বাংলাদেশ ব্যাংক
দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি রাজনৈতিক-সংস্কৃতির অংশ
চাঁদাবাজি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ একটি নিরেট সত্য কথা বলেছেন; কথাটি হচ্ছে চাঁদাবাজি এবং চাঁদার মাত্রা চব্বিশের ৫ আগস্টের পর বেড়েছে এবং চাঁজাবাজি, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট প্রয়োজন। কারণ চাঁদাবাজ শুধু চাঁদাবাজই নয়, সে রাজনীতিও করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালে তার সঙ্গে আমার সরাসরি কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত বলে তিনি একজন নির্লোভ ব্যক্তিও। পাকিস্তান আমলের সিএসপি আমলা, তাই দক্ষও। অর্থ উপদেষ্টা হয়েই তিনি বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা যত খারাপ বলা হয়, তত খারাপ নয়; কিন্তু ক্ষমতায় বসেই দলীয় সরকারের রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি হচ্ছে, আগের সরকারের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা।
উন্নয়ন সহযোগীদের আপত্তিকর শর্ত প্রত্যাখ্যান করতে হবে
বিগত সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছিল।
আর্থিক খাতে নারীর জন্য অনুকূল কর্ম পরিবেশ তৈরি করুন
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে দেশের ৬১টি তপশিলি ব্যাংকে নারী ও পুরুষ মিলিয়ে মোট কর্মীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি, যার মধ্যে নারীকর্মী ১৭ শতাংশ। বাকি ৮৩ শতাংশ পুরুষ কর্মী।
তদারকি না করে আর্থিক খাতে অতিরিক্ত লাইসেন্স প্রদানই আসল সমস্যা
২০২৫ সালে প্রায় ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি নিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অধিক-লাইসেন্সপ্রাপ্ত আর্থিক খাতের দেশ। বর্তমানে দেশে রয়েছে ৬১টি তফসিলি ব্যাংক, ৩৮টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ৭৫০টিরও বেশি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, এর পাশাপাশি ১৩টি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ৯টি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার এবং ১২টি পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর। এসব প্রতিষ্ঠান চারটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে পরিচালিত- বাংলাদেশ ব্যাংক, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। তবুও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আশানুরূপ হয়নি। নগরাঞ্চলের একটি বড় অংশসহ জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবার বাইরে।
ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের উল্লম্ফন কবে বন্ধ হবে
ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে বেশি; কিন্তু ফেরত আসছে কম। আবার অনিয়ম, কেলেঙ্কারি এবং পর্ষদের সঙ্গে আঁতাত করে নেয়া অর্থ করা হচ্ছে লুটপাট। ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে দুর্দশাগ্রস্ত ও খেলাপি ঋণ। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এই ঋণের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। দেশের আর্থিক খাতের নাজুক অবস্থার প্রকট চিত্রই তুলে ধরেছে এ সংখ্যা।
ব্যাংক সংস্কার নিয়ে আর নয় ‘নয়ছয়’
দেশের কিছু ব্যাংক জন্মলগ্ন থেকে তার আমানতের টাকা নিয়ে ‘নয়ছয়’ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য পুরো ব্যাংক খাতের যে ‘নয়ছয়’ হয়ে গেছে, তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে হচ্ছে না। যদিও গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ খাতে অনেক আশার কথা বললেও সেই আশানুরূপ ফল এখনো দৃশ্যমান হয়নি। গত সপ্তাহে তিনি একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ব্যাংক সংস্কারে ২০ হাজার কোটি টাকা ঢালবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব ব্যাংক সংস্কারে ২০ হাজার কোটি টাকা ঢালবে, সেসব ব্যাংক থেকে যে বা যারা বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাদের কি করা হলো?
আর্থিক শৃঙ্খলা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সংস্কারের উদ্যোগ
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতির ঘোষণা উপলক্ষে সম্প্রতি একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক । আসন্ন মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয় এই সভায়। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ নীতিগত সুদের হার বহাল থাকা, বেসরকারি খাতে বিশেষ করে CMSME খাতের জন্য ঋণ সুবিধা সংকুচিত হয়ে যাওয়া, উচ্চ পরিমাণে অক্ষম ঋণ (NPL), বিনিয়োগে স্থবিরতা, নতুন বিনিয়োগে ‘অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ’ প্রবণতা এবং বিদ্যমান বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয় ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এই আলোচনা সভায়।
মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক তুলতে হলে সরকার ও মালিক পক্ষের বোঝাপড়া জরুরি
ঢাকার রাস্তায় চলতে গেলেই দেখা যায় মুখের ওপর কালো ধোঁয়া উড়িয়ে চলে যাচ্ছে লঙ্কড়ঝক্কড় বাস-ট্রাক, বাসের বডি যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে এরকম অবস্থা, যাত্রী-পথচারীর জন্য এগুলো প্রচণ্ড হুমকিস্বরূপ। শুধু দুর্ঘটনা নয়, এসব গাড়ির কালো ধোঁয়াও পরিবেশের জন্য খুব ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরেই এসব মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক বন্ধের কথা হচ্ছে; কিন্তু কোনো সরকারের আমলেই তা যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি; এর কারণ এসব পরিবহনের বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। বেশিরভাগ যানবাহনের মালিকও কোনো না কোনো রাজনৈতিক নেতা, কিংবা অন্তত পরিবহন সেক্টরের মালিকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত গভীর। ফলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও উক্ত বিষয়ে কোনো সমাধান দিতে পারেনি।
ঋণখেলাপিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই
দেশের ব্যাংক খাতে অনাদায়ী বা খেলাপি ঋণের সমস্যা নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে এটি চলে এলেও এ সমস্যার সমাধানে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সে ক্ষেত্রে এক গবেষণায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছিল, বাংলাদেশে বিতরণকৃত ঋণের এক-তৃতীয়াংশই খেলাপি।
ব্যাংকিং খাতে সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে দ্বৈতশাসন
বাংলাদেশের অর্থনীতির যে খাতটি সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। ব্যাংকিং খাতকে একটি দেশের অর্থনীতির ধমনিতে রক্ত প্রবাহের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কোনো মানুষ বা প্রাণির ধমনিতে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিকভাবে চলাচল না করলে যেমন শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। এমনকি প্রাণির মৃত্যুও হতে পারে। ঠিক তেমনি কোনো দেশের ব্যাংকিং খাত যদি স্বাভাবিক গতিতে সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তাহলে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সমস্যা দেখা দেবেই। আর্থিক সামর্থ্যহীনতার কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের উদ্যোক্তাদের পুঁজির চাহিদা পূরণের জন্য ব্যাংকের কাছে ধরনা দিতে হয়; কিন্তু ব্যাংকিং খাত উদ্যোক্তা এবং সাধারণ ঋণ গ্রহীতাদের কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা দিতে পারছে না।