Views Bangladesh Logo

কোটি হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া

Rased Mehedi

রাশেদ মেহেদী

সাবেক সেনা প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসেন ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ। এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর থেকেই রাজপথে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের পুরোভাগে সে সময়ের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ তাদের রাজনৈতিক জোট যুগপৎভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। ১৯৮৬ সালে এসে এরশাদ একটি প্রহসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেন। সেই প্রহসনেরে ফাঁদে পা দেয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াতে ইসলামীসহ ছোট-বড় ২৮টি রাজনৈতিক দল। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে রাজপথের আন্দোলনে অটুট থাকে। “অন্যায়ের সঙ্গে আপোস নয়, স্বৈরশাসকের অধীনে কোন নির্বাচন নয়” এই ঘোষণাটি এসেছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কন্ঠ থেকে। তখন থেকেই তিনি দেশের মানুষের কাছে ‘আপসহীন দেশনেত্রী’। 


১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রবল গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পূর্ব পর্যন্ত খালেদা জিয়া তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। এমনকি আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল শেষ পর্যন্ত “স্বৈরশাসকের অধীনে কোন নির্বাচন নয়”-এই শ্লোগানে ঐক্যবদ্ধ হয়। যে কারনে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের উল্লেখযোগ্য অবদান থাকলে পুরোধা নেতৃত্বের আসনের স্বীকৃতি পান খালেদা জিয়া। সেই স্বীকৃতির ফসল ছিল ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বধীন বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া এবং সরকার গঠন করা। এই নির্বাচনের বিশেষ একটি তাৎপর্য ছিল। কারন ওই নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে আর কোন জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচন বিতর্কমুক্ত ছিল না। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনই ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশে প্রথম গ্রহনযোগ্য নির্বাচন। যে কারনে সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন অবশ্যই অনন্য অর্জন।


সেই অর্জনের মধ্য দিয়েই বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। শুরু হয় রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার পথ চলা। তিনি কিভাবে রাজনীতিতে এসেছিলেন সেটা আমরা কমবেশী সবাই জানি। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। একদল নির্মম ঘাতকের হাতে তিনি শহীদ হওয়ার পর এলোমেলো হয়ে যাওয়া বিএনপি’র হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে প্রায় এক দশক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় মনোবলে আপসহীন নেতৃত্ব দিয়ে খালেদা জিয়াই বিএনপিকে গণমানুষের দলে পরিণত করেন। খালেদা জিয়ার বিশেষত্ব এখানেই।


বিএনপি গণমানুষের দলে পরিণত হয়েছিল বলেই নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় যায়। আবার ২০০৯ সাল থেকে বিরোধী দলে এলে তৎকালীন সরকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদে এবং রাজপথে সমানভাবে সোচ্চার থেকেছে বিএনপি। ২০১৪ সালের প্রহসনের জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই যাত্রার শেষ অধ্যায় পর্যন্ত বিএনপি সব ধরনের প্রতিকূলতার মুখেও রাজপথে গণতন্ত্রের লড়াইয়ে সোচ্চার ছিল বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই। সেই সময়ে হাস্যকর সাজানো মামলায় কারাগারে যাওয়া, বার বার জীবনের ঝুঁকিতে পড়া, উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না পাওয়া, নিজের সন্তানের কাছ থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হওয়া, সকিছুর পরও খালেদা জিয়া তার আপসহীন চরিত্র সফলভাবে ধরে রেখেছেন। তার এই দৃঢ়তা বাংলাদেশে রাজনীতিতে অনুসরনীয় হয়ে থাকবে।


খালেদা জিয়ার চলে যাওয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি, বিশাল এক শূন্যতা। তারপরও প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়ম, ‘চলে যেতেই হবে।’ যেতে দিতে না চাইলেও প্রিয়জনকে শেষ বিদায় জানাতে হয়, এটাই প্রকৃতির অমোঘ বিধান। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থে মানুষের জন্য নিজের জীবনকে নিবেদিত করেন, তাদের শারীরিক মৃত্যু হলেও কর্মময় জীবন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অনুকরণীয় হয়ে থাকে। বেগম খালেদা জিয়া তেমনই একজন মানুষ। শুধু বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও তার নাম যুগ যুগ ধরে বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গেই উচ্চারিত হবে। কোটি হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন ‘আপসহীন দেশনেত্রী’ বেগম খালেদা জিয়া।

রাশেদ মেহেদী, সম্পাদক, ভিউজ বাংলাদেশ

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ