বিচার না করে সরকার নিন্দা জানায় কেন?
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ সেটা আর কোনো উদাহরণ দিয়ে নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও হামলা, ভাঙচুর, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, হত্যা, মব সন্ত্রাসীসহ অনেক ধরনের আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে এবং সরকার এসব ঘটনার বিরুদ্ধে শক্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে নিন্দা-প্রতিবাদ জানাচ্ছে। নিন্দা-প্রতিবাদ জানানো কি সরকারের কাজ?
গত ২৯ আগস্ট জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মারধরে আহত হন গণঅধিকার নেতা নুরুল হক নুরসহ আরও অনেকে। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, নুরকে অমানবিকভাবে মারছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এই ঘটনার পর রাত ১১টার দিকে ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল লেখেন, ‘ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন, যেখানে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আইন উপদেষ্টার নুরের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা, সেখানে তিনি করলেন তারই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। মানুষের বিস্ময়কে আরেকটু মজবুত করেন আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি ফেসবুকে দাবি জানান, ‘নুরুল হক নুরের ওপর হামলার দায়দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিতে হবে।’
এরপর, গত শুক্রবারের (৫ সেপ্টেম্বর) ঘটনা আরো হতবুদ্ধিকর। প্রায় মধ্যযুগীয় এক বর্বরতার সাক্ষী হলো দেশবাসী। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক মোল্লা ওরফে নুরা পাগলার মরদেহ কবর থেকে তুলে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে একদল লোক। এ ঘটনায় ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গোয়ালন্দে নুরুল হক মোল্লা, যিনি নুরাল পাগলা নামেও পরিচিত, তার কবর অবমাননা ও মরদেহে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায়। এই অমানবিক ও ঘৃণ্য কাজটি আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের আইন এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সভ্য সমাজের মৌলিক ভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত।’
তাই প্রশ্ন উঠেছে- কার কাছে এ দাবি? পাশাপাশি আরেকটা প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এরা সরকার নয়? নাকি ওই কথাই সত্য যে, সরকারের ভেতরেও আরেক সরকার সক্রিয়? এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও পথেঘাটে এখন সরাসরিই আলাপ হচ্ছে- আসলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল নিয়ন্ত্রণ কার হাতে? কেন সরকার এত নতজানু? এত নমনীয়? যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক তখন সরকার কঠোর না হয়ে কেন এত নরম সুরে কথা বলে? বিচার নিশ্চিত না করে নিন্দা জানায়?
এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে নেই; কিন্তু আমরা সরকারের কাছে বিচার চাই, প্রতিবাদ নয়। যে মব সহিংসতা শুরু হয়েছে সরকার যদি এটা এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ খুবই অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে