Views Bangladesh Logo

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন

প্রজাতন্ত্রের একশ্রেণির কর্মকর্তা বিপুল অর্থের মালিক হচ্ছে কেন?

M A  Khaleque

এম এ খালেক

প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং গতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ নতুন কিছু বিধি সংযোজন করা হবে। প্রথমেই উল্লেখ করা প্রয়োজন, পাবলিক সার্ভেন্ট বা গণকর্মচারীদের সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে আখ্যায়িত করার মধ্যেই বিভ্রান্তি রয়েছে। একটি গঠিত হওয়ার জন্য চারটি আবশ্যিক উপকরণের উপস্থিতি প্রয়োজন হয়। এগুলো হচ্ছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসংখ্যা এবং সরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল এবং একমাত্র পরিবর্তনশীল উপকরণ হচ্ছে সরকার। অবশিষ্ট উপকরণগুলো পরিবর্তিত হয় না।

জনগণ হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক। আর সরকার জনগণের পক্ষ থেকে ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তত সরকারের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হয় ভোটের মাধ্যমে। তাই সরকারকে সব সময়ই জনগণের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। রাষ্ট্র কখনোই সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে না। আমরা যাকে সরকারি সম্পত্তি বলে আখ্যায়িত করে থাকি তা আসলে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি, যার একচ্ছত্র মালিক হচ্ছেন রাষ্ট্রের জনগণ। রাষ্ট্র এবং সরকারকে এক করে দেখার ফলে নানা ধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আমরা যদি রাষ্ট্র এবং সরকারের অস্তিত্বকে আলাদা করে মূল্যায়ন করতে পারি তাহলে অনেক সমস্যা এমনিতে দূরীভূত হয়ে যাবে।

অন্তর্বর্তীকালীন ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ যেসব নতুন ধারা সংযোজন করতে যাচ্ছে তার অধিকাংশই ১৯৭৯ সালে প্রণীত সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এমন একটি শর্তারোপ করা হচ্ছে যাতে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী দাবি আদায়ের নামে রাজপথে আন্দোলন-মিছিল করতে পারবে না। কর্মবিরতি এবং অবস্থান ধর্মঘটকেও নিষিদ্ধ করা হবে। সচিবালয়ের ভিতরেও কোনো ধরনের আন্দোলন-মিছিল করা যাবে না। কাউকে কর্মস্থলে যোগদান থেকে বিরত থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যাবে না। উল্লেখিত শর্তাবলির কোনোটি ভঙ্গ করা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কারণে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমনকি অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই ৮ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যাবে।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ২ থেকে ৫ দিনের নোটিশ দেয়া হবে আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য। তাদের জবাব সন্তুষজনক না হলে তিন দিনের নোটিশে তাদের চাকরিচ্যুত করা যাবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সচিবালয়ে একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারকে বিব্রত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা চালিয়েছে। প্রশাসনের গতি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মন্থর হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ ব্যতীত কোনো উপায় নেই। বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টায় নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে তারা সরকারের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। একই সঙ্গে বিগত সরকার আমলে যারা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং জিয়া পরিষদের নামে দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের শর্তযুক্ত করা যেতে পারে।

যে কোনো সরকার তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমলা বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর নির্ভর করে থাকে। তারা যদি আন্তরিকতা নিয়ে সরকারের কাজে সহায়তা না করেন তাহলে সেই সরকারের পক্ষে উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। আমরা যাদের সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি তারা আসলে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা বা কর্মচারী। সরকারের কোনো নিজস্ব সম্পত্তি নেই। সরকার জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হয়ে রাষ্ট্রের সম্পত্তির পাহারাদার মাত্র। সরকার যদি রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিক হতেন তাহলে সেই সম্পদ সরকার তার ইচ্ছে মতো ব্যবহার বা অন্য দেশে পাচার করতে পারত। এ জন্য কারও নিকট সরকারের জবাবদিহি করতে হতো না। যেহেতু সরকার রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিক নয়, শুধু আমানতদার মাত্র তাই সেই সম্পদের কোনো অপব্যবহার করা হলে সে জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হয়। প্রজাতন্ত্রের একজন সেবক বা কর্মচারীর (ভুলবশত যাদের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়) কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা অভিলাষ থাকতে পারে না। তার মূল কাজ হবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলা। কোনো নির্দেশের ব্যাপারে যদি তার দ্বিমত বা আপত্তি থাকে তাহলে তিনি নোটে তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে পারেন; কিন্তু তারপরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজটি করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন তাহলে নিচের কর্মচারী বা কর্মকর্তা সেই কাজ করতে বাধ্য।

আইনগতভাবে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারী স্বাধীনভাবে তার মতামত উপস্থাপনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত; কিন্তু বাস্তবে এই ক্ষমতা তারা প্রয়োগ করতে পারেন না। দেখা যায়, সর্বনিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কর্মকর্তা নোটে একই ধরনের মন্তব্য প্রদান করে থাকেন। কোনো কর্মকর্তাই সাধারণত দ্বিমত প্রকাশ করে নোটে বক্তব্য প্রদান করেন না। এর কারণ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা যেভাবে নির্দেশ প্রদান করেন নিচের কর্মকর্তারা ঠিক সেভাবেই নোট উপস্থাপন করেন। অধিকাংশ সময়ই নিচের কর্মকর্তাকে নোট লেখার পর তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দিয়ে কারেকশন করিয়ে নিতে হয়। ফলে নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তার দ্বিমত প্রকাশের কোনো সুযোগ থাকে না। নিচের কর্মকর্তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা মানতে বাধ্য থাকেন। কারণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশের বাইরে গেলে তার বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন বা অ্যানুয়াল কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্টে (এসিআর) খারাপ মন্তব্য করা হতে পারে। নিচের পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার স্বাধীনতা বিনষ্টের জন্য বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। বার্ষিক প্রতিবেদন লেখার এই ওয়ান ওয়ে পদ্ধতির পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যেমন নিচের কর্মকর্তার বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন লিখবেন ঠিক তেমনি নিচের কর্মকর্তাকেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাজের মূল্যায়ন করে বার্ষিক প্রতিবেদন লেখার সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। তাহলে উভয় শ্রেণির কর্মকর্তার মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি হতে পারে।

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত যৌক্তিক। তবে এই সংশোধনীতে আরও একটি ধারা সংযোজন করা আবশ্যক তাহলো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে চাকরিরত অবস্থায় কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরে কোনো ফর্মেই দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে না পারেন। ১৯৯১ সালে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতি প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পরিষদের নামে সরকার সমর্থনে দলীয় রাজনীতি চর্চার প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে বিগত সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক শাসনামলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নামে দলীয় রাজনীতি চর্চা হতে দেখা গেছে। যারা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় দলীয় রাজনীতি চর্চা করেন তারা আসলে সুবিধাবাদী এবং অর্থলোভি। যখন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হয় তখন সরকারি দলের সমর্থনে এরা প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরে দলীয় রাজনীতি চর্চা শুরু করেন; কিন্তু দল যখন সরকার থেকে বিদায় নেয় তখন এসব কর্মকর্তার কোনো উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করা যায় না।

যারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় দলীয় রাজনীতি চর্চা করেন তারা কখনোই সংশ্লিষ্ট দলের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারেন না। কারণ সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতার বাইরে থাকে তখন এসব কর্মকর্তা রাজনৈতিক তৎপরতা পরিচালনা করেন না। এদের কোনো অবদানের কারণে একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসীন হয় না; কিন্তু এদের নানা অপকর্মের কারণ একটি রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে পারে। এরা আসলে বসন্তের কোকিল। এরা আগে কৃত অপকর্মের দায়ভার থেকে মুক্তি লাভ অথবা নতুন করে অপকর্মের মাধ্যমে নিজেদের আখেড় গুছিয়ে নেয়ার জন্যই রাজনীতি চর্চা করেন। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত যারা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতি চর্চা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে চাকরিচ্যুত করা যেতে পারে। যারা ইতোমধ্যেই অবসর গ্রহণ করেছেন তাদের পেনশন বেনিফিট স্থগিত করা যেতে পারে। অন্তত যারা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এটা করা হলে ভবিষ্যতে আর কোনো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারী দলীয় রাজনীতি চর্চা করার মতো দুঃসাহস দেখাবে না। বর্তমানে সচিবালয় থেকে শুরু করে প্রতিটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অফিসে কাজকর্মে মন্থরতা নেমে এসেছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আগের সরকার আমলে যেসব দলবাজ কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন এখন তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপন করছেন। তারা শাস্তির ভয়ে আছেন। তারা আগের সরকারকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সরকারের কোনো নিজস্ব ক্ষমতা বা শক্তি নেই। সরকারকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর নির্ভর করেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই আমলা বা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ যদি আন্তরিকতার সঙ্গে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা না করেন তাহলে কোনো সরকারের পক্ষেই সঠিকভাবে দায়িত্ব সম্পাদন করা সম্ভব নয়। আমলারা সহযোগিতা না করলে একটি জনপ্রিয় সরকারও যে ব্যর্থ হতে পারে তার উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত হচ্ছে মধ্যযুগের মহান শাসক মোহাম্মদ বিন তুঘলক। মোহাম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী এবং উদ্ভাবনী শাক্তির অধিকারী একজন শাসক। সিংহাসনে আরোহণের পর তিনি যেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল যুগের চেয়েও অগ্রগামী। সেই সময় তিনি স্বর্ণ মুদ্রার পরিবর্তে কাগজি মুদ্রা চালু করেছিলেন। মোহাম্মদ বিন তুঘলক রাজধানী দিল্লি থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দেবগিরি রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে। ফলে দেশ বাইরের শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলেও রাজধানী নিরাপদ থাকার সম্ভবনা ছিল; কিন্তু রাজধানী স্থানান্তরিত হলে আমলাদের নতুন রাজধানীতে কর্মস্থলে যোগদান করতে হতো। এই ভয়ে তারা রাজধানী দেবগিরিতে স্থানান্তরের উদ্যোগেরে বিরোধিত করতে থাকেন এবং এ ক্ষেত্রে তারা সফল হন।

আগামীতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হোন না কেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কঠিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। সেই অবস্থায় আমলাতন্ত্রের নিঃশর্ত সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। সচিবালয়সহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে যেখানেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসহযোগিতা করবেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে হবে। কোনো আমলা অথবা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা যদি প্রথাগত রাজনীতি করতে চান তাহলে তাকে চাকরি থেকে অবসর নিয়েই তা করতে হবে। এমনকি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর কেউ যদি রাজনীতি করতে চান তাহলে প্রাপ্ত সুবিধাদি সারেন্ডার করেই তাকে তা করতে হবে। চাকরি এবং রাজনীতি এক সঙ্গে চলতে পারে না।

একজন মানুষকে তার কর্মজীবন শুরু করার আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় তিনি কোন পেশায় যাবেন। চাকরি জীবনে কেউ যদি সততার সঙ্গে কাজ করেন তাহলে তার পক্ষে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বর্তমানে আমরা প্রত্যক্ষ করছি, প্রজাতন্ত্রের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক বনে যাচ্ছেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো কর্মকর্তা যদি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তাহলে তার পক্ষে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করাই কঠিন, সম্পত্তি অর্জন তো দূরের ব্যাপার। আগে সামাজিকভাবে দুর্নীতিবাজদের অবজ্ঞা করা হতো। এখন দুর্নীতিবাজ বা যে কোনো অপরাধে অপরাধী হোক না কেন টাকা থাকলেই সম্মান পাওয়া যায়। এই সামাজিক মূল্যবোধ পরিবর্তিত হওয়া উচিত।

এম এ খালেক: সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ