Views Bangladesh Logo

থুতু ফেলা নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ কেন?

জাতি হিসেবে যে আমরা দিন দিন অধঃপতনের দিকে যাচ্ছি তার সর্বশেষ নজির থুতু ফেলা নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষে দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন এবং প্রায় ৩০ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এমন আরও অনেক ঘটনা দেখা যাচ্ছে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভয়ংকর সংঘর্ষ লেগে যাচ্ছে এবং তাতে করে অনেকের প্রাণহানিও হচ্ছে। লুডু খেলাকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন এই কিছুদিন আগে; কিন্তু সাধারণ জনগণ যা করতে পারে তা কি করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। সমাজের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্মানের চোখে দেখে, সেই সম্মান তারা রাখছে কোথায়?

প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষার্থী ও পুলিশের বর্ণনামতে, গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষার্থী খাগান এলাকায় মোটরসাইকেলযোগে যাচ্ছিলেন। এ সময় চলতি অবস্থায় থুতু ফেলে। সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর গায়ে লাগে। এরপর তারা মোটরসাইকেলে থাকা সিটি ইউনিভার্সিটির ওই দুই শিক্ষার্থীকে আটকে দেয়। ওই দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে এবং তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ায়। সেখান থেকে ফিরে এসে এই ঘটনা ওই দুই শিক্ষার্থী সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জানায়। এরপর তারা ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী একত্র হয়ে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস’ হোস্টেলের দিকে অগ্রসর হয়। তারা ছাত্রাবাসটিতে হামলা চালায়। তারা প্যারাডাইসের ভেতরে প্রবেশ করেনি। সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলে আক্রমণ করছে খবরটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এই খবরে এক থেকে দেড় হাজার ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তারা সিটি ইউনিভার্সিটির ভেতরে ঢুকে পড়ে। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করে। সিটি ইউনিভার্সিটির দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে থাকা টাকা, ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন উপকরণ লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গাড়ি।

কেন এই অধৈর্য, অসহিষ্ণতা? কেউ কোনো ভুল বা অন্যায় করলে ক্ষমা চেয়ে নিলেই হয়। বিদেশে এটা দেখা যায়, যে পক্ষই সামান্য ত্রুটি করুক দুপক্ষই ‘সরি সরি’ বলতে বলতে যার যার পথে চলে যায়। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যায় সামান্যতম কারণেও দুই পক্ষ অপর পক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কেন এই অধৈর্য, অসহিষ্ণুতা? কেন ক্ষমতা প্রদর্শনের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা? সামান্যতম ভদ্রতাবোধ, সিভিক সেন্স কি আমরা হারিয়ে ফেলেছি?

সামান্য ঘটনায় যে দুজনের প্রাণ গেল এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলো তার ক্ষতি কোনোভাবেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হলো বিশ্ববিদ্যালয় দুটির, শিক্ষার্থী সমাজের এবং দেশের। এই লজ্জার ভার জাতি হিসেবে আমাদের সবাইকেই বইতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার প্রতিযোগিতা নেই, গবেষণা নেই, আছে শুধু শক্তি প্রদর্শনের মহড়া। হতাশা ও ভারাক্রান্ত মনে শুধু একটা কথাই বলার আছে, আমাদের সবার বোধোদয় হোক। সমাজ-রাষ্ট্রে-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে ভয়ংকর অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ঘটছে তার অবসান ঘটুক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ