Views Bangladesh Logo

জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে মতোবিরোধ

এক সপ্তাহের সময় শেষে আসছে সরকারে সিদ্ধান্ত, তবে তা কতটা বিধিসম্মত?

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে মতবিরোধ দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিল অন্তর্বর্তীকালিন সরকার। গত ৩ নভেম্বর দেওয়া ওই সময়সীমা শেষ হয়েছে ১০ নভেম্বর। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতবিরোধ দূর করে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো তো পরের কথা নিজেদের কোনো মতামতই প্রকাশ করেনি। অধিকাংশ দল এখনও তাদের আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে। এ অবস্থায় আগামী ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে এমন একতরফা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সংবিধান সম্মত হবে না বলে মত দিয়েছেন আইনজ্ঞরা।


বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের প্রস্তাবে অনড় রয়েছে, যা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে তারা দেখছে। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং আরও কয়েকটি দল এ মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজনের জন্য সরকারের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। অর্থাৎ এই ইস্যুতে দেশের রাজনৈতিক এখন অঙ্গন বেশ উত্তপ্ত। কোনো রাজনৈতিক দল অন্য কাউকে কোনো ধরণের ছাড় দিতে নারাজ। এমনকি সরকারও তার সিদ্ধান্তে অনড়।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, 'আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলাম। তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সাত দিনের মধ্যে তারা আলোচনা না করায় এখন সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারের দায়িত্ব ও এখতিয়ার আছে এটা করার। আমরা ১৩ নভেম্বর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’ তিনি আরও বলেন, 'সরকারের দরজা সব দলের জন্যই খোলা আছে। তবে নতুন কোনো আলোচনার আমন্ত্রণ এসেছে বলে শুনিনি। আমার ধারণা, এখন সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবে। আমাদের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা আছে।'


নির্বাচনের আগে জুলাইয়ের সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করা যেমন সংবিধান পরিপন্থী তেমনি নির্বাহী আদেশে এটি বাস্তবায়নও সংবিধান পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘জুলাই সনদ ও গণভোটের অধ্যাদেশ প্রধান উপদেষ্টা জারি করতে পারেন না। এই ক্ষমতা কেবল সংসদ অথবা রাষ্ট্রপতির। আইন পাস করার ক্ষমতা হলো সংসদের। আর ক্ষেত্রবিশেষে যখন সংসদ থাকে না, তখন সাময়িকভাবে অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। প্রধান উপদেষ্টা তো প্রধানমন্ত্রীর মতো। অর্থাৎ নির্বাহী বিভাগের প্রধান। তিনি তো আইন পাস করতে পারেন না।’


সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘আইনত প্রধান উপদেষ্টা গণভোটের আদেশ জারি করতে পারেন না। সব দলের ঐক্যমতের ভিতিত্ততে এটা পারেন কেবল রাষ্ট্রপতি। সব দলের কথা বললাম এ কারণে যে, বিষয়টি পরে সংসদে উপস্থাপন করে পাশ করতে হবে। সংসদে এটা পাশ না হলে আইনসিদ্ধ হবে না।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। এটা কেবল জাতীয় সংসদ পারে।’


অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, জুলাই সনদ ঘোষণা বা গণভোটের আয়োজন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকার চাইলে দুটোই পারে। তবে এটা পরে জাতীয় সংসদে পাশ হবে হবে।


এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জুলাই সনদ বা গণভোট নিয়ে সময় বেঁধে দিয়ে কিছু হবে না। জণগণের মতামতের বাইরে গিয়ে এই সরকার কিছু করলে তার দায় তাদেরই নিতে হবে। বর্তমান সরকারকে মনে রাখতে হবে তারা কিন্তু নির্বাচিত কোনো সরকার না।’


জুলাই সনদের বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হলে এর দায় সরকারের ওপরেই বর্তাবে বলে সতর্ক করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির খন্দকার মোশাররফ হোসেন। মঙ্গলবার দুপুরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জুলাই সনদের বিষয়াদির বাইরে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে সনদে স্বাক্ষরকারী কোনো দলের জন্য তা মান্য করার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সে ক্ষেত্রে সকল দায় দায়িত্ব সরকারের উপরই বর্তাবে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ