নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন আমজনতার তারেক
‘পেশি শক্তি নেই, অনশনই আমাদের একমাত্র প্রতিবাদের ভাষা’
চোখের নিচে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুর দাগ, নেই স্বাভাবিকভাবে কথা বলার শক্তি, চলছে স্যালাইন। এমন অবস্থায় নির্বাচন ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেছে নিবন্ধন না পাওয়া আমজনতার দলের সাধারণ সম্পাদক বগুড়ার সন্তান তারেক রহমানকে। ক্ষীণ কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘আমাদের পেশী শক্তি নাই। এজন্য আমাদের দলকে অন্যায়ভাবে নিবন্ধন দেয়নি ইসি। তাই এখানে বসেই আমৃত্যু এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যেতে চাই।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দল নিবন্ধনের তালিকায় নিজেদের ‘আমজনতার’ দল না থাকায় ইসির প্রধান ফটকের সামনে আমরণ অনশনে রয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান। অনশনের ১২৯ ঘণ্টায়, তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটেছে, চলছে স্যালাইন। তবু দাবিতে অটল তারেক রহমান। দলের নিবন্ধন না পাওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলেও জানান।
রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অনশনরত অবস্থায় রয়েছেন আমজনতার দলের সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান। তার হাতে স্যালাইন লাগানো। তাকে ঘিরে রয়েছেন বহু মানুষ। কেউ সাংবাদিক, কেউ তার নিজ দলের সদস্য, অনেক উৎসুক জনতা এবং বেশ কয়েকজন পুলিশ। এসময় ঠিকভাবে কথা বলতে পারছিলেন না তারেক রহমান। তার পাশে বসে থাকা আম জনতা দলের সভাপতি গোপালগঞ্জের বাসিন্দা মশিউজ্জামান কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে।
মশিউজ্জামান নিজ দলের কাগজপত্র দেখিয়ে বলেন, ‘দেখেন ভাই, সব থাকার পরও আমাদের দলকে নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে না। আমাদের তো পেশি শক্তি নেই, সরকারের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা নেই। তাই নিবন্ধনের দাবিতে এখনে আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক তারেক আমৃত্যু অনশনে আছেন। আসলে এভাবে রাস্তায় অনশন করা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার।’
এ সময় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইসির পক্ষ থেকে সচিবের পিএস একবার এসেছিলেন অনশন ভাঙ্গাতে। আমি তাকে বলেছি, আপনারা যে চিঠিটা দিয়েছেন, এটা নিজেরা পড়েছেন? তিনি বলেন, পড়েন নাই। তারপর যখন চিঠি থেকে একটা একটা করে প্রশ্ন আমরা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরলাম, তখন তিনি একটা কথাও বলতে পারলেন না। তিনি বললেন, আমি ওপরে গিয়ে স্যারদের সঙ্গে আলোচনা করে জানাচ্ছি। তিনি গেছেন বৃহস্পতিবার, আর আজ রোববার দুপুর গড়িয়ে বিকেল। এখনো ফিরে এসে কিছু জানাননি।’
একপর্যায়ে ক্ষীণ কণ্ঠে তারেক রহমান বলেন, ‘ইসি ভেবেছিল আমি অনশনে বসছি। দু-এক দিন পরে বেইজ্জত হয়ে অনশন ভেঙে চলে যাবো। নিবন্ধন পাবো না। আমি স্পষ্ট করতে চাই, আমার দলের সহযোদ্ধারা এতদিন ধরে ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। তারা এখন এসে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না, এটা আমি মানতেই পারছি না। তাদের কাছে আমি কী জবাব দেবো? কোনও জবাব দিতে পারি না, তাদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। আমরা কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবো না? আমরা যখন ইসির কাছে যাচ্ছি, তারা ঘোরাচ্ছে, টালবাহানা করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। পেছনে সিসি ক্যামেরা আছে, নির্বাচন কমিশনের লোকজন দেখলে বুঝতে পারবেন যে আমি ১২৯ ঘণ্টার মধ্যে এক ফোঁটা পানিও খাইনি।’
এদিকে, আজ বিকেলে অনশনরত তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। এসময় তিনি ইসিকে আমজনতার দলসহ সম্প্রতি যে সকল দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে তাদের নথি পুনঃযাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে দুপুরে যুবদল ও শ্রমিক দলের নেতৃবৃন্দ দেখা করেন তারেকের সঙ্গে। এছাড়া তার সঙ্গে দেখা করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীও। গত বৃহস্পতিবার অনশনরত তারেক রহমানের প্রতি পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেছিলেন, ‘তারেক রহমান যে রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, সেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন অবশ্যই তার প্রাপ্য।’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) চূড়ান্ত পর্যালোচনা শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিকে নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন দাবি-আপত্তি চেয়ে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। এরপর দাবি-আপত্তি না এলে তা নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত নিবন্ধন দেয়া হবে। সেদিন দল নিবন্ধনের তালিকা থেকে ছিঁটকে পড়ে তারেক রহমানের 'আমজনতার দল'। এরপর বিকেল থেকেই তারেক রহমান আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মূলক ফটকে অনশনে আছেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে