Views Bangladesh Logo

ডেঙ্গু নিয়ে এত অবহেলা কেন?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে হানা দিচ্ছে। দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ ততই প্রকট হচ্ছে। ডেঙ্গুকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যদিও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন দাবি করছে, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে; কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপ কেন হ্রাস পাচ্ছে না, তা এখন খতিয়ে দেখার বিষয়। রাজধানীসহ সারা দেশে এখন জ্বর, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও করোনার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। জ্বর হলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এখন ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেশি। আগামী দুই মাসে এই রোগ আরও বাড়তে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে ৩ থেকে ৪ জুলাই (২৪ ঘণ্টায়) ২০৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। কেউ মারা যাননি। ঢাকা মহানগরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ওই সময়ে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫৭ জন। এর মধ্যে ১৮টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ৪৫ জন এবং ৫৯টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ জন। সবচেয়ে বেশি ভর্তি রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে- মোট ২৬ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে, তাতে একদিকে ডেঙ্গু যেমন ভয়ংকর হয়েছে, তেমনি ‘শহুরে রোগ’ ডেঙ্গু শহরকে ছাড়িয়ে ঝুঁকি বাড়িয়েছে দেশজুড়ে। এদিকে বর্ষাকাল শুরুর আগেই ডেঙ্গুর বিপজ্জনক অবস্থার বিষয়ে তারা বলছেন, এখন আর বর্ষাকাল, বৃষ্টি এসবের সঙ্গে ডেঙ্গুর সম্পর্ক নেই। কারণ এখন এডিস মশার লার্ভা জমে থাকছে নির্মাণাধীন ভবনে, ওয়াসার মিটার বক্সসহ নানা জায়গায়। আর এসব কারণে ডেঙ্গু এখন কেবল বর্ষাকালীন নয়, বরং সারা বছরের; কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক নয়; পুরো দেশের ঝুঁকির কারণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন রোগীদের যে তালিকা পাঠায়, সেই তালিকা দেখে ডেঙ্গুর প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে না। প্রকৃত চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেই সঙ্গে গত কয়েক দিনের থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়া সে উদ্বেগ বাড়িয়েছে আরও। আর পুরোপুরি বৃষ্টি শুরু হলে সেটি আরও ভয়ংকর অবস্থায় যাবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

ডেঙ্গুর একমাত্র উৎস এডিস মশার জন্ম যদি রোধ করা যায়, তাহলে ডেঙ্গু সহজেই নির্মূল করা সম্ভব। কারণ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। সে ক্ষেত্রে দেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কাজ হয়েছে যৎসামান্য। কেন সেসব পরিকল্পনা ও দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি, তা এখন বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন।

চিকিৎসকরা বলছেন, এবারের ডেঙ্গুর লক্ষণ ও উপসর্গ বদলে গেছে। অনেকের পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও লক্ষণ-উপসর্গ ডেঙ্গুর। রোগীরা হঠাৎ করেই খারাপ অবস্থায় চলে যাচ্ছেন। এবার শিশুদের মস্তিষ্ক, হার্ট ও কিডনি কাজ করছে না ঠিকমতো। দেরিতে হাসপাতালে আনার কারণে সময় পাওয়া যাচ্ছে কম, আর এ সময়ের মধ্যেই শরীরের একাধিক অঙ্গ তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে, পরিণামে হচ্ছে মৃত্যু। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, আক্রান্ত হয়েছেন তার চার গুণ।

দেশের এই চলমান ডেঙ্গু প্রকোপের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ না সিটি করপোরেশন দায়ী, সেই বিতর্ক না করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশে যাদের কারণে ক্রমাগত ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং যাদের ব্যর্থতার জন্য এ অবস্থা, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। সেই সঙ্গে নগরবাসীকেও সচেতন থাকার কোনো বিকল্প নেই। তাই সিটি করপোরেশন ও নগরবাসীর সম্মিলিত কার্যক্রমই পারে ডেঙ্গু সমস্যার সমাধান করতে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ