Views Bangladesh Logo

‘প্রভাবের প্রদর্শনী’

মব নির্মূলে সরকারের হস্তক্ষেপ চান বিশিষ্টজনরা

Masum   Hossain

মাসুম হোসেন

রাত ৮টা। অন্যদিনের মতোই ব্যস্ত শহর। হঠাৎ দেখা গেল, কয়েকজন যুবক এক শিক্ষককে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে মারধরও করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সেই শিক্ষক পানি পান করতে চাইলেন। পানির বোতলও এগিয়ে দিলেন এক যুবক। তবে তাকে পানি পান করানো হয়নি, ঢেলে দেয়া হয় তার মাথায়।

ঘটনাটি বগুড়া শহরের। মব তৈরি করে ওই শিক্ষকের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ওই সময় আশপাশে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে ঘটনা দেখছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভিডিও ধারণ করছিলেন। কেউ কেউ নীরব দর্শক হয়েছিলেন। এই মবের নেতৃত্বে ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক আবদুল্লাহ আল সানী। তার সঙ্গে ছিলেন বগুড়া জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ যোবায়ের।

৫ মে মবে নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষক বগুড়া হোমিওপ্যাথিক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম মিল্লাত। তিনি জেলা স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।

শহরের জলেশ্বরীতলায় নিজ চেম্বারে আক্রান্ত হন এস এম মিল্লাত। সেখান থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। পথে একাধিকবার মারধরের শিকার হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনাটির ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, মিল্লাতের মুখের সামনে পানির বোতল ধরেন সানী। এরপরই বোতলের পানি তার মাথায় ঢেলে দেন তিনি।

১৪ এপ্রিল মব সৃষ্টি করে শহরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের আয়োজনে বাধা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজক উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর জেলা কার্যালয়েও হামলা চালানো হয়। সেবারের মবের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ যোবায়ের, যুগ্ম আহ্বায়ক রাব্বি ও সংগঠক সিফাত উল্লাহ।

৬ জানুয়ারি শহরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি গুঁড়িয়ে দেয়া হয় ঐতিহাসিক টাউন ক্লাব। পুড়ে যায় ক্লাবটির বহু পুরোনো নথি, ছবি, আসবাবপত্র ও অর্জিত অনেক ট্রফিও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে আরও অনেকে এই মব তৈরিতে অংশ নেন।

২২ জুন পুলিশি হেফাজতে থাকা শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত আব্দুল মতিন সরকার মবের শিকার হন। আদালত প্রাঙ্গণেই তার ওপর হামলা চালানো হয়। ওই সময় আব্দুল মতিনকে দেখতে আসা তার শ্যালকও মারধরের শিকার হন।

মব নিয়ে কথা হয় বগুড়ার অন্তত ২০ জনের সঙ্গে। তাদের কেউ কেউ শিক্ষক, কেউ কেউ সাবেক জনপ্রতিনিধি।

তারা বলছেন, মব এখন সমাজ নিয়ন্ত্রণের অংশ যা দেশের জন্য ভয়াবহ বার্তা বহন করছে। মবকে এখনই নির্মূল করতে হবে। মবের ঘটনাগুলো অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, মব সৃষ্টিকারী কথিত জনতা শুধু হাত হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছেন। আর মাথা আছে অন্য কোথাও। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিহিংসা থেকেও মব তৈরি করা হয়।

মবকে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলে দাবি করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কমিটির জেলা শাখার সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন।

জেলা সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সভাপতি ও আইনজীবী দিলরুবা নূরী বলেন, বগুড়াসহ দেশজুড়ে এখন পর্যন্ত যতগুলো মবের ঘটনা ঘটেছে, একটিরও বিচার হয়নি। এমনকি আদালত প্রাঙ্গণেও পুলিশি হেফাজতে থাকা ব্যক্তির ওপর হামলা হচ্ছে। এ থেকে স্পষ্ট হয়, সরকারের প্রশ্রয়ে মবের ঘটনাগুলো ঘটছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে মব প্রতিরোধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবন অনিরাপদ থাকবেই।

তিনি মনে করেন, সরকার চাইলে মব বন্ধ হবে। সরকারের নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ভূমিকাই পারে মবকে রুখে দিতে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ