Views Bangladesh Logo

‘গণমাধ্যম পুড়ে গেলে বাকস্বাধীনতা ছাই হয়ে যায়’

গুলিবিদ্ধ হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টা দিকে মারা যান ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। এই খবর শোনার কিছুক্ষণের মধ্যে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ জনতা। তাদেরই একটি অংশ তখন চলে আসে কারওয়ান বাজারের দিকে। এসেই প্রথমে দৈনিক প্রথম আলো ও এরপর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে ডেইলি স্টার-এর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় কার্যালয় দুটি। এসময় নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলার করে বিক্ষুদ্ধরা। হামলার শুরু হলে প্রথম আলোর সাংবাদিক ও কর্মীরা প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত কার্যালয় ত্যাগ করেন। আর ডেইলি স্টারের সাংবাদিকরা আশ্রয় নেন ছাদে। প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো সংবাদপত্রের ছুটি বাদে এক দিনের জন্য প্রথম ও ডেইলি স্টারের প্রকাশনা বন্ধ থাকে। এই ঘটনায় সারা বিশ্বে ক্ষুন্ন হয় দেশের ভাবমূর্তি। প্রশ্নে মুখে পরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। বিশিষ্টজনদের মতে, দেশের শীর্ষ দুটি পত্রিকা অফিস আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতাকে গলা টিপে হত্যা করার সামিল। আসলে গণমাধ্যম পুড়ে গেলে ছাই হয়ে যায় বাকস্বাধীনতা।

এ ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলা ও ইংরেজীতে প্রকাশিত দেশের শীর্ষ দুটি পত্রিকা প্রথম ও ডেইলি স্টারের অফিস এখন ধ্বংসস্তুপ। এটা যেকোনো রাষ্ট্রের জন্যই ভিষণ বিপজ্জনক বিষয়। ওই ঘটনা সরাসরি বাকস্বাধীনতাকে পুড়ে ফেলার সামিল। এখানে রাষ্ট্রও তার দায় এড়াতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে মুক্তগণমাধ্যমের ধারাই ধ্বংশ হয়ে যাবে।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি। দেশের শীর্ষ দুটি পত্রিকা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা এবং পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি ও ভয়ংকর আঘাত। এটা দেশের জন্য অমঙ্গল। সংবাদমাধ্যমে এমন হামলা দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার ও নিয়ন্ত্রণহীন রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা বলেই মনে হচ্ছে।’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা ও পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাকে বর্বর, পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ হামলা উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ ভিউজ বাংলাদেশেকে বলেন, ‘যারা গণমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেয়, অফিস ভাঙচুর করে কিংবা একজন সিনিয়র সম্পাদকের ওপর হামলা চালায়, তারা আদৌও গণতন্ত্রের ন্যূনতম চেতনা ধারণ করে না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করে কেউ গণতন্ত্রের ধারক হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক সমাজ ভয়ভীতির কাছে কখনো মাথা নত করে না এবং ভবিষ্যতেও সত্য প্রকাশে নীরব থাকবে না।’

এ ব্যপারে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় সরকার গভীর উদ্বিগ্ন। আমি ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এভাবে নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয় তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকার গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। যারা ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করেছে বা করবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এদিকে, দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয় পুড়িয়ে ফেলা ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদনুরুল কবীরকে প্রকাশ্যে হেনস্তার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। তিনি বলেছেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা মানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি ভয়াবহ মুহূর্ত ছিল। আমরা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না।’ এছাড়াও দেশ-বিদেশের বহু সংগঠন ও গণমাধ্যম ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অপরাধিদের বিচার দাবি করেছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ