Views Bangladesh Logo

আবার সক্রিয় মধুপুর ফল্ট

বিপদজনক অবস্থানে ঢাকার যেসব এলাকা

প্রায় দুই কোটি মানুষের আবাসস্থল ঢাকা ভূমিকম্পের জন্য এখন একটি বিপজ্জনক শহর। কারণ এই শহরের ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা টেকটনিক প্লেটের মধুপুর ফল্ট আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যেখানে প্রায় ৪০০ বছর ধরে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এই প্লেটের কাছাকাছি থাকা সাব প্লেটগুলো আবার ঢাকা শহরের ২০ কিলোামটারের মধ্যে। এসব প্লেটের শক্তিশালী চাপ মুক্তির সময় বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকায় নেমে আসবে ভয়াবহ বিপর্যয়। তবে ঢাকার সব এলাকায় একই রকম ক্ষয়ক্ষতি হবে না। কিছু এলাকায় অনেক বেশি হবে এবং কিছু এলাকায় তুলনামূলক কম ক্ষয়ক্ষতি হবে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রই এ তথ্য জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেমন্ট-ডোহের্টি আর্থ অবজারভেটরির ভূতাত্ত্বিক বিভাগ জানায়, গত ২১ নভেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিলো তা ছিলো গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। এটি হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বোমার শক্তির সমতুল্য শক্তি নির্গত করেছিল। ওই ভূমিকম্পের প্রভাবে ঢাকা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনায় ফাটল ধরার পাশাপাশি ভবন ও দেওয়াল ধসে ১০ জনের মৃত্যুর ঘটে। আহত হয় প্রায় ৪ শততাধিক মানুষ। এ থেকে স্পষ্ট যে এবারের ক্ষয়ক্ষতি যা হয়েছে তা রাজধানী ও এর আশপাশেই হয়েছে। তবে মধুপুর ফল্ট ও এর আশপাশের সাব-ফল্টে এর থেকে তীব্র, যেমন ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও ঢাকার বেশকিছু এলাকায় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

রাজধানী ঢাকার যেসব এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী এ ব্যাপারে ভিউ বাংলাদেশকে বলেন, রাজধানীর উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এসব অংশের বিস্তির্ণ এলাকায় মাটি ও বালু ভরাট করে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এই এলাকার মধ্যে রয়েছে- খিলক্ষেত, ভাটারা, মোহাম্মদপু, আদাবর, কামরাঙ্গীর চর, মেরাদিয়া, হাজারীবাগ,ভাষাণটেক, রামপুরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, ডেমরা ও রূপনগর থানা এলাকার একটি বিরাট অংশ। নিম্ন জলাভূমি ও বন্যাকবলিত এলাকা ভরাট করে এসব এলাকায় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বড় মাত্রার ভূমিকম্পে এসব এলাকার মাটিতে বড় ফাটল ও কিছু এলাকা দেবে যাওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। পুরনো ঢাকার সবগুলো থানা এলাকার মাটি অনেক শক্ত হওয়ায় সেখানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। তবে সেখানকার অধিকাংশ পুরোনো ভবন ধসে পরতে পারে। সেগুলোর টেম্পার (স্থায়ীত্ব) শেষ হওয়ার কারণে এমনটা হতে পারে। এছাড়া পুরো পূর্বাচল এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।

ঢাকার তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা:
ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকার মাটি শত শত বছরের পুরনো। তাই মাটির গঠনের কারণে এসব এলাকার ভূমিকম্পের সহ্য ক্ষমতা বেশি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার রমনা, পল্টন, মগবাজার, নিউমার্কেট, লালমাটিয়া, কোতয়ালি, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মতিঝিল, ধানমন্ডি, শের-ই বাংলা নগর, মিরপুর, ক্যান্টনমেন্ট, পল্লবী, শাহ-আলী, লালবাগ, গেন্ডারিয়া, গুলশান ও তেজগাঁও থানা এলাকাসহ বেশ কিছু পুরনো মাটির এলাকায়। বড় ভূমিকম্পেও এসব এলাকার ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হতে পারে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবাইয়াত কবীর ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঢাকায় ৮ বা ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হবার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা বা ফল্টলাইন কিংবা সাব ফল্ট নেই। তবে ঢাকার অদূরে (৬০ কিলোমিটার দূরে) মধুপুর অঞ্চলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো ফল্টলাইন আছে। এই মাত্রার কম্পনেই ঢাকার নতুন ভরাট করা এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হবে। হতাহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে অতীত সব রেকর্ড। এটি হলে শহরের ভৌগলিক অবস্থানই পাল্টে যেতে পারে। যে দৃশ্য হবে খুবই করুণ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল ভিউজ বাংলাদেশকে এ ব্যপারে বলেন, ‘আমরা সব সময় আন্দোলন করে গেছি ঢাকার চারপাশের নিচু ও বন্যা কবলিত এলাকা যাতে ভরাট না হয়। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে ওইসব এলাকায় এখন হাজার হাজার ভবন উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত বড় ভূমিকম্প হলে সেখানেই হবে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। অর্থাৎ এমন বিপর্যয়ের জন্য প্রকৃতির চেয়ে আমরাই বেশি দায়ি থাকবো।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ