পুরোনো ঝুলে থাকা মামলার জট কমাতে বিশেষ উদ্যোগ সুপ্রিম কোর্টের
দেশের সব আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন (পেনডিং) মামলার সংখ্যা ৪৫ লাখ ১৬ হাজার ৬০৩টি। এর প্রায় সবই ১৯৯০ থেকে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে করা। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫১টি মামলা। এমন অবস্থায় হাইকোর্ট বিভাগে ২০০০ সালের আগের বিচারাধীন প্রায় ১১ হাজার মামলা আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। নিয়মিত হাইকোর্ট বেঞ্চেই আগামী ২৪ আগস্ট থেকে এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য শুনানি শুরু হবে। সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির মধ্যেও এ কার্যক্রম চলবে। সুপ্রিম কোর্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগসহ দেশের সব বিচারিক আদালতে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪৫ লাখ ১৬ হাজার ৭০৩টি। এর মধ্যে তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি বিচারাধীন মামলা হাইকোর্ট বিভাগে। সেখানে বিচারাধীন রয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫১টি মামলা, যার মধ্যে দেওয়ানি ৯৮ হাজার ৭২২, ফৌজদারি ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮১, রিট মামলা ১ লাখ ১৫ হাজার ২১২ ও বিবিধ ২০ হাজার ৮৩৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
গত বছরের আগস্ট থেকে বিচার বিভাগ সংস্কারের লক্ষ্যে বহু বিচারক নিয়োগের পাশাপাশি শতাধিক অধ্যাদেশ জারি এবং সুপ্রিম কোর্ট ও বিচারিক আদালতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার আইন কর্মকর্তাও নতুন নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বিচারকাজ দ্রুত করতে এই সময় হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্সে একটিসহ মোট চারটি নতুন বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে; কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। মামলাজট কমার পরিবর্তে এ সময়ের মধ্যে বেড়েছে প্রায় ২ লাখ।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, এমন পরিস্থিতিতে হাইকোর্টে ঝুলে থাকা দুই যুগ আগের প্রায় ১১ হাজার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। গত ১ আগস্ট এসব মামলা বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যে ফৌজদারি ৫ হাজার ১০৩, দেওয়ানি ৩ হাজার ৬২২টি ও বাকিগুলো রিটসহ অন্যান্য মামলা। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের গত ১০ জুলাইয়ের নির্দেশনার আলোকে এসব মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ২০০০ সালের আগের হাজার হাজার মামলা এখনো বিচারাধীন, যা আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই আমরা প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নির্দেশনার আলোকে বাছাই করে ২০০০ সালের আগের কয়েক হাজার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সিলেক্ট (বাছাই) করেছি। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর- এ তিন মাসের মধ্যে এসব মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘মামলাজট বিচার বিভাগের জন্য বড় বাধা। এই বাধা কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও সফলতা এসেছে খুব সামান্য। তবে বর্তমানে বিচার বিভাগ এ ব্যপারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আপাতত ২০০০ সালের আগের প্রায় ১১ হাজার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে এর সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এ ব্যাপারে ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘হাইকোর্টে পেনডিং ২০০০ সালের আগের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। তবে মামলাজট সত্যিকারার্থে কমাতে চাইলে হাইকোর্টে বিচারক ও বেঞ্চ সংখ্যা বাড়িয়ে দ্রুততার সঙ্গে ১ থেকে ২ লাখ মামলা নিষ্পত্তি করা দরকার। আর তা হলেই কেবল বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে। হাইকোর্টকে আর বইতে হবে না মামলা জটের বোঝা।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে