Views Bangladesh Logo

একুশে বইমেলা নিয়ে টালবাহানা কেন?

অমর একুশে বইমেলা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে বইমেলা অন্যতম। ১৯৫২ সালের একুশের ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে সেই ১৯৭২ সাল থেকে। মেলাটি প্রথমে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনেক বছর ধরে অনুষ্ঠিত হলেও আয়তন বেড়ে যাওয়ায় ২০১৪ সাল থেকে বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাংলাদেশের সব কবি-লেখক-প্রকাশক-পাঠক সারা বছর ধরেই অপেক্ষা করে থাকেন একুশের বইমেলার। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে একুশের বইমেলা পরিণত হয় লেখক-পাঠকের মিলনমেলায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো পাঠক ছুটে আসেন এই বইমেলার টানে।

কিন্তু ২০২৬ সালে একুশের বইমেলা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা সংশয়, দোলাচল। আগামী বছর ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তার পরই রোজা; ফলে বইমেলা কবে হবে, কীভাবে হবে, কেমন হবে তা নিয়ে মাসখানেক ধরেই লেখক-প্রকাশকরা সংশয়ে ছিলেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে জানা গেলে আগামী বইমেল হবে এ বছরের ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এতে অনেক লেখক-প্রকাশকই আপত্তি তোলেন, কারণ এত অল্প সময়ে বইমেলা আয়োজন করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া অনেক প্রকাশকই অভিযোগ তোলেন এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার বা বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে তাদের কাছ থেকে কোনো পরামর্শ নেয়া হয়নি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হওয়ার পর বাংলা একাডেমি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। বাংলা একাডেমি জানায়, নির্বাচনের আগে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। তবে কবে হবে সেই সিদ্ধান্তও এখনো গৃহীত হয়নি।

গতকাল সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে আগামী ডিসেম্বরে একুশে বইমেলা আয়োজনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল সেখান থেকে সরে এসেছে বাংলা একাডেমি। গত রোববার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বইমেলা স্থগিতের কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একুশের বইমেলা জাতীয় নির্বাচনের পর আয়োজনের সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস) এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মতামতের ভিত্তিতে বইমেলা স্থগিত করা হয়। প্রকাশক ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পর নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলেও জানানো হয়।

এখন নির্বাচনের পর বইমেলা কবে হবে সেটাও অনিশ্চিত। অথচ বইমেলা নিয়ে এমন টালবাহানা করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। ঐতিহ্য অনুযায়ী বইমেলা অবশ্যই ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। কারণ এর সঙ্গে জড়িত আমাদের ভাষা আন্দোলনের চেতনা। আমরা যদি একুশের বইমেলা ফেব্রুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত করতে না পারি তাহলে এতদিনের ঐতিহ্যই শুধু না, আমাদের একুশের চেতনাও ম্লান হয়ে যাবে। আমরা কি এত বছরেও এমন একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলাম যে একুশের বইমেলাও নির্বাচনের সময় অনুষ্ঠিত করতে পারব না। অনেকে এমনো আশঙ্কা করছেন, আগামী বছর হয়তো আর বইমেলা অনুষ্ঠিত হবেই না। আর সেটা যদি হয় তাহলে তা হবে এক কলঙ্কিত ইতিহাস। নির্বাচনের পর একুশের বইমেলা অনুষ্ঠিত হলেও তা কেমন হবে তা নিয়ে যেমন সংশয় রয়েছে আর তা নিশ্চিতভাবেই আগামী দিনগুলোর জন্য এক অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা হয়েই থাকবে লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মনে। বই পড়ার সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে নেই বলেই আজ এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হলো।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ