Views Bangladesh Logo

মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে কেন এমন অপরাজনীতি

ত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় যখন একের পর এক কোমলমতি শিশুদের মৃতদেহ ও দগ্ধ আহতদেহ বেরিয়ে আসছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত ছিল তাদের উদ্ধার তৎপরতায়, অ্যাম্বুলেন্সগুলো আহত শিশুদের নিয়ে ছুটছিল হাসপাতালে হাসপাতালে, ডাক্তার-নার্সরা ছোটাছুটি করছিল এসব যন্ত্রণাকাতর শিশুদের কত দ্রুত সেবা দেয়া যায় তখনই আমরা দেখলাম দেশের কতিপয় রাজনীতিবিদ হাসপাতালে গিয়ে ভিড় করেছেন। তাদের উপস্থিতিতে হাসপাতালের চারপাশে ভিড় আরও বেড়ে যায়। আহতদের নিয়ে যাতায়াত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকের প্রশ্ন, এ সময় রাজনীতিবিদরা হাসপাতালে কী চান? তারা কি প্রচারণার জন্য এসেছেন? জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই কঠোর ভাষায় লিখেছেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করবেন না, প্লিজ। এটা রাজনীতির সময় না। শুধু রাজনীতিবিদদের হাসপাতালে উপস্থিতি নয়, আমরা দেখলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বস্তুত এক রাজনৈতিক যুদ্ধই শুরু হয়েছে বলা যায়। এখন এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষ দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, প্রশিক্ষণ বিমান লোকালয়ে উড়ল কেন? কেউ বলছেন, এত পুরোনো বিমান নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন? আওয়ামী লীগবিরোধী লোকজন বলছেন, এ বিমানগুলো কেনা হয়েছিল শেখ হাসিনার সময়ে, আওয়ামীপন্থি লোকজন বলছেন, এগুলো কেনা হয়েছে খালেদা জিয়ার আমলে।

শুধু তাই নয়, গতকাল সারাদিন সারা শহরে এক প্রকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়া মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে যাওয়ার পর সেখানে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে সচিবালয়েও চলছে প্রচণ্ড বিক্ষোভ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ-সেনাবাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলেছে। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর আগে সচিবের পদত্যাগ ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতেও বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে অনেক বাকবিতণ্ডা ও পাল্টাপাল্টি আক্রমণ চলেছে।

এসব দেখে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন নিউজ লিংকের মন্তব্যের ঘরে মন্তব্য করছেন, লাশের ওপর দিয়েই এ দেশে রাজনীতি চলে। কেউ কেউ এই ঘটনাকে এখন বিদেশি চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন। কেউ বলছেন, নির্বাচন দিলে আর এই অবস্থা হতো না? কেউ আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এখন এই অবস্থাই চলবে। অনেকে বলছেন, একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ আবার মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে। এক ধাপ আগ বাড়িয়ে অনেকে বলছেন, এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসল বলে!

সব মিলিয়ে চরম এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। পুরো লেখায় আমরা অনেকবার বললাম, ‘অনেকে বলছেন’; এর কারণ, এর মধ্য দিয়ে দেশের আপামর মানুষের একটা মনোভাব আমরা বুঝতে চেষ্টা করছি। আমাদেরও প্রশ্ন, এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নিয়ে কেন এমন অপরাজনীতি? এর থেকে মুক্তি আমাদের কবে মিলবে? ছোট ছোট শিশুরা যখন এমন ভয়াবহ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা গেল, অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে আমরা কি আরেকটু মানবিকতা ও ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিতে পারতাম না?

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ