ইনটেল কীভাবে উদ্ভাবন ভুলে গেল?
কয়েক দশ ধরে সেমিকন্ডাক্টর জগতে ইনটেল ছিল নিরঙ্কুশ সম্রাট, মার্কিন প্রযুক্তি শক্তির প্রতীক। তাদের আবিষ্কার করা মাইক্রোপ্রসেসর ও বিখ্যাত x86 আর্কিটেকচার ছিল পিসি থেকে ডেটা সেন্টার - সবকিছুর প্রাণ।
কয়েক দশ ধরে সেমিকন্ডাক্টর জগতে ইনটেল ছিল নিরঙ্কুশ সম্রাট, মার্কিন প্রযুক্তি শক্তির প্রতীক। তাদের আবিষ্কার করা মাইক্রোপ্রসেসর ও বিখ্যাত x86 আর্কিটেকচার ছিল পিসি থেকে ডেটা সেন্টার - সবকিছুর প্রাণ।
স্টিভ জবসের হাতে গড়া অ্যাপলের কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এমন সব পণ্য, যা দেখতে সুন্দর, স্পর্শে আরামদায়ক এবং কাজে নিখুঁত। তাদের এই ‘দেখা, অনুভূতি ও কাজের মান’ নিয়ে অ্যাপল বরাবরই ছিল ভীষণ যত্নশীল। কিন্তু খুব কম লোকই জানেন যে আইফোন, আইপ্যাড ও ম্যাককে চালিত করা সেই অতি ক্ষুদ্র চিপগুলো অ্যাপল নিজেই ডিজাইন করে। বস্তুত, টিএসএমসির নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে যে 'ফ্যাবলেস বিপ্লব' হয়েছিল, অ্যাপল ছিল সেই সেমিকন্ডন্ডাক্টর দুনিয়ার অন্যতম প্রধান বিজয়ী।
একসময় সিলিকন ভ্যালিতে একটি প্রবাদ খুব প্রচলিত ছিল: ‘রিয়েল ম্যান হেভ ফ্যাবস’ - অর্থাৎ, সত্যিকারের সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি তারাই, যাদের নিজস্ব ফ্যাব্রিকেশন (ফ্যাব) প্ল্যান্ট বা কারখানা আছে। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে, এক নতুন প্রজন্মের হাত ধরে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এই উদ্যোগীরা নিজেরা চিপ ডিজাইন করতেন, কিন্তু উৎপাদনের কাজটি আউট সোর্স করতেন, যার প্রধান অংশীদার ছিল টিএসএমসির মতো কোম্পানি। এই নতুন জন্ম নেয়া ব্যবসায়িক মডেলের নাম হলো ‘ফ্যাবলেস মডেল’।
সময়টা ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস। সান ফ্রান্সিসকোর ম্যাকওয়ার্ল্ড কনফারেন্সের মঞ্চে যেন ইতিহাস রচিত হতে চলেছে। একে একে মঞ্চে উঠে এলেন অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস আর ইন্টেলের সিইও পল ওটেলিনি। জবস সেদিন ঘোষণা দিলেন, এখন থেকে সব ম্যাক কম্পিউটারই চলবে ইন্টেল প্রসেসরে। সিলিকন ভ্যালির ইতিহাসে এ ছিল এক বিরাট মোড়, কারণ এতদিন পর্যন্ত অ্যাপলই ছিল একমাত্র বড় কম্পিউটার কোম্পানি, যারা ইন্টেলের x86 চিপ ব্যবহার করত না। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে পিসি জগতে ইন্টেলের আধিপত্য সেদিন চূড়ান্ত পূর্ণতা পেল।
সালটা ছিল ১৯৯২। একদিন ইন্টেলের প্রযুক্তি গবেষক জন ক্যারাদারস এক অদ্ভুত অনুরোধ নিয়ে হাজির হলেন কোম্পানির সিইও অ্যান্ডি গ্রোভের কাছে। তিনি এমন একটি প্রযুক্তির গবেষণার জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলার তহবিল চাইলেন, যা তখনো কাজ করবে কি না কেউ নিশ্চিত ছিল না। সেই প্রযুক্তির নাম এক্সট্রিম আলট্রাভায়োলেট (EUV) লিথোগ্রাফি। এই লিথোগ্রাফি হলো সিলিকনের ওপর ইলেকট্রনিক সার্কিট বসানোর এক অতি সূক্ষ্ম নির্মাণ প্রক্রিয়া। তখন ইন্টেল ছিল বিশ্বের শীর্ষ চিপ নির্মাতা, আর গ্রোভের হাতে ছিল নগদ অর্থের বিশাল ভান্ডার। তবুও তিনি বেশ সন্দিহান ছিলেন। কারণ, EUV প্রযুক্তিতে ১৩ দশমিক ৫ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো ব্যবহার করা হতো, যা তখনকার প্রযুক্তির চেয়ে বহু গুণ অগ্রসর।
১৯৮৭ সালে এশিয়ায় জন্ম নিল দুটি ভিন্ন স্বপ্ন। তাইওয়ানের মরিস চ্যাং লক্ষ্য নিলেন TSMC নামে একটি কোম্পানি গড়ার যা বিশ্বের সেরা চিপ তৈরি করবে। একই সময় চীনের শেনজেনে রেন ঝেংফেই শুরু করলেন হুয়াওয়ে, একটি ছোট্ট ব্যবসা যা হংকং থেকে সস্তা টেলিকম সরঞ্জাম কিনে চীনের বাজারে বিক্রি করত।