Views Bangladesh Logo

বাজেট ২০২৫-২৬

খরচ বাড়িয়ে কি ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক এক মহাদুর্যোগের নাম। ইঞ্জিনচালিত এই তিন চাকার বাহনের দাপটে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বলা যায়। বাস-ট্রাকের মতো ভারী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে এই হালকা যানগুলো। অসংখ্য ব্যাটারিচালিত যান রাজপথের অধিকাংশ স্থান দখল করে রাখে। এগুলোর চালকরা কোনো ট্রাফিক নিয়মকানুন মানেন না। ফলে যখন তখন ঘটে দুর্ঘটনা।

সারা দেশেই এই চিত্র ভয়াবহ আকারে ফুটে উঠছে। তবে গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরেই এগুলোর দৌরাত্ম্য বেশি এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তবে এবারের বাজেটে ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য নিয়ে এল দুঃসংবাদ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাটারিচালিত রিকশায় ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরিতে খরচ বাড়ছে।

আজ সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে জাতির কাছে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট তুলে ধরেন। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মোট বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। অর্থ উপদেষ্টা জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশার ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ঢাকাসহ সারা দেশে বিপজ্জনক বাহনের নাম ব্যাটারিচালিত রিকশা। অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই বাহনগুলোর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। গঠন, নিবন্ধন, চলাচলযোগ্যতা- কোনো কিছুরই বালাই নেই এগুলোর। ফলে যে খুশি সে-ই এই বাহনগুলো তৈরি করতে পারেন। দেশে যেহেতু বেকারের সংখ্যাও বেশি। কোনো কাজ না পেয়ে অনেকেই এই বাহনগুলো কিনে, তৈরি করে বা ভাড়া নিয়ে রাস্তায় নেমে যান। অধিকাংশ চালকেরই রাস্তায় গাড়ি চালানোর মতো শিক্ষাদীক্ষা ও দক্ষতা নেই। পায়ে টানা রিকশার চেয়ে অনেক কম শারীরিক শক্তি ব্যয় হয় বলে অন্য কাজ ছেড়ে দিয়ে এমনকি শারীরিকভাবে সক্ষম না হলেও অনেকে এই বাহনগুলো নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। ফলে একদিকে যেমন ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে ট্রাফিক-জ্যাম বাড়ছে তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। অনেকবার এই বাহনগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে; কিন্তু চালকদের বিক্ষোভের মুখে তা সম্ভব হয়নি। চালকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেড়ে যাওয়ায় বিক্ষোভ করে তারা এখন শহর অচল করে দিতে পারেন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে এবারের বাজেটে ব্যাটারিচালিত রিকশার খরচ বাড়ানো হলো; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, খরচ বাড়িয়ে কি ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে? এর মধ্যে বুয়েটের একটি কারিগরি দল ব্যাটারি রিকশার নতুন ‘নিরাপদ নকশা’ করেছে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও ওই নকশার রিকশাকে ঢাকায় চলাচলের অনুমতি দেবে বলে জানিয়েছে। এই ঘোষণার ফলে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হবে না; বরং নতুন ডিজাইনের রিকশা বানানোর হিড়িক লেগে যাবে। ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়িয়েও এগুলোর দৌরাত্ম্য কমানো যাবে বলে মনে হয় না। শুল্ক বাড়ানোর কারণে হয়তো চালকরা বিক্ষোভ করবেন, কিংবা ভাড়া বাড়িয়ে দিবে। তারপরও প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে এর কার্যকারিতা ভবিষ্যতে বোঝা যাবে।

সঠিক তথ্য জানা গেলেও বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ অটোরিকশা বা ইজিবাইক চলে বলে বিভিন্ন তথ্যে পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে এদের দৌরাত্ম্য আরও বৃদ্ধি পাবে। যানজট মারাত্মক বৃদ্ধি পাবে। মানুষের কর্মঘণ্টা কমতে থাকবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মানুষের আয়ে এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর। তাই ব্যাটারিচালিত রিকশার স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ ছাড়া শুধু খরচ বাড়িয়ে এগুলোকে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মনে হয় না। তারপরও সরকারি উদ্যোগ যেন কার্যকর থাকে সে ব্যাপারে সরকারকে সচেতন ও কঠোর থাকতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ