Views Bangladesh Logo

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার কম কেন

সএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ছাত্রছাত্রীদের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবনের শেষে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এই ফলাফলের ওপর নির্ভর করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাজীবনে প্রবেশ করেন। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলই তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি নির্ধারিত করে দেয়। আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার শিক্ষা বোর্ডগুলো আলাদা আলাদাভাবে ফলাফল প্রকাশ করছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৭৩ হাজার ৬১৬ জন এবং ছাত্র ৬৫ হাজার ৪১৬ জন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটিই কমেছে। এ বছর গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫। গত বছর এ হার ছিল ৮৩ দশমিক ৪। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৯৫।

পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমে যাওয়া আশঙ্কাজনক। পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমে যাওয়ার কারণটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। অনেক শিক্ষার্থী গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল। অনেকে তাদের বন্ধুদের হারিয়েছেন, অনেকে আহত হয়েছেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসতে সময় লাগে। এটাই কি পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমে যাওয়ার কারণ?

গ্রামের তুলনায় এবার শহরাঞ্চলে ফলাফল ভালো হয়েছে। এর কারণটিও স্পষ্ট, গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান ভালো। আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়, বিগত ১০ বছরের মতো এবারও ছাত্রদের তুলনায় ভালো ফলাফল করেছেন ছাত্রীরা। এবার ছাত্রীদের পাসের হার ৭১.০৩ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৬৫.৮৮ শতাংশ। বিগত ১১ বছরের এসএসসি ও সমমানের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবশেষ ২০১৫ সালে ছাত্রীদের চেয়ে পাসের হারে এগিয়ে ছিলেন ছাত্ররা। এ বিষয়টিও গবেষণার দাবি রাখে। ছাত্রদের ফলাফল খারাপ করার কারণ কী? পড়াশোনার প্রতি কি তাদের মনোযোগ কমে যাচ্ছে?

আরও একটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার নানাভাবে পাসের হার বেশি দেখিয়েছে। অনেক স্কুলেই ছিল অবারিত নকলের সুযোগ। নানা নয়-ছয় করে ফলাফল উনিশ-বিশ করার প্রবণতাও দেখা গেছে বিগত সময়ে। এ বছর নকল কম হয়েছে এবং ফলাফল জালিয়াতির কোনো সুযোগ ছিল না, তাও কি পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমে যাওয়ার একটি কারণ?

বিষয়টি যাই হোক অবশ্যই গবেষণার দাবি রাখে। ফলাফল আজ প্রকাশিত হয়েছে, নিশ্চয়ই শিগগিরই এ নিয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মতামত প্রকাশ করবেন। আরেকটি বিষয় আশঙ্কাজনক, এবার পরীক্ষার প্রথম দিনে সারা দেশের ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিলেন ২৬ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থী। পরে এ অনুপস্থিতির সংখ্যা আরও বেড়েছিল। সবমিলিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় ১৯ লাখ শিক্ষার্থী। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণটিই-বা কী? হয়তো নকলের সুযোগ না পেয়ে তারা পরবর্তী পরীক্ষা দিতে উৎসাহিত হননি।

সব মিলিয়ে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। শিক্ষাক ও শিক্ষাবিষয়ক গবেষকরা নিশ্চয়ই তার সদুত্তর দিবেন। আমরা চাই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হোক।

পরিশেষে এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যারা ভালো ফলাফল করেছেন সেসব শিক্ষার্থীকে অভিনন্দন। কোনো কারণে যাদের ফলাফল ভালো হয়নি তাদেরও নিরাশ হলে চলবে না। বরং আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে ভবিষ্যতের চলার পথ তৈরি করতে হবে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বটে; কিন্তু এটাই শেষ অধ্যায় নয়। শেষ পর্যন্ত ফলাফলও তেমন কিছু নির্ধারণ করে না। কারণ দেখা গেছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের পরও অনেক শিক্ষার্থী ঝরে গেছেন। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে ব্যর্থ হয়েও অনেকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবনের সফলতা নির্ভর করে সততা, দক্ষতা ও অধ্যবসায়ের ওপর। ভিউজ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভ কামনা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ