নদী-খাল খননের টাকা কেন জলে ভেসে যায়
গত ২৪ মে ভিউজ বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদকীয় ছিল হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফেরানো যায়নি। প্রকল্প শেষ হওয়ার মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি এবং কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ৩০ কোটি টাকা খরচের পর আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল আবার ‘ভাগাড়ে’ পরিণত হয়ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, হাতিরঝিলের মতো আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ লক্ষ্যে চ্যানেল পুনরুদ্ধার ও খননে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে দেড় বছরের মধ্যে চ্যানেলটি ‘ভাগাড়ে’ পরিণত হয়েছে। নেই তেমন পানিপ্রবাহ। দুর্গন্ধ ছাড়াও কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভরাট হয়ে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে প্রাচীন এই জলপথ।
এ ধরনের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই আসে যে, কোটি টাকার প্রকল্প জলে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নদী-খাল বা চ্যানেল উদ্ধার ও খননের টাকা জলে যায় কেন? কেন কাজের কাজ হয় না? প্রায় প্রতি বছরই দেখা যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কিছু খাল পরিষ্কার বা উদ্ধার করা হয়; কিন্তু এক বছরের মধ্যেই তা আবার ‘ভাগাড়ে’ পরিণত হয়। বর্ষার আগে আগে আবার সেসব উদ্ধারের জন্য কর্মতৎরতা গ্রহণ করা হয়। মানে ফের বাজেট ও তার অপব্যয়। এর জন্য প্রকৃত অর্থ দায়ী কে?
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশলীরা বলছেন, যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ করা না গেলে শতকোটি টাকা খরচ করেও এ ধরনের প্রকল্পের সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। আদি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঠামো দুর্বল হওয়ায় খননের সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ করার দায়িত্ব কার? আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সচেতন নয়, সরকারও তাদের সচেতন করার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাদের না দেয়া হয়েছে কোনো সামাজিক শিক্ষা, না আছে এসব বন্ধ করার জন্য কোনো আইনিব্যবস্থা।
প্রচণ্ড ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরে সারা দেশ থেকে লোক আসে বিভিন্ন কাজে, শহরটাকে তারা আপন মনে করে না। তাদের অনেকে যেখানে খায় সেখানেই ময়লা ফেলে। হাতের কাছে বর্জ্য ফেলার সুব্যবস্থাপনা না থাকায় তারা আশপাশের খাল-নদীগুলোকে বেছে নেয় আবর্জনা ফেলার জন্য। ঢাকার আশপাশে যতগুলো আবাসিক এলাকা আছে সেগুলোর আশপাশে দোকানপাট-বাজারের সব ময়লা অনিবার্যভাবে খালে-নদীতেই যায়। এসব খাল-নদী উদ্ধারের কথা বছরের পর বছর শোনা গেলেও, সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কার্যত কোনো ফলাফল বয়ে আনে না।
আমাদের দেশে পরস্পরকে দোষারূপের একটা অপসংস্কৃতিও দীর্ঘকাল বহমান। সরকার দোষে জনগণকে, জনগণ দোষ দেয় সরকারের ঘাড়ে; প্রকৃত সমাধান আর আসে না। নানা অনিয়মে বিভিন্ন প্রকল্প, নদী-খাল খননের টাকাও শেষ পর্যন্ত জলেই ভেসে যায়; কিন্তু এভাবে তো একটা দেশ চলতে পারে না। এটা তো ফুটো বালতিতে পানি ভরার মতো ব্যাপার। সরকার ও জনগণ উভয়কেই এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে। সরকারকেই আগ বাড়িয়ে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে। আবার সচেতন নাগরিককেও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সরকারি টাকা এভাবে বিফলে না যায়। সরকারের টাকা তো শেষ পর্যন্ত জনগণেরই টাকা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে