বগুড়ায় রঙহীন বিজয়ের উৎসব
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা…বিজয়ের সকালে এই গানটি মুঠোফোনে শুনছিলেন আব্দুস সালাম। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেই স্মরণ করলেন আগের দিনের বিজয় দিবসের কথা। তার কণ্ঠে ছিল আক্ষেপ আর হতাশা।
তিনি জানান, এখন বিজয়ের দিন আর আগের মতো নেই। যেটুকু আয়োজন দেখা যায়, সেটুকুই শুধু আনুষ্ঠানিকতা। আগে কত আয়োজন হতো, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিজয়ের গান বাজত, শহরজুড়ে উৎসবের আমেজ থাকতো। এখন সবকিছুই যেন মলিন হয়ে গিয়েছে।
বগুড়ার বাসিন্দা আব্দুস সালামের অভিযোগ, দেশ আজ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির প্রভাবের মধ্যে রয়েছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে বগুড়া শহরে কোথাও চোখে পড়েনি বিজয়ের তেমন আমেজ। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমিত সাজসজ্জা থাকলেও তা ছিল অনেকটা দায়সারা।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে চিত্রের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। মুক্তির সকালেও শহর যেন রঙহীন হয়ে ছিল।
বছর দুয়েক আগেও বিজয়ের রাত থেকেই বগুড়ায় সড়কের মোড়ে মোড়ে বাজত দেশাত্মবোধক গান। চারপাশে থাকতো উৎসবমুখর পরিবেশ। সকালে কিশোর-কিশোরীরা বিজয়ের সাজে বের হতেন, জাতীয় পতাকা হাতে শহরজুড়ে ঘুরে বেড়াতেন।
বিজয়ের মাস এলেই পাড়া-মহল্লায় শুরু হতো উৎসবের প্রস্তুতি। নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর ছোট ছোট পতাকায় সাজানো হতো চারপাশ। সাউন্ড বক্সে বাজত স্বাধীনতার গান। কিন্তু গত দুই বছর ধরে বিজয় দিবসে সেই চেনা দৃশ্য আর দেখা যাচ্ছে না।
এমনকি জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের কুচকাওয়াজের মতো বড় কর্মসূচিও আর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ফলে বিজয়ের দিনটি এখন শুধুই একটি ছুটির দিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে নেই আগের সেই উৎসব, আবেগ ও গর্ব।
অভিযোগ রয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন স্বয়ং বীরমুক্তিযুদ্ধারা। একাত্তরের শ্লোগানগুলোকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে দেশে। আটক ও গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে জনগণ স্বাধীনতার কথা বলতেও নানা আশঙ্কা করছেন। দেশে একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো-জানতে চাওয়া হয় বগুড়ার বীরমুক্তিযোদ্ধা গৌর গোপাল গোস্বামীর কাছে।
তবে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি এখন একটু অসুস্থ। আমি এই বিষয়ে আপাতত কিছু বলতে চাচ্ছি না। পরে এক সময় আলোচনা করব।
বীরমুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী বলেন, বিগত সময়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বিজয় দিবস উদযাপন হতো। ওই সময় সারাদেশের মানুষ বিজয়ের উৎসব পালন করতেন। এখন একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি দেশে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে