প্রত্যন্ত গ্রাম জনগাঁওয়ের মেয়ে ফুটবলারদের পাশে হলিক্রস কলেজ
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম জনগাঁওয়ের মেয়েদের দেশ-বিদেশের ফুটবল মাঠ দাঁপিয়ে বেড়ানোর পেছনে অন্যরকম লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নির্ভীকতা আর দৃঢ়তার সঙ্গে খেলতে খেলতেই ওই মেয়েদের কয়েকজন এখন পৌঁছে গেছেন জাতীয় পর্যায়েও। বয়ে আনছেন দেশের জন্য গৌরব আর সম্মানও।
এই নারী সংগঠকের তৎপরতাতেই ওই নারী ফুটবলারদের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার হলিক্রস কলেজ কর্তৃপক্ষ ও কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে গোটা দেশের মেয়েদের কাছে তাদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবেও পরিচয় করিয়ে দিতে চায় স্বনামখ্যাত মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
জনগাঁও নারী ফুটবল একাডেমির তিনজন এখন জাতীয় দলের খেলোয়াড়। তারা হলেন মেঘলা রানী, সুরভী রানী ও জবা রানী। মেঘলা জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলকিপার। অন্য দুজনও বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘হঠাৎ ওই গ্রামে বেড়াতে গেলে জনগাঁও নারী ফুটবল একাডেমি আমার চোখে পড়ে। যখন ওখানে গেলাম দেখি, ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী ছোট ছোট মেয়েরা ফুটবল খেলছে। জানতে পারি, জনগাঁও নারী ফুটবল একাডেমিতে ৩০ জন নারী সদস্য নিয়মিত চর্চা করছে। ব্যাপারটা আমাকে আলোড়িত করে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে অতদূরের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা ফুটবল খেলছে! আমি অবাক হয়ে দেখলাম। বিস্ময় আর ঘোর কাটছিল না যেন! অনেকক্ষণ চুপ থেকে বিষয়টা উপভোগ করলাম। এত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এতটা নির্ভীক আর দৃঢ়তার সঙ্গে এভাবে মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারে? আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তারপর আমার মনে হলো, পরিবার আর এলাকার মানুষের সমর্থনেই ওরা এতটা এগিয়েছে। এই সহযোগিতাগুলো না পেলে ওরা এভাবে খেলার সুযোগটাই পেত না।’
‘তখন আমার মনে হলো, এই বাচ্চাগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে। ওদের পাশে যদি না দাঁড়াই, যদি একটু এগিয়ে না দেই তাহলে তো ওরা এগিয়ে যেতে পারবে না। বিশেষ করে নারীদের পাশে আমাদের দাঁড়াতেই হবে। আমরা হলিক্রস কলেজের প্রতিনিধিত্বকারী। আমি হলিক্রস কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। আমি নারীদের প্রতিনিধি। এই নারীদের পাশে আমাদের দাঁড়াতেই হবে। এই নারীদের কথা সবাইকে জানাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জনগাঁও থেকে ফেরার সময় মনে প্রত্যয় ছিল, তাদের জন্য কিছু করতেই হবে। তাদের কথাও দিয়েছিলাম, আমি কিছু করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় ফিরে কলেজ কর্তৃপক্ষ, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড সবার সঙ্গে শেয়ার করি, কাছ থেকে দেখা জনগাঁওয়ের ফুটবলার মেয়েদের অন্যরকম লড়াইয়ের কথা। সেখানে দরিদ্র্য পরিবারের মেয়েরা প্রতিদিনের পুষ্টিও হয়তো পাচ্ছে না। তবুও তাদের অনুশীলন থেমে থাকে না। কেবল শখ নয়, প্যাশন আর দক্ষতা নিয়েই নিজেদের ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলছে জনগাঁওয়ের মেয়েরা। উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা আর কোচের নিরলস পরিশ্রম ওদের অনুশীলনকে আরও শাণিত করছে। সামাজিক বাধা তুচ্ছ করে পায়ে পায়ে এগিয়েছে ফুটবল নিয়ে।’
‘এতটাই দৃঢ়তার সঙ্গে ওরা এগোচ্ছে যে, ওদের তিনজন এখন জাতীয় দলের খেলোয়াড়। ওরা হলো মেঘলা রানী, সুরভী রানী, জবা রানী। মেঘলা জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলকিপার। বাকি দুজনও বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। যথাযথ প্রশিক্ষণ আর নিজেদের অপার চেষ্টায় ওরা আজ স্বপ্ন পূরণের পথে। ওরা স্বপ্ন দেখে, জাতীয় পর্যায়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেশের হয়ে শিরোপা জয়েরও।’
তিনি বলেন, ওদের এই প্রতিকূল পথচলা, সংকট আর স্বপ্নের কথা জানার পর হলিক্রস কলেজ কর্তৃপক্ষ ও কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়, ‘ওদের পাশে আমরা থাকব। এই নারী ফুটবলারদের পাশে আমরা আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। গোটা দেশ ওদের কথা জানুক, ওদের এগিয়ে যাওয়ার পথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক সবাই- এটাই প্রত্যাশা।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে