এনবিআরের অনলাইন সভায় হাস্যকর কাণ্ড কেন?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এনবিআর-এর কাজ হলো সরকারের জন্য কর ও শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে নীতি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করা। এর মধ্যে কাস্টমস, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং আয়করের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়াও, চোরাচালান প্রতিরোধ, আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদন এবং সরকারের রাজস্ব নীতি সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করাও এনবিআরের কাজ। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় অনলাইন সভায় যদি হাস্যকর কাণ্ডকারখানা হয় তা নিঃসন্দেহে জাতির জন্য দুঃখজনক।
গতকাল সোমবার (১৬ জুন) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত রোববার আয়োজিত সভায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম জুমে যোগ দেয়া আইডিগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও স্টারলিংকের মালিক ইলন মাস্কের নামে কয়েকজনকে অংশ নিতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি, মায়ের দোয়া স্যানিটারিসহ বিভিন্ন নামে আইডি খুলেও অংশ নিয়েছেন কেউ কেউ। সভা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে।
এ বিষয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলেন, সম্প্রতি এনবিআর বিলুপ্ত করে দুই ভাগে বিভক্ত করে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান কোনো কথা বলেন কিনা তা জানতে ‘ভুয়া’ নামে অংশ নিয়েছেন কেউ কেউ। আবার কর্মকর্তাদের একটা অংশের ধারণা- আন্দোলনকারীরা এনবিআরের চেয়ারম্যানকে অসহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাই অনেকেই অংশ নেননি। সেজন্য সভায় বেশি অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেশি দেখাতে ভুয়া আইডি খোলা হতে পারে বলেও ধারণা কারও কারও। এ সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসের আয়কর খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের চিত্র তুলে ধরা হয়।
এমন একটি ঘটনাকে কোনোভাবেই স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। অংশগ্রহণকারীরা অনেকে একেতো ভুয়া নামে অংশ নিয়েছেন, ভুয়া নামে তারা ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইলন মাস্কের মতো ব্যক্তিত্বদের নাম ব্যবহার করেছেন- যা স্পষ্টতই চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন। সরকারি এমন এক উচ্চপর্যায়ের সভায় ব্যক্তিগত ট্যাব, ইউটিউব ভিডিও কিংবা গৃহস্থালি ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন কেন দেখা যাবে? এটা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সভার প্রতি চরম অবহেলা। যে সভা থেকে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ হয়, সেখানে যদি এমন কাণ্ড হয় তাহলে জনগণ কার ওপর ভরসা রাখবে?
এনবিআরের এই সভা আমাদের আরও একটি বিষয় মনে করিয়ে দেয়- ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে কেবল ইন্টারনেট সংযোগ নয়; এর জন্য ডিজিটাল সচেতনতা, দায়বদ্ধতা এবং পেশাদারিত্বও জরুরি। অনলাইন সভার নামে যারা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজে ছেলেখেলা করেছেন তারা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আমরা চাই, এই ঘটনাটি নিয়ে যথাযথ তদন্ত হোক এবং ভবিষ্যতে এমন সভাগুলো যেন ‘হাস্যকর কাণ্ডে’ পরিণত না হয় তার জন্য প্রশাসন থেকে সচেতনতামূলক বার্তা জারি করা হোক। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সম্মান রক্ষা করতে হলে অনলাইন সভাগুলোকে আরও পেশাদারিত্বে পরিণত করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে