Views Bangladesh Logo

আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য কেন গাড়ি কিনবে বর্তমান সরকার?

গামী বছরের (২০২৬ সাল) ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে সরকার আসবে, সেই সরকারের মন্ত্রীরা কী গাড়ি ব্যবহার করবেন তা আগেভাগে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্ন্তবর্তী সরকার। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবর পড়ে বিস্মিত হয়েছে দেশবাসি। প্রকাশিত খবরটি থেকে জানা গেছে, আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের ৬০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একেকটি গাড়ি কিনতে খরচ হবে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের জন্য ১৯১টি পাজেরোসহ ২২০টি গাড়ি কেনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কিনতে সরকারের মোট ব্যায় হবে ৪৪৫ কোটি টাকা।

খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে সমালোচনা। পাশাপাশি এসব গাড়ি এখন কেন কেনা হচ্ছে সেই প্রশ্নও উঠছে। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পরবর্তী সরকার বা মন্ত্রীরা কী গাড়ি ব্যবহার করবেন, কী গাড়ি কিনবেন; তার সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকার কেন নিচ্ছে? এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এর মাধ্যমে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপের পরিপত্র উপেক্ষা করা তো বটেই, একই সঙ্গে প্রশ্ন আসবে, পরবর্তী সরকারের জন্য গাড়ি কেনার দায়িত্বটা অন্তর্বর্তী সরকারকে কে দিয়েছে? অনতিবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।’

গাড়ি কেনা বিষয়ক প্রস্তাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা সমপদমর্যাদার ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য সরকারি পরিবহন পুলে যথাযথ মানের গাড়ি নেই। বর্তমানে উপদেষ্টারা যেসব গাড়ি ব্যবহার করছেন, সেগুলো ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেনা। এগুলো প্রায়শ মেরামত করতে হয়, যা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। বিদ্যমান গাড়িগুলো দিয়ে ভবিষ্যতে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের পক্ষে নির্বাচনী এলাকা সফর, উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনসহ অন্যান্য জরুরি কাজ করা কষ্টসাধ্য হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাবে সম্প্রতি সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

অন্যদিকে দেশে দারিদ্র হার বেড়ে এখন ২৮ শতাংশ। পিপিআরসির গবেষণায় জানা যায় তিন দশক ধরে দারিদ্র কমছিল। তিন বছর ধরে তা বাড়ছে। যে দেশে দারিদ্র বাড়ছে সে দেশে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এমন ব্যয়বহুল বিলাসিতা কতটা যৌক্তিক? গাড়ি হয়তো দরকার, কিন্তু আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য বর্তমান সরকার কেন গাড়ি কিনবে? আগামী সরকারের মন্ত্রীরা যদি এসব গাড়ি পছন্দ না করেন তখন কী হবে? তখন কি তারা নতুন গাড়ি কিনবেন? তখন এসব গাড়ির কী হবে?

যদিও বলা হয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, আসলেই যথাসময়ে নির্বাচন হবে কি তা নিয়েও রয়েছে অনেকর সংশয়। এই পরিস্থিতিতে আগামী মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তটি খুবই অযৌক্তিক মনে হচ্ছে। আমরা তাই সরকারকে বলতে চাই, সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য। আগামী সরকারের মন্ত্রীদের গাড়ি কেনা ছাড়াও দেশে অনেক সমস্যা আছে। বর্তমান সরকারের উচিত সেসব সমস্যার দিকে আরো বেশি মন দেয়া।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ