Views Bangladesh Logo

এক বছরে আইন মন্ত্রণালয়ের অর্জন

মামলা প্রত্যাহার ১৬ হাজার, সংস্কার দেড় ডজন

ণঅভ্যুত্থানের পর অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট যাত্রা শুরু করেছিল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত এক বছরে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আইন মন্ত্রণালয় প্রায় দেড় ডজন সংস্কার কার্যক্রম করেছে। এ সময়ে মন্ত্রণালয় প্রত্যাহার করেছে প্রায় ১৬ হাজার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাও। এসব মামলা গত বছরের ৮ আগস্টের আগে দায়ের হওয়া। বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত হওয়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত এক বছরে মন্ত্রণালয় প্রায় দেড় ডজন সংস্কার কাজ করেছেন। এর মধ্যে- আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে আইনটিকে ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। এ আইনে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, অভিযুক্তের অধিকার সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ এবং বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন আপিল, সাক্ষী নিরাপত্তা এবং ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মামলার সর্বশেষ অবস্থা, শুনানির তারিখ এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি কমেছে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ এবং সংগৃহীত হিসাবের নথিগুলো পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রারদের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য বিবরণী তৈরি করা হয়েছে। একটি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারা দেশের আদালতে দক্ষ কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ কার্যক্রম চালু করার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত হয়েছে।

বিচারপ্রার্থী জনগণের জামিন প্রাপ্তি সহজীকরণের লক্ষ্যে অনলাইনে বেলবন্ড জমা দেওয়ার জন্য প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে সফটওয়্যার। পরীক্ষামূলকভাবে সফটওয়্যারটি ব্যবহার শুরু হবে শিগগিরই, এমনটাই জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের প্রসিকিউশন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি একটি বিশেষ সেল গঠন করেছে। বিচার কার্যক্রম দ্রুততর করার লক্ষ্যে ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্য সরকারি চাকরিজীবীদের অনলাইনে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠির আলোকে সুপ্রিম কোর্ট প্র্যাকটিস ডাইরেকশন জারি করেছেন।

বিদ্যমান আদালত ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করাতে প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি পারিবারিক আদালতকে ই-ফেমিলি কোর্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চালু করেছে। আইন ও বিচার বিভাগের ৫০ শতাংশ নথি ডি-নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যমাত্রা এরই মধ্যে অর্জিত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন (অ্যাটাস্টেশন) সেবাকে শতভাগ অনলাইন প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে গত এক বছরে।

এদিকে, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে জেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি এবং আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক এজাহার, চার্জশিটসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার পর প্রায় ১৬ হাজারের বেশি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে গত এক বছরে। এ ছাড়া সাইবার আইনের অধীনে ৪০৮টি স্পিচ অফেন্স-সংক্রান্ত মামলা এবং জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৭৫২টি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের কারণে কয়েক লাখ রাজনৈতিক নেতাকর্মী মামলা থেকে মুক্তত হয়েছেন। তবে এর মধ্যে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে হওয়া কোনো মামলা নেই।

এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিগত সরকারের আমলে নিয়োগকৃত সব আইন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আইন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সারা দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে ৪ হাজার ৮৮৯ জন সরকারি আইন কর্মকর্তা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৭৪ জন অ্যাটর্নি নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে পাঁচজন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক ও প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এই সময়ে।
এ ব্যাপারে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত বছরের আগস্ট মাস থেকে দায়িত্ব পালন করছি। মাত্র এক বছরে আইন মন্ত্রণালয় যুগান্তকারী কিছু কাজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় দেড় ডজন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, যা দেশের আইন ও বিচার বিভাগের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ এ সুবিধা ভোগ করছে। এ ছাড়া বিগত সরকারের আমলে হওয়া প্রায় ১৬ হাজার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার হয়েছে এই অল্প সময়ে। এসব মামলার প্রায় লক্ষাধিক আসামি এখন মুক্ত ও ভায়হীন জীবনযাপন করছে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক বিভাগে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস্তবসম্মত সংস্কার হয়েছে আইন ও বিচার বিভাগে। এটা আমাদের জন্য খুবই ভালো ব্যাপার। এ ছাড়া বিগত সরকারের ১৬ বছরের শাসনকালে হওয়া প্রায় ১৬ হাজার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার হয়েছে গত এক বছরে। যা নিরপরাধ অভিযুক্তদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এ ব্যাপারে বলেন, ‘গত এক বছরে আইন মন্ত্রণালয় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কাজ করেছে। প্রায় ১৬ হাজার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার হয়েছে এ সময়ে। তবে বিচারাঙ্গনের শৃঙ্খলা এখনো পুরোপুরি ফিরে আসেনি। মামলা জট কমানোর বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি। সুপ্রিম কোর্টের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। তবে আশা করছি, আগামীতে নির্বাচিত সরকার এসব কাজ গুরুত্বসহকারে সম্পন্ন করবে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ