Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ও শিক্ষার্থী কেন মুখোমুখি?

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন, কয়েকশ শিক্ষক সেখানে শিক্ষকতা করেন, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে অনৈক্য হতেই পারে, তা আলোচনার মাধ্যমে সুন্দরভাবে সমাধানও করা যেতে পারে; কিন্তু তা না হয়ে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের অবরোধ, শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখা, এবং আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলা, সেই হামলার সময় ডিসি-এসপিদের উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়া- তার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতার সংশ্লিষ্টতা- সব মিলিয়ে একটা সামান্য বিষয় নিয়ে এই যে যুদ্ধ বিরাজ করছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা শুধু দুঃখজনক না, অত্যন্ত হতাশাজনক এবং দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্যই হুমকিস্বরূপ।

ঘটনা বিশ্লেষণে যা জানা যায় তা হলো- কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে গত ২৫ জুলাই থেকে নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, সমন্বিত ডিগ্রি চালুর বিষয়ে গঠিত আট সদস্যের কমিটি শিক্ষার্থীদের ভোট নেয়, যেখানে বিপুল ব্যবধানে এই প্রস্তাবের পক্ষে রায় আসে; কিন্তু প্রশাসন এ ব্যাপারে গড়িমসি করে। কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাস্তবায়নে আয়োজিত একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ না হওয়ায় সভায় উপস্থিত উপাচার্যসহ সব শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় উপাচার্যসহ ২২৭ জন শিক্ষক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

সমস্যার সমধানে জেলা প্রশাসক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন; কিন্তু হঠাৎ একদল বহিরাগত এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। সেখানে ছিলেন বিএনপির এক নেতাও; কিন্তু তারা কেনো ব্যবস্থা নেননি। গতকাল মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাঠি ও দেশি অস্ত্র নিয়ে বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। হামলার পর সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ টহল দিলেও সোমবার সকালেই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছাড়েননি, বরং বিক্ষোভ মিছিল করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও বিএনপির এক নেতার উপস্থিতিতেই এ হামলা হয়, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার সময় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রক্টরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, আটকে থাকা শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বেরিয়ে আসার সময় কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা শেখ আমজাদ আলী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক বারবার ফোন করে আমাকে সেখানে নিয়ে যান, আমি সেখানে যেতে চাইনি। আমি সেখানে একা যাই, আমার সঙ্গে কোনো হামলাকারী ছিল না। শিক্ষকেরা আটক ছিলেন। মানবিক দিক বিবেচনায় সেখানে যাই।’

কোথাকার পানি কোথায় গড়িয়েছে এতে সহজেই বোঝা যায়। সহজ বিষয়টি আর সহজ থাকেনি। খুবই জটিলতায় মোড় নিয়েছে। আন্দোলনরত বিভিন্ন শিক্ষার্থী সংবাদমাধ্যমকে জানান, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে প্রশাসন বহিরাগত কিছু লোক ভাড়া করে হামলা চালায়, এটি খুব লজ্জাজনক। প্রশাসনকে এই ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। হামলা করেছে মূলত স্যারদের মদদে। যারা আশপাশের এলাকাতেই ছিল। উপস্থিত জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ছাত্রদের রক্ষায় কোনো ভূমিকা পালন না করলেও আন্দোলন শেষে যখন আমার হলে ফিরে যাই, তখন র্যাব ও পুলিশের টহল গাড়ি দিয়ে ভয় দেখানো ও হল ছাড়ার আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

এই বহিরাগত আক্রমণকারী কারা তাদের পরিচয় অবশ্যই বের করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে তারা কেন এমন সংঘর্ষের দিকে নিয়ে গেলেন। এবং ডিসি-এসপির উপস্থিতিতে কেন এভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করা হলো তার উত্তরও ডিসি-এসপিকে দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেটাকে বলছেন ভয়ংকর হামলা, প্রশাসন সেটাকে সামান্য ধাক্কাধাক্কি বলে উড়িয়ে দিতে চায়। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন এরকম হবে? সবাই কি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন? এই ব্যাপারে সরকারের অবশ্যই যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। একটা সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে এমন সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কী করে এই প্রশ্ন আমাদের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে থাকল।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ