মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
স্কুলের কোচিং বন্ধ করতে হলে চাই শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন
স্কুলের কোচিং বাণিজ্য নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই কথাবার্তা হচ্ছে। বিগত সরকারের সময় থেকে কোচিং বন্ধের সর্বাত্মক চেষ্টা চলেছে। কোচিং বন্ধের জন্য পাঠ্যপুস্তকেও পরিবর্তন আনা হয়েছিল; কিন্তু সরকারের অনেক চেষ্টার পরও কোচিং নির্মূল করা যায়নি। সম্প্রতি কোচিং সেন্টারগুলো আবার গজিয়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো। শুধু আলাদা কোচিং সেন্টার নয়, খোদ স্কুলেই ক্লাস শেষে কোচিং পড়িয়ে থাকেন স্কুলের শিক্ষকরা। বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় কোচিং সেন্টার নির্ভরতা কেন এ পর্যায়ে পৌঁছেছে এ নিয়ে কথা বলতে গেলে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক অরাজক পরিস্থিতি নিয়েই কথা বলতে হবে। জানা গেছে, এটা প্রায় সবারই জানা যে, শিক্ষকদের চাপে বাধ্য হয়েই অনেক শিক্ষার্থীকে কোচিং করতে হয়।
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: শোকের উচ্চারণ ও কিছু পর্যবেক্ষণ
২১ জুলাই ২০২৫, সোমবার ছিল শ্রাবণের একটি রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন; কিন্তু ওই দিন দুপুরে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমানের মর্মান্তিক ক্র্যাশ বা দুর্ঘটনায় এই দিনটি বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের ট্র্যাজেডি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেল। মুহূর্তেই উত্তরাস্থ দিয়াবাড়ির স্কুলটি যেন পরিণত হলো এক অজানা যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে কেউ কারোর শত্রু ছিল না। প্রাণ গেল অনেক শিশুর, যারা ঘরে ফেরার জন্য ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিল। অনেক বাবা-মায়ের ছোট ছোট রাজপুত্র, রাজকন্যারা হারিয়ে গেল চিরতরে। হারিয়ে গেলেন এই বিমানের পাইলট, একজন প্রতিশ্রুতিশীল বিমান বাহিনী কর্মকর্তা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম। এখন পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় ৩৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু-কিশোর বয়সী শিক্ষার্থী।
চিড়িয়াখানা বানানোর হাত থেকে মাইলস্টোন স্কুলটি রক্ষা করুন
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর কথা শুনে লজ্জায় মাথা নত হয়ে গেল। টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সে বলছে, মানুষ এখন বোরিং ফিল করছে, তাই আমাদের স্কুল দেখতে আসছে। বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে আসছে। এসে তারা বাদাম খাচ্ছে, ঝালমুড়ি খাচ্ছে, আখের রস খাচ্ছে, চটপটি খাচ্ছে। আমাদের স্কুলটি এখন চিড়িয়াখানা। টিকিট বিক্রি করলে আমরা কোটিপতি হয়ে যাব। তারা আবার বলছে, ভিড়ের কারণে আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তারা দাড়োয়ানকে গেট খুলে দিতে বলছে। ভেতরে গিয়ে দেখবে। ভেতরে গিয়ে কী দেখবে তারা? শিশুদের পোড়াদেহ? শিশুদের পোড়াদেহ দেখতে আসছে তারা।
দুর্ঘটনার ট্রমা কাটাতে শিশু-কিশোর ও মা-বাবার করণীয়
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে তা আমাদের সবাইকেই স্তব্ধ করে দিয়েছে। আমরা যারা দূর থেকে ঘটনাটি দেখেছি তারাও অসহ্য কষ্ট ভোগ করেছি। কোমলমতি শিশুদের মৃত্যু আমাদের আপন সন্তান হারানোর ব্যথা দিয়েছে। যেসব শিশু আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে তাদের কষ্ট বর্ণনার ভাষা আমাদের জানা নেই। যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে তাদের জন্য সবার কষ্ট হচ্ছে, কান্না পাচ্ছে। আমাদের অনেকেই কথা বলতে পারছি না, স্তব্ধ হয়ে গেছি। অনেকে ভয় পাচ্ছি, ঘুমাতেও পারছি না, দুঃস্বপ্ন দেখছি।
মাইলস্টোন দুর্ঘটনার মতো ঘটনা আর যেন না ঘটে, তার ব্যবস্থা করুন
দেশজুড়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় হতভম্ব এবং শিউরে উঠেছে যে, তাদের সন্তানরা স্কুলে এবং কলেজে কতখানি ঝুঁকিমুক্ত এবং সুরক্ষিত। দুর্ঘটনার ব্যাপ্তি এবং সীমা দেখে বলাই বাহুল্য- দেশের জননিরাপত্তা একেবারেই সুরক্ষিত নয়, এ ঘটনাই তার বাস্তব প্রমাণ। আর আধাঘণ্টা পর ঘটনাটি ঘটলেও হয়ত অনেক শিশু এবং কিশোর বেঁচে যেত; কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস যখন আর মাত্র কিছু সময় পড়ে তারা মা-বাবা বা কোনো গুরুজনের কোলে চড়ে গল্প করতে করতে বাড়ির দিকে রওয়ানা হবে, তার মাত্র কিছু সময় আগে অর্থাৎ যখন শিক্ষকরা তাদের নিত্যদিনের মতো লাইনে দাঁড় করিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে বাড়ি ফেরার জন্য তৈরি করছিল, তখনই এরকম স্মরণকালের একটি অতীব দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেল।
ছাত্রদের কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হতে দেয়া যাবে না
ছাত্রসমাজ একটি জাতির সবচেয়ে প্রাণবন্ত ও গতিশীল অংশ। তাদের মধ্যে থাকে আদর্শবাদ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস, এবং পরিবর্তনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার এক প্রকার স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব। তারা কেবল একটি নির্দিষ্ট বয়সের জনগোষ্ঠী নয়, বরং পরিবর্তনের বার্তাবাহক হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। আমাদের দেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যায়- বাংলা ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বাংলাদেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্ররাই। তারা ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে জাতির প্রহরী।
বিমান দুর্ঘটনায় আহত শিশুদের ট্রমা দূর করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি
রাজধানীর দিয়াবাড়ি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান আছড়ে পড়ে ৩২ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহতের ঘটনায় পুরো জাতিই একপ্রকার ট্রমায় আক্রান্ত হয়েছে। দুদিন ধরে অনেকেই ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন। অনেক শিশু বিমান উড়ে যাবার শব্দ শুনলেই ভয় পাচ্ছে বলেও জানা গেছে। এ অবস্থায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের কথা ভাবুন। যারা চোখের সামনে এরকম ভয়াবহ একটি দুর্ঘটনা দেখেছে। দেখেছে প্রিয় বন্ধুদের মৃত্যু। শুধু আহতরাই না, যারা কোনো আঘাত না পেয়ে শারীরিকভাবে সুস্থ আছে, ঘটনা থেকে দূরে ছিল, কিন্তু ওই স্কুলেরই শিক্ষার্থী তাদেরও মানসিক দিকটা সহজেই বোঝা যায়।
মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে কেন এমন অপরাজনীতি
গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় যখন একের পর এক কোমলমতি শিশুদের মৃতদেহ ও দগ্ধ আহতদেহ বেরিয়ে আসছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত ছিল তাদের উদ্ধার তৎপরতায়, অ্যাম্বুলেন্সগুলো আহত শিশুদের নিয়ে ছুটছিল হাসপাতালে হাসপাতালে, ডাক্তার-নার্সরা ছোটাছুটি করছিল এসব যন্ত্রণাকাতর শিশুদের কত দ্রুত সেবা দেয়া যায় তখনই আমরা দেখলাম দেশের কতিপয় রাজনীতিবিদ হাসপাতালে গিয়ে ভিড় করেছেন। তাদের উপস্থিতিতে হাসপাতালের চারপাশে ভিড় আরও বেড়ে যায়। আহতদের নিয়ে যাতায়াত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকের প্রশ্ন, এ সময় রাজনীতিবিদরা হাসপাতালে কী চান? তারা কি প্রচারণার জন্য এসেছেন? জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন।