Views Bangladesh Logo

বগুড়ার রক্তাক্ত সেই পুকুর দেখা যায় পতাকার লালে

Masum   Hossain

মাসুম হোসেন

৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর, বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া, শাহপাড়া, তেঁতুলতলা, হাজিপাড়া ও পশারীপাড়ায় হঠাৎ জারি করা হয় রেড এলার্ট। পূর্ব তালিকা অনুযায়ী পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর শান্তি বাহিনী একে একে ধরে নিয়ে যান ১৪ জনকে।

বন্দীদের সেনা কনভয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শাজাহানপুর উপজেলার খরনা বাবুরপুকুরে।


ফজরের আযানের ঠিক আগ মুহূর্ত। সেই মানুষগুলোকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। হত্যার পরও শেষ হয়নি পাক বাহিনীর নৃশংসতা, বায়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিথর শহীদদের শরীরের উপর চালানো হয় নিষ্ঠুরতা। পরে পুকুরে ফেলা হয় কিছু লাশ। মুহুর্তেই রক্তে লাল হয়ে যায় সেই পুকুর।

সেদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ১৪ জন। তারা হলেন, আব্দুল মান্নান পশারী, ফজলুল হক খান, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল সবুর, মাহফুজুর রহমান, আব্দুল হান্নান পশারী, ওয়াজেদ রহমান টুকু, জালাল মণ্ডল, মন্টু মণ্ডল, আলতাফ আলী, বাদশা মিয়া, আবুল হোসেন, নারী টেলিফোন অপারেটর নূরজাহান ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তি।

বাবুরপুকুর গণকবরে শহীদ নূরজাহানের মর্মান্তিক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। পেশায় তিনি ছিলেন টেলিফোন অপারেটর। তার আরেক নাম ছিল লক্ষ্মী।

নূরজাহান ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে। প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধা তোতা মিয়াকে। ধর্মান্তর হয়ে গ্রহণ করেছিলেন ইসলাম ধর্ম। সেদিন পাকিস্তানি সেনারা তোতা মিয়াকে ধরতে পারেনি। কিন্তু প্রতিশোধের শিকার হন নূরজাহান। তাকে ধরে নিয়ে আসা হয় বাবুরপুকুরে, সারিবদ্ধ শহীদদের পাশে দাঁড় করিয়ে করা হয় হত্যা।

৭০ বছর বয়সী রাশেদুল ইসলাম মরিস, পেশায় আইনজীবি। বাবুরপুকুরে দেখা রক্তাক্ত সেই ভোর তার জীবনে চিরকালের জন্য গেঁথে গেছে।

তিনি বলেন, ভোরে গুলির শব্দে পুরো গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সেনারা চলে যাওয়ার পর আমরা সেখানে দৌঁড়ে যাই। পুকুরপাড়ে দাঁড়াতেই দেখি চারদিকে শুধু লাশ আর রক্ত। কিছু লাশ পুকুর পাড়, আর কিছু মরদেহ ফেলা ছিল ছিল পুকুরে। সেই দৃশ্য আজও চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই।

রাশেদুল ইসলাম মরিস খরনা বাবুরপুকুরের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে বগুড়া শহরের চকফরিদ এলাকায় সপরিবারে বসবাস করছেন।

বাবুরপুকুরে ১২ শতক জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতিস্তম্ভের বেদি। আর তিন শতকের উপর রয়েছে ১৪জন শহীদের কবর। এটি শুধু একটি বধ্যভূমিই নয়, ইতিহাসের নীরব পাঠশালা। যেখানে রক্তে লেখা আছে স্বাধীনতার গল্প।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ