আইসিটি
চিপ নিয়ে চীন-মার্কিন লড়াই: ক্রেতা যখন প্রতিদ্বন্দ্বী
২০১৫ সাল। ইন্টেলের সিইও ব্রায়ান ক্রজানিচ তখন সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসসিয়েশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে। স্বাভাবিকভাবেই, তাঁর নিয়মিত যাতায়াত ছিল ওয়াশিংটনে, যেখানে তিনি ট্যাক্স কমানো কিংবা নিয়ম-কানুন শিথিল করার মতো চিরাচরিত ব্যবসায়িক দাবিগুলোই জানাতেন। কিন্তু ওই বছর তিনি আর ব্যবসায়িক সুবিধা চাইলেন না, সরাসরি বললেন, “চীন যেভাবে আমাদের চিপ ইন্ডাস্ট্রি দখল করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সেটা আমেরিকার জন্য বিপজ্জনক। এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”
হুয়াওয়ের উত্থান
হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেইকে দেখলে প্রথমটায় তাঁকে সিলিকন ভ্যালির শান্ত-স্বভাবের কোনো নির্বাহীর মতোই মনে হয়। কিন্তু তাঁর কোম্পানির বৈশ্বিক প্রভাব এই সরল চেহারার থেকে অনেক গুণ বড়। বিশ্বের অসংখ্য দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক - যা আমাদের প্রতিদিনকার ভয়েস কল, মেসেজ আর ডেটা বহন করে - তার বিরাট অংশই দাঁড়িয়ে আছে হুয়াওয়ের ইকুইপমেন্টের ওপর। বহু জায়গায় হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করে মোবাইল ফোনের সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
চীনের চিপ যুদ্ধ: শি জিনপিংয়ের আহবান থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তর
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস। সুইজারল্যান্ডের দাভোসের মঞ্চে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যখন বিশ্বের নেতাদের সামনে দাঁড়ালেন, তখন তাঁর কণ্ঠে ছিল শুধুই শান্তির বার্তা। সদ্য ক্ষমতা নেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন 'আমেরিকা ফার্স্ট'-এর ডাক দিচ্ছেন, শি তখন বৈশ্বিক বাণিজ্যে 'পারস্পরিক লাভের' কথা বললেন - গণমাধ্যম তাঁকে দিল 'গ্লোবালাইজেশনের রক্ষক' খেতাব। কিন্তু সেই আপাত শান্ত এবং উদার ঘোষণার আড়ালে ভেতরে ভেতরে চলছিল এক ভিন্ন পরিকল্পনা।
ইনটেল কীভাবে উদ্ভাবন ভুলে গেল?
কয়েক দশ ধরে সেমিকন্ডাক্টর জগতে ইনটেল ছিল নিরঙ্কুশ সম্রাট, মার্কিন প্রযুক্তি শক্তির প্রতীক। তাদের আবিষ্কার করা মাইক্রোপ্রসেসর ও বিখ্যাত x86 আর্কিটেকচার ছিল পিসি থেকে ডেটা সেন্টার - সবকিছুর প্রাণ।
ডেটা সুরক্ষার নামে ডিজিটাল বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি?
গত ৬ নভেম্বর সরকার দুটি নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে, যা দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেটা ব্যবস্থাপনা, গোপনীয়তা এবং ডেটা বিনিময় কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনবে। এগুলো হলো Personal Data Protection Ordinance (PDPO) এবং National Data Governance Ordinance (NDGO)।
অ্যাপল সিলিকন
স্টিভ জবসের হাতে গড়া অ্যাপলের কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এমন সব পণ্য, যা দেখতে সুন্দর, স্পর্শে আরামদায়ক এবং কাজে নিখুঁত। তাদের এই ‘দেখা, অনুভূতি ও কাজের মান’ নিয়ে অ্যাপল বরাবরই ছিল ভীষণ যত্নশীল। কিন্তু খুব কম লোকই জানেন যে আইফোন, আইপ্যাড ও ম্যাককে চালিত করা সেই অতি ক্ষুদ্র চিপগুলো অ্যাপল নিজেই ডিজাইন করে। বস্তুত, টিএসএমসির নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে যে 'ফ্যাবলেস বিপ্লব' হয়েছিল, অ্যাপল ছিল সেই সেমিকন্ডন্ডাক্টর দুনিয়ার অন্যতম প্রধান বিজয়ী।
আর্থিক খাতে জালিয়াতি দমনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)
“প্রতারণা হলো এক ধরনের অস্বাভাবিক, সুচিন্তিত, সূক্ষ্মভাবে আড়াল করা, সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল এবং প্রায়ই অত্যন্ত সুসংগঠিত অপরাধ, যা নানান রূপে প্রকাশ পায়।” – ভ্যান ভ্লাসেলেয়ার প্রমুখ
ফ্যাবলেস বিপ্লব
একসময় সিলিকন ভ্যালিতে একটি প্রবাদ খুব প্রচলিত ছিল: ‘রিয়েল ম্যান হেভ ফ্যাবস’ - অর্থাৎ, সত্যিকারের সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি তারাই, যাদের নিজস্ব ফ্যাব্রিকেশন (ফ্যাব) প্ল্যান্ট বা কারখানা আছে। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে, এক নতুন প্রজন্মের হাত ধরে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এই উদ্যোগীরা নিজেরা চিপ ডিজাইন করতেন, কিন্তু উৎপাদনের কাজটি আউট সোর্স করতেন, যার প্রধান অংশীদার ছিল টিএসএমসির মতো কোম্পানি। এই নতুন জন্ম নেয়া ব্যবসায়িক মডেলের নাম হলো ‘ফ্যাবলেস মডেল’।
ইন্টেলের ‘ইনোভেটর্স ডাইলেমা’
সময়টা ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস। সান ফ্রান্সিসকোর ম্যাকওয়ার্ল্ড কনফারেন্সের মঞ্চে যেন ইতিহাস রচিত হতে চলেছে। একে একে মঞ্চে উঠে এলেন অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস আর ইন্টেলের সিইও পল ওটেলিনি। জবস সেদিন ঘোষণা দিলেন, এখন থেকে সব ম্যাক কম্পিউটারই চলবে ইন্টেল প্রসেসরে। সিলিকন ভ্যালির ইতিহাসে এ ছিল এক বিরাট মোড়, কারণ এতদিন পর্যন্ত অ্যাপলই ছিল একমাত্র বড় কম্পিউটার কোম্পানি, যারা ইন্টেলের x86 চিপ ব্যবহার করত না। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে পিসি জগতে ইন্টেলের আধিপত্য সেদিন চূড়ান্ত পূর্ণতা পেল।
লিথোগ্রাফি নিয়ে ঐতিহাসিক লড়াই
সালটা ছিল ১৯৯২। একদিন ইন্টেলের প্রযুক্তি গবেষক জন ক্যারাদারস এক অদ্ভুত অনুরোধ নিয়ে হাজির হলেন কোম্পানির সিইও অ্যান্ডি গ্রোভের কাছে। তিনি এমন একটি প্রযুক্তির গবেষণার জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলার তহবিল চাইলেন, যা তখনো কাজ করবে কি না কেউ নিশ্চিত ছিল না। সেই প্রযুক্তির নাম এক্সট্রিম আলট্রাভায়োলেট (EUV) লিথোগ্রাফি। এই লিথোগ্রাফি হলো সিলিকনের ওপর ইলেকট্রনিক সার্কিট বসানোর এক অতি সূক্ষ্ম নির্মাণ প্রক্রিয়া। তখন ইন্টেল ছিল বিশ্বের শীর্ষ চিপ নির্মাতা, আর গ্রোভের হাতে ছিল নগদ অর্থের বিশাল ভান্ডার। তবুও তিনি বেশ সন্দিহান ছিলেন। কারণ, EUV প্রযুক্তিতে ১৩ দশমিক ৫ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো ব্যবহার করা হতো, যা তখনকার প্রযুক্তির চেয়ে বহু গুণ অগ্রসর।