কেবল ঘটনার সমাহার নয়- এ এক সময়চিত্র। তা আমাদের শাসনব্যবস্থার গভীরে জমে থাকা দুর্বলতা, বৈপরীত্য ও অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ। সরকার পরিবর্তনের প্রায় এক বছর হতে চলছে, অথচ একটি স্পষ্ট রূপরেখা, সময়সীমা, কিংবা দায়িত্ববোধপূর্ণ রাজনৈতিক ভাষ্য নির্মাণ করতে পারিনি। বরং স্পষ্ট হয়ে উঠছে অনিশ্চয়তা, দায়িত্বহীনতা ও অস্বচ্ছ চর্চার এক জটিল চিত্র। ঘটনাবলির পরম্পরা দেখে অনেকে বলছেন, যেন এটি একটি অদৃশ্য পরিকল্পনার অংশ, যার উদ্দেশ্য পানি ঘোলা করে স্বার্থসিদ্ধি। বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো না কোনো শক্তি এই ঘোলা পানিকে তাদের হাতের খেলা বানাতে চাচ্ছে বা এ পরিকল্পনার অংশীজন হচ্ছে- এতে কোনো সন্দেহ আছে? যে সরকারকে মনে করা হয়েছিল সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী, সেই সরকার আজ ১০ মাস পূর্ণ হতে না হতেই দুর্বলতার লক্ষণ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে। নীতিগত স্পষ্টতা নেই, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিভ্রান্তি, এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব জনমনে প্রশ্ন তুলেছে- এই সরকার কি আদৌ জানে কোথায় যাচ্ছে?
শ্রমিকের হাতুড়ির আঘাতে সভ্যতা এগিয়েছে। শ্রম দিলেই শ্রমিক- এটা যেমন ঠিক, আবার শ্রমিক বলতে প্রথমে শিল্প শ্রমিকের ধারণা চলে আসে; কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের বিস্তৃতি আরও অনেক ব্যাপক। কেননা পৃথিবীর সব মানুষই কোনো না কোনো কাজ করে আর যে কোনো কাজ করতে গেলেই প্রয়োজন হয় শ্রমের। এই নিরিখে পৃথিবীর সব মানুষকেই শ্রমিক বলা যায়। আবার মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শ্রমিক শ্রেণি হলো সবচেয়ে আধুনিক এমন এক শ্রেণি, যারা সমাজবিপ্লবে নেতৃত্ব দেবে। কার্ল মার্কস কারখানার শ্রমিকদের বিপ্লবী শ্রেণি হিসেবে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন। কেননা তারা শৃঙ্খলমুক্ত স্বাধীন শ্রমিকশ্রেণি হিসেবে দাস ব্যবস্থার বিপরীতে উঠে এলেও তারা কারখানার এক ছাদের তলায়, একই স্বার্থে একটি সংঘটিত শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।