রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ১৪ হাজার মামলা প্রত্যাহার চূড়ান্ত
ঢাকা মহানগড়সহ দেশের ৬৪ জেলায় বিগত সরকারের আমলে দায়ের হওয়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক প্রায় ১৪ হাজার মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে। ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত হওয়া এসব মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে গত ৫ আগস্টের পরের কোনো মামলা এ তালিকায় নেই।
আইনমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৬৪ জেলায় বিগত সরকারের আমলে দায়ের হওয়া ১৪ হাজার ১০৯টি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পরে আইন ও বিচার বিভাগ এসব মামলা কয়েক দফা যাচাই-বাছাই করে প্রত্যাহারের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। মামলাগুলোর মধ্যে শুধু ঢাকা জেলায়ই রয়েছে ৫ হাজার ৬৯০টি মামলা। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম জেলার ১ হাজার ৭৭২টি মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি দিয়ে মামলার নম্বর উল্লেখ করে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও পরামর্শ দেয়ার জন্য বলেছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৪৯৪ ধারার আওতায় এসব মামলাগুলো প্রত্যাহার করে না চালানোর জন্য বলেছেন আইন মন্ত্রণালয়।
এর আগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক কারণে হওয়া হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুটি কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি ও অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি। জেলা পর্যায়ের কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সদস্য পুলিশ সুপার (মহানগর এলাকার জন্য পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার) ও পাবলিক প্রসিকিউটর (মহানগর এলাকার মামলাগুলোর জন্য মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর)।
জেলা কমিটি রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে হয়রানির জন্য করা মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেই সুপারিশ, মামলার এজাহার, অভিযোগপত্রসহ আবেদন পাওয়ার পর নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী তথ্যাদিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠান গত মে মাসেই।
এদিকে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং সদস্যসচিব জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব। আর সদস্য হিসেবে আছেন জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, অতিরিক্ত সচিব (আইন ও শৃঙ্খলা) ও যুগ্ম সচিব (আইন) এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পর্যায়ের নিচে নয়)। এই কমিটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক এসব মামলা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংসহ সব ধরনের যাচাই-বাছাই দেখভাল করছে।
এছাড়া বিগত সরকারের আমলে দায়ের হওয়া আরও কোনো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা থাকলে তা জেলা ম্যাজিস্ট্রের ও আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কার্যালয়ের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। তবে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে বিগত সরকারের আমলে হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর আওতাধীন মামলাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্য ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৫৪ এর ১০ (৪) ধারার বিধানমতে কমিশনের লিখিত আদেশ ছাড়া আপাতত প্রত্যাহার হচ্ছে না। এছাড়া গত ৫ আগস্টের পরের কোনো মামলা প্রত্যাহারের জন্য এখনই কোনো সুপারিশ করা হচ্ছে না। তবে পর্যায়ক্রমে পরবর্তী সময়ে এসব মামলার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে হাজার হাজার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছিল বিরোধী মত ও দলের মানুষের বিরুদ্ধে। এগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রত্যাহার করছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘হাসিনা সরকারের আমলে দেশের ৬৪ জেলায় দায়ের হওয়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো থেকে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১৪ হাজার মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই করে আরও মামলা প্রত্যাহার হতে পারে।’ ৫ আগস্টের পরের কোনো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এমন মামলা থাকলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাও পরবর্তীতে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হবে।
এ ব্যাপারে মানবাধিকার নেত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘এটা বর্তমান সরকারের একটি খুবই ভালো কাজ বলে আমি মনে করি। মানুষকে হয়রানি করার জন্য করা মামলা প্রত্যাহার হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। যে কোনো সরকারের আমলেই করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা উচিত। ন্যায়বিচারের স্বার্থেই এটা দরকার।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে