বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড: ‘ডেফিনেশনটা’ কী?
সম্প্রতি বাংলাদেশে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ বিষয়টি বিভিন্নভাবে আলোচনায় এসেছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান দাবি করেন, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে কেউ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি।
এদিকে ৫ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে বহু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও রয়েছে একাধিক। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- এসময়ে যারা হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের কি বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়নি?
এ বিষয়ে একাধিক আইনজ্ঞের সঙ্গে কথা হয় ভিউজ বাংলাদেশ-এর। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কী বা আইনে এর সংজ্ঞা কী, সেটি ব্যাখ্যা করেছেন আইনজ্ঞরা।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘সব ধরণের হত্যাই আইনের ভাষায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নয়।’
তিনি বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং হচ্ছে একপ্রকার বেআইনি হত্যাকাণ্ড যা সাধারণত রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব বা অপরাধীকে রাষ্ট্রপ্রদত্ত আইনত বিচারের পূর্বেই হত্যা করা হয়। আরো পরিস্কার করে বললে, বিচারের আগেই রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বা যেকোনো সরকারি বাহিনীর হাতে কিংবা হেফাজতে থাকাকালীন কাউকে হত্যা করাকেও বিচারবহির্ভূত হত্যা বলা হয়। এছাড়া হেফাজতে থাকাকালীন নির্যাতনে কারো মৃত্যু হলে তাও হত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা বা মৃত্যুদণ্ড অথবা একটি আইন বহির্ভূত হত্যা বলতে বিচারিক কার্যধারার দ্বারা অনুমোদিত আইনের প্রক্রিয়া ব্যতীত একজন ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃত হত্যা। রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনী বা সংস্থা দ্বারা এমন হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এর বাইরে অভিযুক্ত কাউকে সারাধারণ মানুষ পিটিয়ে বা যেকোনোভাবে হত্যা করাকে বিচারবহির্ভূত হত্যা বলা হয় না। এটাকে সাধারণ হত্যাই বলা হয়।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিশির মনির বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হলো এমন এক ধরনের হত্যা, যা বিচারিক প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে ঘটে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক রাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের কথা জানা যায়। তবে সব সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার নজিরও রয়েছে।’
আইনজীবীদের মতে, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সম্ভবত পৃথিবীর কোনো দেশেরই সংবিধান সমর্থিত নয়। বাংলাদেশের আদালতও এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ঘোর বিরোধী।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রীয় বাহিনী ছাড়াও বিশেষ কোনো রাজনৈতিক বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কর্তৃকও সংঘটিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা সরাসরি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে অভিহিত করা হয়।
প্রথম জেনেভা কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৩(ডি)-তে বলা হয়েছে- ‘উপযুক্ত এবং নিয়মিতভাবে গঠিত আদালতের মাধ্যমে বিচারের রায় না নিয়েই কারো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে বিচারবহির্ভূত হত্যা হিসেবে গণ্য করা হয়- যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে