Views Bangladesh Logo

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও মানবাধিকার লঙ্ঘন কেন?

ওয়ামী লীগ সরকার পতনের পেছনে যত বিষয় জনরোষের কারণ হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘন। গণঅভ্যুত্থানের পর যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো, আমরা আশা করেছিলাম- সমাজে-রাষ্ট্রে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে; কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, জাতিসংঘ তথ্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টের শুরু থেকে পরবর্তী সময়ে সহিংস মব (বিশৃঙ্খল জনতা) পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিশানা করে হত্যাসহ গুরুতর প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড করেছে। এ সময় হিন্দু, আহমদিয়া মুসলিম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। তাদের বাড়িঘরে হামলা ও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। হামলা হয়েছে মাজার, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায়। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, এমন ব্যক্তিদের এসব অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে ভুক্তভোগীদের মানবাধিকার রক্ষা করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ‘খসড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ’ নিয়ে সংলাপের আয়োজন করেছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। ‘খসড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরও দেশে বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে; কিন্তু এ সরকার মানবাধিকার কমিশন গঠন করেনি। এমনকি এই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা শুনতেও চাইছে না।

আমরা জানি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল। যদিও কার্যক্রম এখন কী অবস্থায় আছে তা আমরা জানি না। সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতানৈক্যের কথাও আমরা শুনেছি। একদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানবাধিকার কমিশন গঠন করেনি, অন্যদিকে মানবাধিকারের কথা শুনতেও চাইছে না, যা সত্যিই দুঃখজনক। তাহলে আমরা আর কার কাছে কী আশা করব?

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম পরিদর্শনের সুযোগ মানবাধিকার কমিশনকে দিতে হবে বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রধান নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, যেসব সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন, যেসব সংস্থার পরিবর্তন না হলে, সংস্কার না হলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কোনো সংস্কারই কার্যকর হবে না।

বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ডিস্টিংগুইস ফেলো ও প্রথম নির্বাহী পরিচালক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এত কিছু করল, আইন করল; কিন্তু এই ফাঁকে কেন একটা মানবাধিকার কমিশন করল না? যেখানে জননিরাপত্তা, নিরাপত্তা, মানবাধিকারের বিভিন্ন ধরনের লঙ্ঘন দেখা যাচ্ছে।

গণঅঅভ্যুত্থানের পর আমরা দেখেছি সমাজে-রাষ্ট্রে নানা ধরনের অরাজকতা বেড়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তিকে তার পরিচয়, পোশাক, এমন কি চুল-দাড়ি রাখা নিয়েও হেনস্তা করা হচ্ছে। সমাজে-রাষ্ট্রে এসব ঘটনা একটি গণতন্ত্রহীনতার লক্ষণ। অথচ গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা আশা করেছিলাম একটি সুষ্ঠু-সুন্দর, অন্তর্বর্তীমূলক সমাজব্যবস্থা কায়েম হবে। তা না হওয়াটা দুঃখজনক, হতাশাজনক; এবং তার জন্য অনেকখানি দায়ী বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাই আমরা চাই নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করুক। সামনে নির্বাচন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে খুবই কম সময়, এখন হয়তো আর নতুন করে মানবাধিকার কমিশন গঠনের সময় নেই; কিন্তু আইনশৃঙ্খলার সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে এখনো সমাজে-রাষ্ট্রে মানবাধিকার ফিরতে পারে, রক্ষা পেতে পেরে ব্যক্তির পরিচয়, মূল্যবোধ ও মর্যাদা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ