ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপরিকল্পিত অবকাঠামো, বাড়ছে জনভোগান্তি
বগুড়া শহরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেগুলোতে রাখা হয়নি গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। দু-একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পার্কিং গ্যারেজ থাকলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। ফলে সড়কে জনভোগান্তির চিত্র নিয়মিত।
অভিযোগ রয়েছে, যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় রোগী-স্বজন, পথচারী, যানচালক ও শহরবাসীর মারাত্মক অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পার্কিং সমস্যা। ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণে পরিকল্পিত উদ্যোগের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সেই ভুল বা অপরাধের মাশুল দিচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীসহ পথচারীরা।
মূলত বগুড়া শহরে শেরপুর সড়কের লতিফপুর কলোনি এলাকা থেকে বেসরকারি হাসপাতালের শুরু। এই এলাকা থেকে সূত্রাপুরের মফিজপাগলার মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ২০টি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। ক্লিনিকগুলোর সামনে জায়গা সংকটের কারণে সড়কে নিয়মিত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এমন পরিস্থিতি থাকলেও প্রশাসনিকভাবে প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি অতীতেও এ সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
শহরের শেরপুর সড়কের ঠনঠনিয়া এলাকায় দুটি বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, অন্যটি ডক্টরস ক্লিনিক। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের যাতায়াত এই দুই প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়াও এই দুই প্রতিষ্ঠানের মাঝে রয়েছে বাসস্ট্যান্ড। ছোট-বড় যে কোনো যানবাহন ঠনঠনিয়া এলাকা পার হতে গেলে তীব্র যানজটে পড়তে হয়। শুধু এই যানজট এড়াতে স্থানীয় অনেকেই এলাকার ভিতরের সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। একদিকে অবৈধ পার্কিং, অন্যদিকে ফুটপাত দখল। সব মিলে শহরের সড়কগুলো যন্ত্রণাদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত রোববার (২৯ জুন) দুপুরে ঠনঠনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে সড়কের প্রায় অর্ধেক স্থানজুড়ে চিকিৎসকের দুটি প্রাইভেটকার অবৈধভাবে পার্কিং করা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে কর্তব্যরত কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড গাড়ি দুটির দেখভাল করছেন। এই দুই গাড়ির জন্য কিছুক্ষণ পরপরই সেখানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এসময় লিটন হোসেন নামে এক অটোচালকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, প্রতিদিনই বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ঠনঠনিয়ার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডক্টরস ক্লিনিকের সামনে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও শহরের কানছগাড়ি এলাকার ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনেও একই অবস্থা। এসব প্রতিষ্ঠানের সামনে সড়কের ওপর অনেক গাড়ি পার্কিং করা থাকে। দীর্ঘ বছর ধরে এমন দুর্ভোগের শিকার হয়ে আসছেন তারা।
মিজানুর রহমান, আলাল হোসেনসহ বগুড়া শহরের অন্তত ২০ জন বাসিন্দা জানান, বগুড়ার ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সামনে পার্কিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সড়কে গাড়ি পার্কিং করতে হয়, যা অনিরাপদ। রোগী নিয়ে এলে বা দেখতে গেলে গাড়ি চুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশে একটি পার্কিং গ্যারেজ থাকলেও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে যানজট নিরসনে তা কোনো উপকারেই আসছে না।
তারা আরও জানান, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেইসঙ্গে পার্কিং সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ফলে নিয়মিত সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে অতিরিক্ত যানজট।
এ সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে তারা জানান, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পাশে পার্কিং ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় কেউ অথবা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা সেই পার্কিং গ্যারেজ পরিচালনা করবেন। আর যে যে ক্লিনিক-ডায়াগস্টিক সেন্টারের আশপাশে পার্কিংয়ের স্থান নেই, সেগুলোর স্থান পরিবর্তন করাতে হবে। তবেই ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংশ্লিষ্ট যানজট সমস্যা দূর হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, সড়কে গাড়ি রাখা অবৈধ। আমি ট্রাফিক পুলিশকে বলে দিচ্ছি সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এরপরেও যদি এ সমস্যা থেকে যায়, পরবর্তীতে আমরা নিজেই অভিযানে নামব।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে