অন্তর্বর্তী সরকার
শহীদ আবু সাঈদ: ব্যর্থ নও তুমি, ব্যর্থ নয় তোমার আত্মার চিৎকার
আবু সাঈদ ২০০১ সালে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মকবুল হোসেন, মাতা মনোয়ারা বেগম। আবু সাঈদের ৬ ভাই ও ৩ বোন। ৯ ভাইবোনের মধ্যে আবু সাঈদ সবার ছোট। আবু সাঈদ স্থানীয় জাফরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর স্থানীয় খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০১৮ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরে তিনি ২০২০ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ২০২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। টগবগে তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তাকে ঘিরে তার এলাকার মানুষ স্বপ্ন দেখতেন। সেই সাঈদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া অসহ্য কষ্টের।
চাঁদাবাজি, খুন-সন্ত্রাস বন্ধ করুন
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার পর গত শুক্রবার (১১ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকায় চাঁদাবাজিজনিত কারণে এক রোমহর্ষক ঘটনা ঘটে গেছে। ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে একদল লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে হামলা চালায় পল্লবীর আলবিরটেক এলাকায় এ কে বিল্ডার্স নামের একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে। হামলাকারীরা এ সময় চারটি গুলি করেছে। দুর্বৃত্তদের গুলিতে শরিফুল ইসলাম নামে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে দুর্বৃত্তদের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত আতঙ্কজনক। দিন-দুপুরে একদল লোক ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দৃশ্যটি দেখে মনে হয় এ যেন সভ্য দেশের কোনো চিত্র নয়- ওয়েস্টার্ন ফিল্মের দৃশ্য।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: আস্থার ভঙ্গ ও জবাবদিহির সংকট
গত আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় আসে। এটি নিজেকে একটি সংস্কারমুখী ও সুশাসনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রূপান্তরকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে উপস্থাপন করেছিল; কিন্তু এক বছরের কাছাকাছি সময় পেরিয়ে গেলেও দেশটি এখন আরও গভীর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত- যেখানে চরম অব্যবস্থাপনা, বেড়ে চলা বৈষম্য এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে নাগরিক কল্যাণের বিভেদ ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে, যা স্থিতিশীলতার সেতু হওয়ার কথা ছিল, তা এখন অনিশ্চয়তার অতল গহ্বরে পতনের রূপ নিচ্ছে।
‘তদবির বাণিজ্য’ থেকে বাংলাদেশকে বেরিয়ে আসতে হবে
তদবির ছাড়া বাংলাদেশে কোনো কাজ হয় না এমন কথা বহু বছর ধরেই প্রচলিত আছে। চাকরিপ্রাপ্তি থেকে হাসপাতালে ভর্তি, স্কুলে ভর্তি, বদলি, পদোন্নতি, টেন্ডার, ব্যবসায়িক নিবন্ধন- সবকিছুতেই এদেশে তদবিরের প্রয়োজন। তা হোক সরকারি, বেসরকারি যে-প্রতিষ্ঠানই হোকে। শোনা যায়, পিয়নের চাকরিও এ দেশে আজ আর তদবির ছাড়া হয় না। পদ যত উঁচু, কাজ যত বড় তা বুঝে ধরতে হয় তত বড় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। যার ফলে এমপি-মন্ত্রী-সরকারি বড় কর্তার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রেখে তদবির আদায়ই এ দেশের একশ্রেণির মানুষের দীর্ঘকালব্যাপী বাণিজ্য।
রাষ্ট্রীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে ‘বিটিভি, বেতার ও বাসস’কে এক ছাতার নিচে আনা প্রয়োজন
বহুবিধ ও বহুমুখী সংকটে জর্জরিত বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যুগোপযোগী, কার্যকর সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যাতে গণমাধ্যমের মালিকানা, আয়ব্যয়, বিজ্ঞাপন বাজার, আর্থিক নিরাপত্তা, বিটিভি-বেতার-বাসস সম্পর্কে করণীয়, সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও সুরক্ষাসহ নানা বিষয়ে ২০ দফা সুপারিশ করেছেন কামাল আহমদের নেতৃত্বাধীন এই কমিশন। এই ২০ দফার অধীনে রয়েছে আরও বেশ কিছু উপ দফা। যাতে বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে এই বিষয়গুলো কার্যকরে ‘বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন অধ্যাদেশ: ২০২৫’-এর খসড়াও পেশ করেছে কমিশন। এই খসড়া অধ্যাদেশ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন খুব দ্রুত এই কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আইনি ভিত্তি পাবে। এই কমিশন গঠন, কার্যক্রম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কামাল আহমেদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত মিনহাজ। সেই সাক্ষাৎকার ভিউজ বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। ছয় পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রকাশিত হলো চতুর্থ পর্ব:
বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের বাজার এক ধরনের স্যাচুরেটেড মার্কেট
বহুবিধ ও বহুমুখী সংকটে জর্জরিত বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যুগোপযোগী, কার্যকর সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যাতে গণমাধ্যমের মালিকানা, আয়ব্যয়, বিজ্ঞাপন বাজার, আর্থিক নিরাপত্তা, বিটিভি-বেতার-বাসস সম্পর্কে করণীয়, সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও সুরক্ষাসহ নানা বিষয়ে ২০ দফা সুপারিশ করেছেন কামাল আহমদের নেতৃত্বাধীন এই কমিশন। এই ২০ দফার অধীনে রয়েছে আরও বেশ কিছু উপদফা। যাতে বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক শান্তির বার্তা দিচ্ছে
রাজা চার্লসের হারমনি অ্যাওয়ার্ড ব্রিটেনের মর্যাদাপূর্ণ একটি অ্যাওয়ার্ড। পরিবেশ রক্ষা, ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প দক্ষতা, পরিবেশবান্ধব ব্যবসা ও প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যক্তির উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়ে থাকে। রাজা চার্লসের বিশ্বাস বা নীতি হলো, ‘আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে কাজ করা উচিত, এর বিরুদ্ধে নয়।’ অর্থাৎ, প্রকৃতিকে রক্ষা করে, তার সঙ্গে ভারসাম্য রেখে আমাদের চলা উচিত। রাজার এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়ে থাকে।
প্রজাতন্ত্রের একশ্রেণির কর্মকর্তা বিপুল অর্থের মালিক হচ্ছে কেন?
প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং গতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ নতুন কিছু বিধি সংযোজন করা হবে। প্রথমেই উল্লেখ করা প্রয়োজন, পাবলিক সার্ভেন্ট বা গণকর্মচারীদের সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে আখ্যায়িত করার মধ্যেই বিভ্রান্তি রয়েছে। একটি গঠিত হওয়ার জন্য চারটি আবশ্যিক উপকরণের উপস্থিতি প্রয়োজন হয়। এগুলো হচ্ছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসংখ্যা এবং সরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল এবং একমাত্র পরিবর্তনশীল উপকরণ হচ্ছে সরকার। অবশিষ্ট উপকরণগুলো পরিবর্তিত হয় না।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করার এখতিয়ার যদি না থাকে তাহলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে
চট্টগ্রাম বন্দরের ৯টি টার্মিনালের মধ্যে একটির পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার যে উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে তার সমালোচনা এখন তুঙ্গে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্বের তুলনায় পিছিয়ে থাকা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার ভার পৃথিবীর সেরা কোনো কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিতে হবে এবং এই ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা মানুষকে বোঝাতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে বিদেশি কোম্পানিও নির্বাচিত করে ফেলেছে- ডিপি ওয়ার্ল্ড, আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি কোম্পানি। এই কোম্পানির সিইও বা প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে দেশে-বিদেশে ড. ইউনূসের দুইবার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং তাদের প্রস্তাবিত কাজ হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের জট কমানো, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করা এবং বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র গেটওয়ে হিসেবে এর কার্যকারিতা বাড়ানো।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও কেন নাগরিক উদ্বেগ বাড়ছে!
আমরা, সাধারণ নাগরিকগণ এই প্রথমবারের মতো একটি গণভোটবিহীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি- যা সংবিধান অনুযায়ী হয়তো কিছুটা বিতর্কিত; কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে একে প্রয়োজনীয় বলেই মেনে নিতে হয়েছে। কারণ, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ কখনোই একটি পূর্ণাঙ্গ, কার্যকর ও টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। বরং দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতালিপ্সা, দুর্নীতি, গুম-খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা দেশকে এক গভীর আস্থাহীনতার খাদে ঠেলে দিয়েছে।