Dhaka University
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বঙ্গবন্ধুরই লেখা
আবুল কাসেম ফজলুল হক। বাংলা ভাষার প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, সমাজ বিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। বর্তমানে তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক কয়েকটি বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর এডিটরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতি খোলা চিঠি
মহাত্মন, যথাযথ সম্মানের সঙ্গে জানাচ্ছি, সারাজীবন একজন আইন মান্যকারী সুনাগরিক হিসেবে নির্বিবাদে চলার চেষ্টা করেছি। জীবনের শুরুতে লেখাপড়ার দিকে তেমন আকৃষ্ট হতে পারিনি, পরিবেশও তেমন ছিল না। আমার দাদু আলাউদ্দিন সিদ্দিকী মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে কংগ্রেস এবং চল্লিশের দশকে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে মুসলিম লীগের হাল ধরে পাকিস্তান আন্দোলনে জড়িয়েছিলেন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমার দাদু আলাউদ্দিন সিদ্দিকী পাকিস্তানের স্বাধীনতা দেখে যেতে পারেননি। পাকিস্তান হওয়ার আগেই তিনি পরপারে চলে যান। পাকিস্তানের জন্মের আগে আগে ’৪৭ এর ১৪ জুন আমার জন্ম। পাকিস্তানের জন্মের আগে জন্মেছিলাম বলে এক সময় আমার গর্ব হতো যে আমার জন্মের সঙ্গে পাকিস্তানের জন্ম। ছেলেবেলায় পাকিস্তান দিবসে কত আনন্দ করেছি, গ্রামের বাড়িতে, শহরের বাড়িতে মাটির প্রিদিম জ্বালিয়েছি। কখনো কখনো ছোট ছোট মোমবাতি জ্বালিয়ে বুকের মধ্যে স্বাধীনতার আলো জ্বালাতে ব্যর্থ চেষ্টা করেছি।
বিভুরঞ্জন সরকারের বিদায়ই কি শেষ বিদায়, নাকি তারপরও আছে!
২১ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকার নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পরদিন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার মেঘনা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নিখোঁজের সংবাদ প্রথমে পাই লেখক লিনু হকের ফেসবুক পোস্ট থেকে, কিছুক্ষণ পর দেখলাম সারা ফেসবুকে তার নিখোঁজের সংবাদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ক্লাসমেট ও রাজনৈতিক আদর্শের সতীর্থ জীবন কৃষ্ণ সাহাকে ফোন করলাম; কিন্তু তিনি বিভুরঞ্জন সরকারের বাসা কোথায় তা বলতে পারলেন না। বুঝলাম, সমাজে বিভুরঞ্জন সরকারের প্রয়োজন অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সরকার বলা যায় কি?
২o২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান। এটাকে অনেকে বিপ্লব বলার চেষ্টা করেন; কিন্তু এটাকে বিপ্লব বলার কোনো সুযোগ নেই, এটা একটা স্রেফ গণঅভ্যুত্থান। গণঅভ্যুত্থানের শুরুটা হয়েছিল চাকরিক্ষেত্রে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন করতে গিয়ে সরকার জুলাই ম্যাসাকার সংঘটিত করে। ফলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনটি প্রথমে ‘নয় দফা’ এবং পরবর্তীতে ‘এক দফা’র আন্দোলনে রূপ নেয়। এই গণঅভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা যত করা হবে, ততই তিনি উজ্জ্বল হবেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সামনাসামনি প্রথম দেখি ১৯৬৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, তখন আমি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। আইয়ুব খান তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, মোনায়েম খান গভর্নর। বঙ্গবন্ধু সেদিন কিশোরগঞ্জে গিয়েছিলেন। কিশোরগঞ্জের রংমহল সিনেমা হলে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করছিলেন সামান্য কিছু মানুষ নিয়ে, সেই মানুষের সংখ্যাটা একশ হতে পারে। তার সঙ্গে সেদিন ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। প্রথম তাকে দেখা, সাদা হাওয়াই শার্ট পরিহিত, প্যান্ট, ব্যাক ব্রাশ করা চুল, লম্বা মানুষ।
৩৬ জুলাই: অভূতপূর্ব এক গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপঞ্জি
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক অভূতপূর্ব গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে দীর্ঘদিনের ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক হাসিনা সরকারের। ছাত্র-জনতা এই আন্দোলনকে জুলাই- আন্দোলন নামেও অভিহিত করেন। এর কারণ আন্দোলনের তীব্রতা লাভ করেছিল পুরো জুলাই মাসজুড়ে। এমনকি জুলাই মাস শেষ হয়ে গেলেও আন্দোলনকারীরা দিন গুনতে থাকেন ৩২ জুলাই, ৩৩ জুলাই, ৩৪ জুলাই, ৩৫ জুলাই নামে। কারণ আগস্ট মাস আওয়ামী লীগের শোক পালনের মাস। আন্দোলনকারীরা বরং জুলাইয়ের শহীদদের শোককেই জীবন্ত রাখতে চায়। প্রতিদিনই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হতে থাকেন। সরকারের দমন-পীড়ন এক সময় চরমমাত্রা লাভ করে। আন্দোলন দমাতে সরকার এক ভয়ংকর গণহত্যা শুরু করে। প্রায় ১ হাজার ৫০০ মানুষকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ সরকার। মৃত্যুর মিছিল দেখে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট বিকেলে ভারতে পালিয়ে যান। অবশেষে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় সেই কাঙ্ক্ষিত বিজয়।
সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে নির্বাচন দিন
দীর্ঘ ৬ বছর পর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। ১৯ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ আগস্ট। শুধু ডাকসু নির্বাচন নয়, ঘোষণা করা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিলও। এ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের তফসিল আজ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান। জাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর। গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ডাকসু, রাকসু ও জাকসু ছাত্র সংসদ নির্বাচন একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা ভিউজ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিলও শিগগিরই ঘোষণার আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা কতটা পেশাদার?
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেশ ঘটা করেই পালিত হলো মহান মে দিবস। শ্রমজীবীদের এই দিবসে বিভিন্ন সংগঠন সমাবেশ করেছে। আয়োজন করা হয়েছে সভা-সেমিনার। সব জায়গায়ই শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কড়া বক্তব্য এবং কিছু আশার বাণী শোনা গেছে। এই আশার বাণী প্রতি বছরই আমরা শুনি; কিন্তু এর ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়ন হয় না; বরং বছর বছর শ্রমিকদের সঙ্গে অন্যায় বাড়ছে। এর প্রমাণ মেলে শ্রম ভবনে গেলে। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন।
দ্রুত ডাকসু নির্বাচন ঘোষণা করুন
ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেই নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সেবার ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে যে আশা-উদ্দীপনা জেগেছিল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একগুয়েমির কারণে সেটি পূরণ হতে পারেনি। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মনোভাব ছিল একপেশে, পক্ষপাতমূলক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্দেহজনক। যে কোনো নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করার পূর্বশর্ত হলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য মাঠ সমতল করা; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনটির সব দাবি রক্ষা করলেও প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের দাবি বরাবরই উপেক্ষা করেছে।
ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে যেন ভাটা না পরে
বাংলা নববর্ষতে আমরা সাধারণত দুটি শব্দ ব্যবহার করে থাকি। একটিকে ‘সন’ বলি, আরেকটিকে ‘সাল’ বলি। ‘সাল’ হলো ‘ফার্সি’ শব্দ আর ‘সন’ হলো ‘আরবি’ শব্দ। বাংলা ভাষায় প্রচুর আরবি, ফার্সি শব্দ আছে। বাংলাদেশ নামটিও বাংলা নয়, বাংলা ও দেশ ফার্সি শব্দ।