Views Bangladesh Logo

ভয়ে ফাঁকা বগুড়ার চকভোলাখাঁ

Masum   Hossain

মাসুম হোসেন

বিকেল নামলেই চকভোলাখাঁ গ্রামে মাঠজুড়ে দেখা যেত শিশুদের কোলাহল, চায়ের দোকানে জমত আড্ডা; কিন্তু আজ সেই গ্রাম যেন নিস্তব্ধ, আতঙ্কিত, জনমানবহীন হয়ে পড়েছে। বাড়ি বাড়ি ঝুলছে তালা। গ্রেপ্তার এড়াতে ফেরারি জীবনযাপন করছেন তারা। এসবের শুরু ছয় দিন আগে একটি রাত থেকে।

গত ৪ অক্টোবর রাতে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার চকভোলাখাঁ গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে। তিনি চকভোলাখাঁ গ্রামেরই বাসিন্দা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে থানা পর্যন্ত তাকে নিয়ে যেতে পারেনি পুলিশ। একদল গ্রামবাসী তাকে পুলিশের কাছ থেকে হাতকড়াসহ ছিনিয়ে নেয়। এরপর থেকেই পলাতক রাজু।

রাজুকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। মামলায় নাম উল্লেখ করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা রাজুসহ ২০ জনের। অজ্ঞাত রাখা হয় আরও ২০০ জনকে। এরপরই গ্রামে নামে পুলিশের অভিযানের ঝড়।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, পুলিশ আসামি ধরতে নয়, গ্রামবাসীকে শাস্তি দিতেই অভিযান চালাচ্ছে।

গত ৫ অক্টোবর বিকেলে একই পরিবারের চারজনকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তারা হলেন মাহবুর রহমান (৪৮), তার স্ত্রী পারুল বেগম (৩৮), ছেলে বাপ্পি হাসান (২৭) ও মাহবুরের আরেক ছেলে মারুফ হাসানের স্ত্রী রাফিয়া (১৯)। তাদের নিজ বাড়ি থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় মারুফ কর্মস্থলে অবস্থান করায় তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

গ্রামের লোকজনের দাবি, মাহবুরের পরিবার রাজুকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত ছিলেন না। ওই সময় নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন তারা।

৫ অক্টোবর শুধু এ চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। সেদিন মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে ১১ জন নারী ও ১০ জন পুরুষ রয়েছেন।

গ্রামের বৃদ্ধ আলেফা বেগম বলেন, পুলিশ ঘরের টিনের দরজা ভেঙে ঢুকেছে, মেয়েদেরও ছাড়ছে না। আমার ভাতিজার বউ ৩০ বছরের রেবেকাকেও ধরে নিয়ে গেছে।

পুলিশের এমন অভিযানকে ঘিরে গ্রামবাসী প্রশ্ন তুলেছেন, এটি কি আসামি ধরার অভিযান নাকি গণআতঙ্ক সৃষ্টির কৌশল?

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দাদের অভিযোগ, একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতো আচরণ করছে পুলিশ। গ্রামের সবাই অপরাধী নন, তবুও পলাতক। নিজের বাড়িতে ফিরতেও ভয় পাচ্ছেন তারা।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে চকভোলাখাঁ গ্রামটিতে প্রবেশ করতেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়। এক টিনের ছাউনির নিচে দাঁড়াতেই কিছু মানুষ জড়ো হলেন। কথা শুরু করতেই ক্ষোভ থেকে তারা বললেন, সংবিধান রয়েছে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। সংবিধান থেকে এটা তুলে দিয়ে লেখা হোক, সকল ক্ষমতার উৎস পুলিশ।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন গোলাম মোস্তফা (৫৫), আব্দুস সাত্তার (৬০) ও রজ্জবসহ (৫৭) আরও অনেকে।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, রাজুকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। একটা পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে পালিয়ে গেছেন তিনি। এটা পুলিশের বড় ব্যর্থতা। অথচ সেই ব্যর্থতা ঢাকতে গ্রামজুড়ে চলছে ধরপাকড়।

জানতে চাইলে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) শাহীনুজ্জামান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, চকভোলাখাঁ গ্রাম থেকে এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর পুলিশ কাউকে হয়রানি করে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে চকভোলাখাঁর মানুষ দাবি করছেন, নির্দোষদের হয়রানি করা বন্ধ হোক। গণগ্রেপ্তার নয়, তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হোক।

তারা প্রশ্ন তুলেছেন, রাষ্ট্র ব্যবস্থাই যদি মানুষকে শত্রু ভাবতে শুরু করে, তবে সেই রাষ্ট্রের কাছে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ