Views Bangladesh Logo

আরপিও-এর নজিরবিহীন সংশোধনীতে নির্বাচনের হাওয়া উত্তপ্ত

বিগত ৭টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর কিছুটা সংশোধনী আনা হয়েছিলো। কিন্তু এবার অন্তর্বর্তীকালিন সরকার যেসব সংশোধনী এনেছে তা নজিরবিহীন। বিশেষ করে আরপিও-এর ২১ ধারার বিষয়ে জামায়াত ও এনসিপির প্রস্তাব গ্রহণ এবং বিএনপিসহ আরো কিছু দলের প্রস্তাব নাকচ করে ব্যাপকভাবে করা এবারের আরপিও সংশোধনী নিয়ে উত্তপ্ত এখন নির্বাচনের হাওয়া। দীর্ঘদিনের জোটবদ্ধ একক প্রতীকে নির্বাচনের পদ্ধতি বাতিলের কারণে ক্ষুদ্ধ বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল।
নির্বাচন কমিশন ও আইন মন্ত্রণালয়কে বিএনপি কয়েক দফায় লিখিতভাবে তাদের আপত্তির কথা তুলে ধরলেও আরপিও-এর ২১ ধারার সংশোধন অধ্যাদেশ শেষ পর্যন্ত জারি করেছেই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকার। এই ধারার সংশোধনীর ফলে জোট করলেও নির্বাচনে অংশ নিতে হবে নিজ দলের প্রতীকে। গত ৩ নভেম্বর এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

এর আগে ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। জোট করলেও দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বিএনপি। দলটি নির্বাচন কমিশন ও আইন মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে তাদের আপত্তির কথা তুলে ধরে। এরপর সরকার বিষয়টি বাদ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তখন জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই সংশোধনের পক্ষে অবস্থান নেয়। শেষ পর্যন্ত ওই বিধান রেখেই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।
এ ছাড়াও এবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে নির্বাচনী আইনে আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়। একজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে থেকে এবং নির্বাচিত হয়ে পুরো পাঁচ বছরের মধ্যে ঋণখেলাপি হলে তাঁর আসন শূন্য হয়ে যাবে। পাশাপাশি পলাতক (ফেরারি) আসামিকে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য এবং অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা পরিবর্তন করে সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে, আংশিক ফিরছে ‘না’ ভোট। শুধু একক প্রার্থী থাকলেই ‘না’ ভোট দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ, দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা, আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা, অনিয়মের কারণে পুরো আসনের ভোট বাতিলের বিধান, এআইয়ের অপব্যবহারকে নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং হলফনামায় অসত্য তথ্য (ভোটে অযোগ্য এমন) দিলে নির্বাচিত হওয়ার পরও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে সংশোধিত আরপিওতে বলা হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা সদস্য থাকলেও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন– এমন প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে।

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী শিগগিরই দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করবে ইসি। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে পারে ইসি। এর আগে নির্বাচন-সংক্রান্ত আইনে বড় রকমের পরিবর্তন আনল সরকার।

গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন হয়। এর পরই বিএনপির পক্ষ থেকে একই প্রতীকে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আপত্তি ওঠে। অন্তত দুই দফা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে বিএনপির আপত্তি আমলে নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত বদলের খবর প্রকাশ পায় গণমাধ্যমে। তবে তীব্র বিরোধিতায় নামে জামায়াত ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।

এ ব্যপারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে, এমন সিদ্ধান্তের কারণে ভোটের হিসাব-নিকাশে বড় দল হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি। এর হিসাবটা হচ্ছে, ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আছে একসঙ্গে নির্বাচন করার জন্য এবং সংসদ সদস্য পদে জোটের প্রার্থী হওয়ার আশায়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীককে ছোট দলগুলোর নেতারা জয়ের ক্ষেত্রে ভরসা হিসেবে দেখেন।’ তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিজমের যে রাস্তা আমরা বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো ওনারা বন্ধ করতে দিচ্ছে না।’

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদ ব্যারিস্টার কাংসার কামাল ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিএনপির আপত্তি ককানে না তুলে জামায়াত ও এনসিপির চাওয়া অনুসারে এবার আরপিও সংশোধন করা হয়েছে। বিশেষ করে আরপিও-এর ২১ ধারার সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করে। এর ফলে জোট করলেও প্রত্যেক দলকে তাদের দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। একক প্রতীকে জোটের সবাই নির্বাচন করতে পারবে না। একপাক্ষিক এমন সিদ্ধান্ত খুবই দুঃজনক।’

তবে জামায়তপন্থি আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. বেলায়েত হোসেন ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘কারো চাওয়ায় নয়, সরকারই আরপিও সংশোধন করেছে। এই সংশোধনীর ফলে এখন জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। তাই ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করতে খুব আগ্রহী হবে না। এর কারণ দুটি। প্রথমত, বিএনপির সমর্থন পেলেও ব্যক্তি জনপ্রিয়তা না থাকলে ছোট দলগুলোর নেতাদের নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে জেতা কঠিন হয়ে পড়বে। অন্য দিকে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপি আসন ছাড় দিলেও দলের কেউ বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে ভোটে জেতা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে বিদ্রোহীকে সরাতে বিএনপির নেতৃত্ব হিমশিম খাবে। এতেই তাদের গায়ে এতো জ্বালা।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ