উত্তরের হিমেল হাওয়ায় চেপে আসছে শীত
‘শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে, পাতাগুলো শিরশিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতার তালে তালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন বাংলাদেশে এবার একটু আগেভাগেই চলে আসছে শীত। ষড়ঋতুর এই দেশে প্রত্যেক ঋতু তার নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হয়। পৌষ ও মাঘ এ দুই মাস আনুষ্ঠানিক শীতকাল হলেও এবার হেমন্তের শুরুতে অর্থাৎ কার্তিক মাসেই অনুভূত হবে শীতের আমেজ। এই সময়েই দেশের উত্তরের জনপদ রংপুর অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করবে উত্তরের হিমেল হাওয়া। একই সময় সারা দেশ থেকে বিদায় নেবে বর্ষার মৌসুমি বায়ু।
ফুল-ফল ও ফসলের ঋতু হেমন্তের শুরুতেই কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে প্রকৃতিতে আগমনী বার্তা জানান দিতে চলছে রূপবৈচিত্র্যের ঋতু শীত। এরই মধ্যে রংপুর ও নওগাঁ অঞ্চলে একটু একটু করে পড়তে শুরু করেছে ঠান্ডা, বইছে হালকা হিমেল হাওয়াও। ভোরে সবুজ ঘাসের ওপর বিন্দু বিন্দু শিশির কণা। কিছু এলাকায় সূর্যটাও দেখা দিচ্ছে খানিকটা দেরিতে। গাছিরা যত্ন নিতে শুরু করেছে খেজুর গাছের। বাজারে কিছুটা দেখা মিলছে আগাম শীতকালীন সবজি- শিম, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউসহ সুস্বাদু হরেক রকমের সবজি। এ যেন শীতেরই উঁকি।
শীতের আগমন নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মমিনুল ইসলাম ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভোরে কুয়াশা পড়া, তাপমাত্রা ধীরগতিতে কমে আসা এবং বাতাসে শুষ্কতা শীতের আগমনের প্রাথমিক লক্ষণ। যা চলতি অক্টোবর মাসের ২০ তারিখের পর থেকেই লক্ষ করা যাবে। এই সময় বঙ্গোপসাগর থেকে আসা বর্ষার মৌসুমি বায়ু ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে এবং উত্তরের হিমেল হাওয়া প্রবেশ করবে রংপুর অঞ্চলে। সাধারণত নভেম্বর মাসে এমনটা হয়। অর্থাৎ এবার একটু আগেভাগেই চলে আসছে শীতের আবহ।’ তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে রংপুর, নওগাঁ ও সিলেট অঞ্চলে ভোরে কুয়াশা পড়া শুরু হয়েছে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে তাপমাত্রাও কমতে শুরু করবে আগামী সপ্তাহ থেকে। তবে পুরো অক্টোবরজুড়ে দুপুরের ও সন্ধ্যায় থাকতে পারে ভ্যাপসা গরমের দাপট।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, এবার বার্ষার মৌসুমি বায়ু কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ফলে শরতের স্বাভাবিক শুষ্কতা এখনো নামেনি। বৃষ্টিও হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। তবে অন্য সময় ধীরে ধীরে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়ে নভেম্বরে উত্তরের জনপদে শীতের বাতাস প্রবেশ করলেও এবার এই পরিবর্তন হতে যাচ্ছে দ্রুত। চলতি অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়বে এবং ধীরে ধীরে বিদায় নেবে। রাতে তাপমাত্রা কিছুটা কমবে। বইতে শুরু করবে উত্তরের বাতাস। তিনি জানান, চলতি বছর লা নিনার প্রভাবে মৌসুমি বৃষ্টির ধারা দীর্ঘায়িত হয়েছে। বৃষ্টিও হয়েছে বেশি। তবে শীতও আসবে দ্রুততার সঙ্গে। আর এর স্থায়িত্ব হবে আসছে বছরের এপ্রিল পর্যন্ত। যদিও এবার অতি তীব্র শীত দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এর পেছনের কারণও এই লা নিনা।
এদিকে আগাম শীতের ব্যাপারে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, চলতি অক্টোবরেই বিদায় নিচ্ছে বর্ষার মৌসুমি বায়ু। একই সময় হিমালয়ের কাছাকাছি থাকা উত্তরের জনপদ রংপুর অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করবে উত্তরের হিমেল হাওয়া। তিনি জানান, আগের বছরের সঙ্গে এবারের অক্টোবরের আবহাওয়ার অবস্থা মেলানো যাবে না। বৃষ্টি বেশি হওয়ার কারণে মৌসুমি বায়ু দ্রুত বিদায় নিচ্ছে। বিপরীতে শীত আসবে তুলনামূলক আগেভাগেই। অক্টোবরের ২০ তারিখের পরই উত্তরের হিমেল হাওয়ার গতি বাড়তে থাকবে। কমতে শুরু করবে তাপমাত্রা। একইসঙ্গে এবারের শীত হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি। আগামী এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে শীতের আমেজ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে