Views Bangladesh Logo

একজন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক পথচলা

দেশের ইতিহাস প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায়  শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

‘নন্দিত নেত্রী: খালেদা জিয়া’ শীর্ষক গ্রন্থে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপ-প্রেস সচিব সৈয়দ আবদাল আহমেদ উল্লেখ করেন, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুঁড়ির নয়াবস্তি এলাকায় তার জন্ম। গ্রন্থটির মুখবন্ধ লিখেছেন প্রয়াত অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ।

বিএনপির দলীয় সূত্র ও তার জীবনীগ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়, খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম। তার ডাক নাম পুতুল। পারিবারিকভাবে তার আরও ডাকনাম ছিল— টিপসি, শান্তি। বাবা ইস্কান্দর মজুমদারের বন্ধু চিকিৎসক অবনীগুহ নিয়োগীই সদ্য প্রসূত কন্যাকে ‘শান্তি’ নামে সম্মোধন করেন। পৃথিবী তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে মাত্র কয়েকদিনে পড়েছে। দিনকয়েক আগে জাপানে ঘটে গেছে আমেরিকার আনবিক বোমার হত্যাযজ্ঞ। ভারতসহ নানা দিকেই তখন শান্তি মিছিল, মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার মধ্যেই নতুন জন্ম নেওয়া শিশুকন্যার নাম হয়ে উঠলো ‘শান্তি’। পরবর্তী সময়ে মেজো বোন সেলিনা ইসলামের রাখা ‘পুতুল’ নামটিই জড়িয়ে গেল খালেদা জিয়ার ডাকনাম হিসেবে।

খালেদা জিয়ার আদিবাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায়। তার বাবার নাম ইস্কান্দর মজুমদার ও মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। তিন বোন (খুরশিদ জাহান হক চকলেট, সেলিনা ইসলাম বিউটি ও খালেদা খানম পুতুল) ও দুই ভাইয়ের (মেজর সাঈদ ইস্কান্দর ও শামীম ইস্কান্দর) মধ্যে খালেদা জিয়া তৃতীয়। এদের মধ্যে এক বোন সেলিনা রহমান, ভাই শামীম ইস্কান্দর জীবিত আছেন। দুই সন্তান তারেক রহমান পিনো ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর জননী তিনি।

খালেদা জিয়া তার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বধূ হিসেবেই জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়েছেন। ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফার (১৯৯৬) দায়িত্বকাল ছিল এক মাস। ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি বিজয়ী হয়। ওই বছরই বেগম জিয়া পঞ্চম সংসদে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন।

তার নেতৃত্বেই সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন হয়। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর এক মাসের জন্য ষষ্ঠ সংসদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রণয়নের পর ওই বছর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যায় খালেদা জিয়ার দল বিএনপি, তিনি হন প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা।

১৯৯৯ সালে চারদলীয় ঐক্যজোটের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০০১ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বিরোধী দলীয় নেতা হন খালেদা জিয়া। ১/১১’র আলোচিত মঈন উদ্দীন ও ফখরুদ্দীন সরকারের সময়ে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালে নিম্ন আদালতে পাঁচ বছরের সাজা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিশেষ ব্যবস্থায় পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে তাকে রাখা হয়। এরপর ওই বছরের ১ এপ্রিল তাকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করা হয়। পরে নিম্ন আদালতের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।

প্রায় দুই বছর পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় পারিবারিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর দফা-দফায় ছয় মাস করে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায় সাবেক সরকার।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরদিন (৬ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান বেগম খালেদা জিয়া।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেন তিনি। একইসঙ্গে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই সে বছর নির্বাচন থেকে বিরত থাকে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া যখন কারাগারে, তখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে সমন্বয় করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাগারে থাকায় সেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। এমনকি এই নির্বাচনে জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যই অংশগ্রহণ করেননি।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেয়নি তার দল। বেগম জিয়া সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করেন। সেখানে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ৪৮ ট্রাক ত্রাণ বিতরণ করেন খালেদা জিয়া।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে কারাগারে যাওয়ার আগে ৭ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া শেষবার সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি সর্বশেষ সমাবেশ করেন ২০১৭ সালে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ