দখলে সড়ক–ফুটপাত, যানজটে নাকাল বগুড়াবাসী
বগুড়ার মহাসড়ক থেকে শুরু করে শহরের অভ্যন্তরীণ সড়ক পর্যন্ত—সবখানেই এখন দখলের চিত্র। একের পর এক সড়ক অবৈধভাবে দখল হয়ে পড়ছে। মহাসড়কই যেন পরিণত হয়েছে পার্কিং জোনে। হাইওয়ে হোটেল, যানবাহন সার্ভিসিং সেন্টার ও ওয়ার্কশপের সামনে বাস-ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন।
তবে কেবল মহাসড়কই নয়, শহরের ভেতরের সড়কগুলোও একইভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। শুধু ফুটপাত নয়, মূল সড়কের ওপরও বসানো হচ্ছে অস্থায়ী বাজার। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে সারাদিন সড়কগুলো অচল হয়ে থাকে। বিশেষ করে অফিস ও স্কুল-কলেজ ছুটির সময় যানজট ভয়াবহ রূপ নেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও হাইওয়ে পুলিশের দুর্বল তদারকির কারণে এ বিশৃঙ্খলা দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে।
পৌরসভার দায়িত্ব অবহেলা
বগুড়া শহরজুড়ে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে অস্থায়ী দোকান বসানো হচ্ছে, ফলে ভোগান্তি ক্রমেই বাড়ছে। শহরের কাঁঠালতলা এলাকায় সড়কজুড়ে স্থায়ীভাবে বাজার বসে আছে। দীর্ঘদিনের এই দখল পরিস্থিতি সত্ত্বেও স্থায়ীভাবে উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কাঁঠালতলার ওই সড়কে রয়েছে চুড়িপট্টি, ফতেহ আলী ও রাজাবাজার—যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচল। ব্যস্ত এ এলাকায় সড়কের ওপরই বসানো হয় ফলের বাজার, যার কারণে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
শুধু কাঁঠালতলা নয়, সাতমাথা এলাকা জুড়েও সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বসছে দোকান। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হলেও তা টেকে না। কিছুদিনের মধ্যেই ফের দখল হয়ে যায় সড়ক ও ফুটপাত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মাসুম আলী বেগ ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে সড়ক দখলমুক্ত করি। এরপরই আবার সড়কে বাজার বা অস্থায়ী দোকান বসানো হয়। শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’
মহাসড়ক দখল
বগুড়ার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের তিনমাথা থেকে মাটিডালি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বাস-ট্রাক দখলে রাখায় এক লেন প্রায় সারাদিন বন্ধ থাকে। অনেক সময় ব্যক্তিগত কাজেও মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে রাখা হয়, ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এরপরও হাইওয়ে পুলিশের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এতে জনভোগান্তি প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে, পাশাপাশি সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে।
প্রতিরাতে শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া ও নয়মাইল এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের এক লেন পুরোপুরি দখল হয়ে যায়। মাঝিড়ায় জব্বার হাইওয়ে হোটেল ও নয়মাইলে তাজ হাইওয়ে হোটেলের সামনে যাত্রাবিরতির সময় বাস পার্কিং করা হয়। এতে ওই অংশ দিয়ে ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ভুল করে কোনো গাড়ি ঢুকলে পরে ঘুরে বের হতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. শহিদ উল্ল্যাহ বলেন, ‘মহাসড়কে গাড়ি পার্কিং করা অবৈধ। আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে, হাইওয়ে হোটেলগুলো সড়ক দখল করে পার্কিং করে। আমরা মনে করছি, সড়কের ধারে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করলে সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে, শিগগিরই মহাসড়ক দখলমুক্তে অভিযান শুরু হবে।’
ফুটপাত ও সড়ক দখল
বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে বাড়ি ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের ঘটনাও কম নয়। শহরের সাতমাথা, কলোনি ও বনানী এলাকাজুড়ে ফুটপাত ও সড়কের ওপর অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। বনানী এলাকায় গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) একটি জায়গায় ফুটপাতের ওপর দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করেছে, আর পাশের একটি বাড়ি পুরোপুরি দখলে রেখেছে ফুটপাত।
বগুড়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রায়ই অভিযান চালিয়ে সড়ক দখলমুক্ত করি। কিন্তু কিছুদিন পরই ফের অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব।’
গাকের ফুটপাত দখল প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গাকের নম্বরে ফোন করলে জাহাঙ্গীর আলম নামে পরিচয় দেয়া একজন বলেন, ‘আমরা ফুটপাত দখল করিনি। আপনি নিজে এসে দেখে যান।’
তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, একটি বাড়ির সামনের ফুটপাতের পুরো অংশ দখল করে রাখা হয়েছে। তার পাশেই গাকের নির্মিত প্রাচীর ফুটপাতের ওপর দিয়ে উঠেছে।
নাগরিকদের ক্ষোভ
আশরাফুল আলম, সাগর হোসেনসহ অন্তত ২০ জন বগুড়াবাসী জানান, শহরের ফুটপাত ও সড়ক দখল এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে তীব্র যানজটের কারণে প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতায় এ সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে।
তাদের মতে, ‘শহরের যানজট ও অবৈধ দখল সমস্যা সমাধানে দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে হবে। সড়ক দখলকারীদের উচ্ছেদ, বিকল্প বাজার স্থাপন ও যানবাহনের নির্দিষ্ট রুট নির্ধারণের মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান সম্ভব।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে